স্বাধীনোত্তর সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সম্পর্কে আলোচনা কর ।

অথবা, পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সম্পর্কে আলোচনা হয়।
অথবা, পাকিস্তান শাসনামালে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আগ্রাস সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা
: রাজনীতিক বিষয়ে মূল্যবোধ বা মাত্রাবোধের প্রতীক হিসেবে রাজনীতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার সদস্যদের এক ধরনের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গের এসব আবেগ অনুভূতির সমন্বয়ই রাজনৈতিক সম হিসেবে পরিচিত । রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ব্যক্তি মানুষের এসব মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, অনুভূতি ও প্রবণতার এক সমন্বিত রূপায় বলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কোনো দেশের মূল রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রতীক হলো এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতির আগ্রাসন : অবিভক্ত ভারত বিভাজন ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অভূতপূর্ব ভৌগোলিক অসংলগ্নতা নিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের প্রারম্ভ থেকেই বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়। পাকিস্তানের প্রাথমিক জীবনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এক সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উভয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কৃষ্টি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পশ্চিম পাকিস্তানে সাথে পূর্ব বাংলার নাধারণের । সংঘাত বাঁধে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তথা ভাষা ও সংস্কৃতিকে হয় করে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের উপর সকলক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চালায়। পাকিস্তানে কার নিজস্ব সংস্কৃতিকে জবরদস্তিমূলকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য পদ্ধতি অবলম্বন করে। এ সাংস্কৃতি
বিকেন্দ্রীকরণকে জবরদস্তিমূলক বিকেন্দ্রীকরণ বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলা যায়। যার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক জনগোষ্ঠী এক সময়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতির নেপথ্যে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের আধিপত্য ছিল প্রচণ্ড। পর্ণ পাকিস্তানি উর্দুভাষী জাতীয় রাজনৈতিক এলিট শ্রেণী নিজস্ব রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রবর্তনের মাধ্যমে এক বিটা শুরু প্রক্রিয়ায় রাজনীতি পরিচালনা করেন। এ প্রক্রিয়া ছিল আগ্রাসন ও নিষ্পেষণ বাণিজ্যভিত্তিক। অর্থনৈতিক হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর সামাজিক স্তর বিন্যাস ছিল উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রেণীতে বিন্যস্ত পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল প্রাচীন কৃষিভিত্তিক। অপরদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল শিল্প এ বৈষম্যহেতু উভয় পাকিস্তানের জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা, দৃষ্টিভঙ্গি, সবই ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ভাষার প্রশ্নে সংঘাত সৃষ্টির পর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও কেউ কিছু আইনসভায় প্রতিনিধি প্রেরণের ক্ষেত্রেও সংঘাত সৃষ্টি হয়। সামরিক শক্তি ও আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলে শাসন পরিচালনা
ক্ষমতা টিকে রাখাই ছিল পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈছিল। নেতৃবৃন্দ প্রকৃত অর্থে গণপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি চর্চা করতেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ছিল সাংবিধানিকতা। অপরদিকে, পশ্চিম সামন্তবাদী রাজনৈলি কেন্দ্রীয় সরকারকে অধিকতর শক্তিশালী করা হয়। বস্তুত পাকিস্তানের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলমান শাসকচক্রের চরম স্বৈরাতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দেয় এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি সমূলে ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সকল কার্যক্রম পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতি
সংস্কৃতির মূলে আঘাত হানে। সংস্কৃতি আগ্রাসন বা ঔপনিবেশিকবাদ এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলার সমগ্র স্বতন্ত্র সপ্তাবে করে দিয়ে নব্য ঔপনিবেশিকবাদের সৃষ্টি করে পাকিস্তান এক বিস্তৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়। পাকিস্তান ছিলে দেশ ও দুটি পৃথক রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঔপনিবেশিক সুলভ, সাংস্কৃতিক ও একত্রীকরণের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ আগ্রাসনও নিয়ন্ত্রণের ফলে উভয় পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক আধিপত্যের নীতি অনুসরণ করে সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক ধারক । শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, সংস্কৃতি বা কৃষ্টি হলো কোনো জাতির জাতীয় মূল বৈশিষ্ট্য, যা অন্য জাতির থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি সৃষ্টির পিছনে জাতি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহ্যগত বিশ্বাস ও ভাবগত, ধর্মগত, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক বিষয়সমূহের অবদান অসীম।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*