নেতৃত্ব ও নারী নেতৃত্ব কী? নারী নেতৃত্ব হিসেবে খালেদা জিয়ার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড আলোচনা কর ।

অথবা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবদান আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিচয় দাও। রাজনীতিতে তার কর্মকাণ্ডসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা কর।
অথবা, খালেদা জিয়া কে? রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার কর্মকাণ্ডসমূহ সবিস্তারে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
নেতৃত্ব হলো যেকোনো জাতির পথপ্রদর্শক। নেতৃত্ব ছাড়া কোনো জাতিই সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। যোগ্য নেতৃত্ব যেমন একটি জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, ঠিক তেমনি ত্রুটিপূর্ণ নেতৃত্ব একটি জাতিকে নিয়ে যেতে পারে ধ্বংসের অতল গহ্বরে। যেমন— মালয়েশিয়ার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, সেখানকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ তাঁর দীর্ঘ বাইশ বছরের শাসনামলে তিনি বিপর্যস্ত মালয়েশিয়াকে বিশ্বের বুকে অন্যতম ধনী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। একই কথা চীনের মাও সেতুং এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের পরিচিতি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার পেছনেও রয়েছে এর নেতৃত্বের গুণাবলি । তবে নেতৃত্ব বলতে যে কেবল পুরুষের নেতৃত্বই বুঝায় তা কিন্তু নয়। যুগ যুগ ধরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নারী নেতৃত্ব হিসেবে খালেদা জিয়া : ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে
প্রাথমিক সদস্য হওয়ার মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের বিধবা পত্নী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি দল ক্ষমতায় আসে। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর বেগম খালেদা জিয়া তাঁর শাসনামলে যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পন্ন করেন তা নিম্নরূপ :
১. সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা : ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর পর থেকে যে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হয় তা জেনারেল জিয়া ও এইচ. এম. এরশাদের আমলেও অব্যাহত ছিল। ১৯৯১সালের ৬ আগস্ট সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার পর বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা
=পুনঃপ্রবর্তিত হয়। ১৯৭৫-৯০ পর্যন্ত এদেশে যে সামরিক কর্মকাণ্ড চলে তাতে করে দেশে গণতন্ত্রের মুক্ত চর্চার সব পথ ‘৯১ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংশোধনী পাশের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পরিগ্রহ করে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে এটি ছিল একটি রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক রূপ
উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
২. বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন : ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। হয়। জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরশাসনের ফলে দেশে বাস্তবিকপক্ষে একদলীয় শাসনব্যবস্থাই কায়েম ছিল। ‘৯১ সালে জনগণের ভোটে রায় পেয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাণী প্রচার করে।
৩. নতুন পররাষ্ট্রনীতি বা পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি : বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সরকার গঠনের পর পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে
তিনটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করেন । যথা :
ক. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা;
খ. শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রগতি অর্জনের লক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং
গ. দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।
এছাড়া তাঁর শাসনামলে তিনি অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারকরণ ও ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা থাকলেও তাঁর শাসনামলেই বাংলাদেশ তিন বিঘা করিডোর ফেরত পায়। তাঁর শাসনামলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ‘সাপটা’ (South Asian Preferertial Trade
Arrangement) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৪. অবাধ তথ্য প্রবাহ : খালেদা জিয়ার সরকারই বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালার সাথে বিবিসি ও সিএনএন অনুষ্ঠানমালা প্রচার শুরু করে। পরবর্তীতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়।
৫. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষে খালেদা জিয়ার মাসনামলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে বিচার বিভাগকে অন্য দুই বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
৬. সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ : বিএনপি সর্বস্তরের জবাবদিহিতা কায়েমের স্বার্থে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সরকার পদ্ধতি নির্ধারণের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। নির্বাচনী অঙ্গীকার না থাকা সত্ত্বেও সরকার পদ্ধতি নির্ধারণে উদাহরণ প্রদর্শনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়া সরকার যাত্রা শুরু করে।
৭. জীবনযাত্রার মান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : দেশের অবহেলিত জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে খালেদা জিয়ার সরকার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ সময় দেশের তিনটি বড় নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং যমুনা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ অনেকাংশে সম্পন্ন হয়। যমুনাnসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ছিল বিএনপি সরকারের একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
৮. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : অতীতের সরকারগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ‘৭৫ এর আওতায় সংবাদপত্রের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সংশ্লিষ্ট ধারা বিলুপ্ত করে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেন। ফলে সংবাদপত্রগুলো ভোগ করে অবাধ স্বাধীনতা এবংnএরপর থেকে প্রচুর পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।
৯. শিল্পায়ন : বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে উদার শিল্পনীতি গ্রহণ করা হয়। অর্থনীতিকে আরো উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষে যেসব শিল্প কারখানা সরকারি মালিকানায় অলাভজনক ছিল সেগুলোকে বেসরকারিকরণের জন্য প্রাইভেটাইজেশনে বোর্ড সঠন করা হয়।
১০. শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা : খালেদা জিয়া সরকারের যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই সম্ভব হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো। চাকমা শরণার্থীদেরকেও প্রতিবেশি দেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
১১. শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ : দেশের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে ‘খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা’ ছিল খালেদা জিয়ার আমলে প্রাথমিক শিক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
১২. প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ : ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
১৩. উপবৃত্তি প্রবর্তন : শিক্ষাক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে, তা হলো ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি প্রবর্তন। বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদেরকে এ উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
১৪. সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি : ২০০৪ সালের ১৬ মে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী গৃহীত হয়। এতে সংসদে মহিলাদের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৩০ থেকে ৪৫টিতে উন্নীত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, খালেদা জিয়া তাঁর শাসনামলে ব্যাপক সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া সরকারগুলোর মধ্যে খালেদা জিয়ার সরকারই পরিচয় দিয়েছে প্রভূত সফলতার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী নেতৃত্বও যেকোনো অংশে পিছিয়ে নেই এটি তারই পরিচয় বহন করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*