বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী কী ভূমিকা পালন করে থাকে? আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকার বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা দেশের জনগণের প্রায় অর্ধেক। পুরুষশাসিত সমাজ বিধায় নারীরা এদেশে জেন্ডার বৈষম্যের শিকার হয়। তবুও এদেশের রাজনীতিতে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী বিভিন্নভাবে তার ভূমিকা পালন করে। নিম্নে রাজনীতিতে তার ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে নারীর ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান গ্রহণ করা হয়। এতে নারী পুরুষ সমানাধিকার লাভ করে। এবং ১৮ বছর নারী পুরুষের মতো ভোটাধিকার লাভ করে। সে ১৯৭৩ – ২০১৪ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তনে অংশ নেয়। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও নারীরা তাদের ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে
নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের অবস্থান শক্ত করেছে।
২. রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সদস্য হিসেবে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা বাড়ছে। এটা লক্ষ্য করা যায় দলের সদস্য ও কর্মী হিসেবে ভূমিকা পালনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বড় বড় দলগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক। আবার, প্রত্যেক দলের সহযোগী নারী সংগঠনও আছে। মূল দল কোনো ইস্যু নিয়ে আন্দোলন, মিছিল বা কোনো কর্মসূচি দিলে সহযোগী দল বা সংগঠন তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে।
৩. রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় শাসন করেছে সেনাবাহিনী। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের শীর্ষে এসেছে দু’জন নারী, একজন হলেন আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা এবং আরেকজন হলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
৪. জাতীয় সংসদে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে সদস্য সংখ্যা ৩০০ এবং সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০। সাধারণ আসনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। এবং নারী আসন সাধারণ আসনে নির্বাচিত সাংসদ নির্বাচিত করেন। ফলে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে সবচেয়ে বেশি নারী সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সংসদের বিভিন্ন কার্যে ভূমিকা রেখেছেন।
৫. ক্যাবিনেট বা সরকারে নারীর ভূমিকা : ১৯৭২ – ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার মোট নারী মন্ত্রীর সংখ্যা ৩০ জন। কিন্তু ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় কোনো নারী মন্ত্রী ছিল না। বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করছেন। ফলে ক্যাবিনেট বা সরকারে নারীর ভূমিকা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী : বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি পুরুষের এলাকা বলে চিহ্নিত। তবে কয়েক দশক ধরে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে শহরের নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করে। ফলে ১৯৯১-২০১৫ পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দু জন নারীর আবির্ভাব হয়েছে এবং দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছে।
৭. জাতীয় নেতৃত্ব প্রদানে নারীর ভূমিকা : ১৯৭২ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষ পদে কোনো নারী আরোহণ করতে পারেনি। ১৯৯১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত দু’জন নারী বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তারা পালাক্রমে জাতীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা দেশের রাজনৈতিক ও উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করছেন।
৮. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে নারী : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। যেমন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ড. দিপুমনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তার পূর্বে কোনো নারী পররাষ্ট্র দপ্তরের মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পাননি।
৯. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে নারীদের অবস্থান উন্নত হয়েছে। বেসামরিক প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পদ হলো সচিব পদ। তবে এই পদে নারীর সংখ্যা খুবই কম। তবে নিম্নপদে তাদের অবস্থান মোটামুটি। শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে একদিন প্রশাসনিক পদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে এবং নারী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
১০. বিচার বিভাগে নারী : বাংলাদেশের বিচার বিভাগেও নারীর অবস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্ন আদালতে অনেক নারী বিচারক আছেন। এখন জেলা জজ পদ, সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগেও নারী বিচারপতি আছেন এবং এসকল পদের দায়িত্বগুলো তারা সাফল্যের সাথে পালন করছেন। কিন্তু এখনো প্রধান বিচারপতি পদে কোনো নারী নিয়োগ পাননি।
১১. স্থানীয় সরকারে নারীর ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইউনিটের সর্ব নিম্নস্তর হলো ইউনিয়ন পরিষদ।.ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৩ টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিজ এলাকা উন্নয়নে নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১২. পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে নারীর ভূমিকা : আগে বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে কোনো নারীকে নেয়া হতো না। শেখ হাসিনার সরকার নারীকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে নেয়ার বিধান করেন। এটা শুরু হয় ১৯৯৭ সাল থেকে। ফলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিম্ন পদ হতে উচ্চ পদে অনেক নারী কর্মরত আছেন এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অবস্থান এখন অনেক ভালো। ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এখন এদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*