বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

অথবা, বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতাসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার সমস্যাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা বা সমস্যা লক্ষ্য
করা যায় তা আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
সামাজিক সমস্যাসমূহ অত্যন্ত জটিল এবং কোনো সমাজ যদি প্রকৃতই উন্নতি লাভ করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই সমস্যাসমূহকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু এই সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের প্রয়াস খুব সহজ সাধ্য বিষয় নয়। বিশেষকরে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে নানাবিধ সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা : নিম্নে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
প্রথমত, বাংলাদেশে সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো তথ্যসংগ্রহ করা । গবেষক যাদের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করেন তাদের অনেকেই সঠিক তথ্য প্রদানে উৎসাহবোধ করেন না। বিশেষকরে বিরাট গ্রামীণ জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় না থাকায় তথ্য প্রদান করতে অনীহা প্রকাশ করে । ফলে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই অদৃষ্টবাদী, তারা ভাগ্যে বিশ্বাস করে। ফলে যে কোনো দুর্যোগ বা বিপদ আপদে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখেন। এ রকম সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সঠিকভাবে গবেষণা কাজ পরিচালনা করা সম্ভবপর হয় না।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার আর একটি সমস্যা হলো এখানে গবেষকের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, চিন্তা- চেতনা, ধ্যানধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, অভ্যাস ইত্যাদির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ এখানে গবেষকগণ অনেক সময় পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে পড়েন। ফলে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয় না।
চতুর্থত, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে । ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে আমাদের দেশের অনেক মহিলাই তথ্যানুসন্ধানকারী বা পুরুষ লোকের নিকট তথ্য প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে তাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়নি।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লোক বাস করে বিধায় তাদের অভ্যাস, সামাজিক অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদির মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে সমজাতীয় উপাত্ত সংগ্রহে অসুবিধার সৃষ্টি হয় ।
ষষ্ঠত, বাংলাদেশে সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে আর একটি সমস্যা হলো ভালো বা দক্ষ অনুসন্ধানকারীর অভাব। এদেশে মানসম্পন্ন এবং দক্ষ অনুসন্ধানকারীর কারণে সঠিক ও নির্ভুল তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়নি ।
সপ্তমত, বাংলাদেশে অনেক তথ্যসংগ্রহকারী কিছু পাবার প্রত্যাশায় অতিরঞ্জিত করে তথ্য প্রদান করে। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভবপর হয়নি। যেমন- এদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে জনগণের ক্ষয়ক্ষতির উপর তথ্যসংগ্রহ করা হয়। তখন অনেকে সাহায্য পাবার আশায় নিজেদের সুবিধামতো তথ্য প্রদান করে ।
অষ্টমত, বাংলাদেশ দারিদ্র্য পীড়িত দেশ। এদেশের অনেক জনগোষ্ঠী ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলানোর চেষ্টা করে । অর্থাৎ যেসব বিষয়ে কোনো স্বার্থ থাকে না সেসব বিষয়ে তারা আগ্রহ দেখায় না। ফলে তথ্যসংগ্রহকারীর কাছ থেকে কোনো সাহায্য না পেলে তারা তথ্য প্রদানে তেমন সময় নষ্ট করতে চায় না ।
নবমত, বাংলাদেশে বয়স্কদেরকে বেশি সম্মানের চোখে দেখা হয়। ফলে বয়স্কদেরকে বাদ দিয়ে অনেক সময় অন্যদের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভবপর হয় না। তাছাড়া গ্রামীণ অনেক এলাকায় বয়স্কদের সামনে অন্যরা কোনো তথ্য প্রদানে সচেষ্ট হয় না। কেননা তাতে বয়স্কদের সম্মানহানি হতে পারে। ফলে তথ্যসংগ্রহকারী বয়সজনিত সম্মান প্রদর্শনের কারণে সঠিক ও নির্ভুল উপাত্ত সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন যা বাংলাদেশের সামাজিক গবেষণার একটি অন্যত সমস্যা হিসেবে মনে করা হয় ।
দশমত, বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটুকু সুদৃঢ় নয়। ফলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা তথ্যসংগ্রহ করা হলে অনেকে তা সহজভাবে গ্রহণ করে না এবং তথ্য প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে । তাছাড়া সঠিক তথ্য প্রদান করলে কর আরোপ বা অন্য কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন এই আশঙ্কায় সঠিক তথ্যও প্রদান করেন না ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামাজিক গবেষণার সুস্পষ্ট পদচারণা শুরু লেও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও সমস্যার কারণে গবেষণা কর্মের ধারা ও সামর্থ্য তেমন সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং গণসচেতনার মাধ্যমে এ সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রয়াস অপরিহার্য । উল্লিখিত সীমাবদ্ধতার পরিসর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশে সামাজিক গবেষণার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা উন্নত বিশ্বেও সমাদৃত হবে এবং দেশ হবে কল্যাণমুখী ও উন্নত ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*