আধুনিক সরকারের সমস্যাবলি পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিক সরকারের সমস্যাবলি পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, আধুনিক সরকারের সমস্যাবলি পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিক সরকারের সমস্যাবলি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, কেন আধুনিক সরকারের সমস্যাবলি পাঠ গুরুত্বপূর্ণ? আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক উপাদান হলো সরকার। ছোট বড় প্রত্যেক রাষ্ট্রেই সরকার বিদ্যমান। এবং সমাজবিজ্ঞানী আর.এম. ম্যাকাইভার বলেছেন, “সকল সংগঠনের ভিতরে সরকার সর্ববৃহৎ। যে কোনো রকমের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোক না কেন সরকারের কার্যাবলি তাদের তুলনায় অনেক বেশি।” তাছাড়া, বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে মানুষের বিনযাত্রার মান অনেক উন্নত। সে কারণে মানুষের জীবনে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সরকারের উপর নতুন নতুন কার্যের দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। তার সাথে সাথে সন্ত্রাস, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, অন্যায়, অত্যাচার ইত্যাদির মাত্রা বেড়েই চলেছে। তাই এ অবস্থায় সরকারকে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়।
সরকারের সমস্যাবলি পাঠের গুরুত্ব : আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত জনসাধারণের কল্যাণ করে থাকে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে আমরা ঐ রাষ্ট্রকে বুঝি, যে রাষ্ট্রের সরকার ব্যক্তি ও জনসাধারণের কল্যাণ কামনায় প্রয়োজনীয় কার্যাবলি সম্পাদন করে। এ ধরনের সরকারকে অনেক সমস্যার সমাধান করতে । রাষ্ট্র হতে শুরু করে ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্থে সুষ্ঠু বণ্টন জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। নিম্নে সরকারের সমস্যা পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা : রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সরকারকেই সম্পাদন করতে হয়। তাই অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা সরকারের স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করে।
২. সরকারের সমস্যা জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করে : আধুনিককালে সরকারের সমস্যা বহুবিদ ও বিভিন্ন প্রকারের ছিল। জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের কল্যাণে এসব সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন। কাজেই সরকারের সমস্যাদি এক চারুরূপে সমাধান করা নাগরিকের জন্য একান্ত কর্তব্য।
সরকার যেন স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী না হয় এজন্য একটি শক্তিশালী বনা বিরোধী দলের জন্ম নেওয়া দরকার।
৩. সরকারি কার্যাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করা :

ভোগ করতে থাকবে। জনগণের দাবিদাওয়ার প্রতি কর্ণপাত করবে না। তাই সরকারের সমস্যাবলি জানা প্রয়োজন।
৪. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব : আধুনিক যুগ আন্তর্জাতিকবাদের যুগ। কোনো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রত্যেকটি ও জাতিই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তাগিদের কারণেই বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে আন্তর্জাতিক বিসম্পর্ক স্থাপন করতে হয়।
৫. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে তিনটি বিভাগে বণ্টন করা হয়েছে। যেমন- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ তিনটি বিভাগের কার্যাবলি পৃথক কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে পৃথক নয়। এক বিভাগ অন্য প্রামনবিভাগের সাথে জড়িত। তিনটি বিভাগের কাজ স্বতন্ত্র নয় বলে এটি সরকারের আরেকটি সমস্যা।
৬. সরকারের সমস্যা সম্পর্কে বাস্তবধর্মী জ্ঞান আহরণের জন্য: সরকার কিভাবে জ্ঞান আহরণ করে কাজ করে তার বস্তব তথ্য জানা সকলের দরকার। এ তথ্যগত জ্ঞান হতে লাভবান হতে হলে সরকারের কার্য ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা রয়েছে, নিয়মতান্ত্রিক সরকার সম্পর্কে কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার ।
৭. সন্ত্রাসের সমস্যা : আধুনিকীকরণের ফলে সমাজে মানুষের জীবনযাত্রার মান দিন দিন সমস্যাবহুল হচ্ছে। মানুষ তার নিজের প্রয়োজন মেটাতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছে না। ফলে সমাজে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। সরকারের এ সমস্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা সমাধান খুঁজে বের করতে পারি।
৮. রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সমস্যা : রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ করা সরকারের দায়িত্ব । ফলে এটি অন্যতম সমস্যারূপে পরিগণিত হয়।তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রগুলোতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে সরকার নানা সমস্যায় পড়ে।
৯. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : অর্থনীতি ও রাজনীতি নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। সরকারের সার্বিক কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।অর্থনৈতিক উন্নয়ন সরকারের চরম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যার্জন করার জন্য সরকারকে নানা পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হয়। করতে হয়। যেমন— খাদ্য, উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকারত্ব দূরীকরণ, ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হয়। সুতরাং, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বিষয়ক পাঠ একান্ত অপরিহার্য।
১০. আমলাদের প্রাধান্য : আধুনিক বিশ্বের যে কোনো দেশ পরিচালনার জন্য আমলাদের ভূমিকা পরিলক্ষিত হই রাষ্ট্র পরিচালনায় সিভিল সার্ভিসের ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের নিয়োগ করে। মন্ত্রিবৃন্দ শাসনব্যবস্থার কতিপয় সাধারণ নিয়মপদ্ধতি ও শাসনের মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে ।
১১. রাজনৈতিক অগ্রগতি : আধুনিক যুগ উন্নয়নের যুগ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন রাষ্ট্রনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশা তেমনি রাজনৈতিক উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা একটি দেশকে সংকটের দিকে। দেয় এবং অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাজনীতিতে এর তাৎপর্য বহন করে।
১২. প্রচলিত ধ্যানধারণার পরিবর্তন : যান্ত্রিক পরিবর্তন এবং প্রচলিত চিন্তাধারার পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগ সাধনের নামই হলো সামাজিক পরিবর্তন। আর সরকার হলো এ সংযোগ সাধনের প্রধান নিয়ন্ত্রক।সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এবং পরিবর্তন পদ্ধতি বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব, বিরোধ ইত্যাদি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। আর এম দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হলে সরকারকে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
১৩. সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান : আধুনিক যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাগ পরিবর্তনের ধারা। যুদ্ধ, মহামারী, অর্থনৈতিক সংকট, ক্ষুধা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদির ফলে আধুনিক সরকারকে নান সমস্যায় পড়তে হয়। এগুলোর সফল সমাধানের উপর নির্ভর করছে জনগণের বর্তমান ভালো-মন্দ, ও আশা-আকাঙ্ক্ষ তাই সরকারের সমস্যা বিষয়ে অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্রকে অনেক সমস্যার সমাধান করতে হয়। সরকারকে রাষ্ট্র হতে শুরু করে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বায়
সংরক্ষণের ব্যবস্থা, সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি, আয়ের সুষ্ঠু বণ্টন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজি রাজনৈতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, বর্তমান কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে জনগণ তাদের অনে সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকে। তাই তারা সরকার কিভাবে দায়িত্বশীল হবে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে। সুতরাং, এম ক্ষেত্রে সরকারের সমস্যাবলি আলোচনা করা একান্ত অপরিহার্য।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*