রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রকৃতি আলোচনা কর ।

অথবা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কী? বাংলাদেশে রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নারীর প্রকৃতি বর্ণনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কাকে বলে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রকৃতি তুলে ধর।
অথবা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সংজ্ঞা দাও। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রকৃতি কেমন? এ সম্পর্কে বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। যে দল সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে, সে দল সরকার গঠন করে এবং দেশ শাসন করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে নারীর
অংশগ্রহণ পরীক্ষা করলে তার অংশগ্রহণের প্রকৃতি বুঝা যাবে।
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ : রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সকল স্তরে জনগণের অংশগ্রহণকে বুঝায়। এ অংশগ্রহণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকেও বুঝায়। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণকেও বুঝায়। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়।

Professor Almond ও B. Powell এর মতে, “রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার ও সমাজের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তরে সকল সদস্যকে সম্পৃক্ত করা।” ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে।
প্রফেসর ডেভিড ইস্টনের মতে, “রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হলো সে সকল ক্রিয়াকাণ্ড যা সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া Dr. S.P. Huntington এর মতে,” রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে আমরা বুঝি নাগরিকদের সেই সব কার্যাবলি যা সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে।” অতএব, উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো থেকে বলা যায় যে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে বুঝায় সকল মানুষের আচরণকে যার মাধ্যমে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে তাদের রাজনৈতিক মতামতকে প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রকৃতি : নিম্নে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের
প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ইউনিয়ন পরিষদ : ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই জাতীয় রাজনীতির অংশগ্রহণ। তবে ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের অবস্থান প্রান্তিক। এখানে পুরুষ সদস্যদের কর্তৃত্ব বেশি। যদিও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩টি আসন রয়েছে। কেননা সাধারণ আসনে নারীদের বিজয়ী হওয়া খুবই কষ্টকর।
২. পৌরসভা : পৌরসভায়ও নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। তার জন্য এখানে আছে সংরক্ষিত ৩টি আসন। কেননা সাধারণ আসনে বিজয়ী হওয়া তার জন্য দুঃসাধ্য।
৩. সিটি কর্পোরেশন : বাংলাদেশে ১০টি সিটি কপোরেশন আছে। ১০ টির মধ্যে- ১টি চেয়ারম্যান, একজন নারী । সাধারণ আসনে কোনো নারী নেই। সংরক্ষিত আসনে কয়েকজন নারী আছে। এখানে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত
৪. রাজনৈতিক দল : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। দলের নীতি নির্ধারণী উচ্চ পর্যায়ে নারী রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণ নামমাত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্চ পর্যায়ে নীতি নির্ধারণী কাঠামোয় নারীদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ৫.১ শতাংশ।
৫. জাতীয় সংসদ : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ অপ্রতুল। সাধারণ আসনে নারীদের সংখ্যা খুবই কম। সংরক্ষিত আসনে বর্তমানে নারীদের সংখ্যা ৫০। সাধারণ আসনে নারী সাংসদ সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অপেক্ষা বেশি সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে, ক্রমশ নারী প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।
৬. মন্ত্রিসভা বা ক্যাবিনেটে নারী : বাংলাদেশে ১৯৭২ – ৯০ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বা ক্যাবিনেটে নারীদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। ১৯৯১ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী বলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপায় নারীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৭. রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী : বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষগণই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে দু’জন নারী যথাক্রমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার শীর্ষে থাকায় নারীদের মর্যাদা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে, ফলে নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও বাড়ছে।
৮. স্পিকার হিসেবে নারী : ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি একটি সম্মানজনক ও নির্দলীয় পদ। একজন স্পিকার সকলের নিকট শ্রদ্ধার পাত্র।
৯. রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে : ১৯৭২ সাল হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট হতে পারেনি। অথচ তারা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এটা নারীদের নির্লিপ্ততা ও জেন্ডার বৈষম্যের কারণ ।
১০. সংসদীয় নেতা হিসেবে নারী : বাংলাদেশে ১৯৯১ হতে বর্তমান পর্যন্ত দু’জন নারী সংসদ নেতা হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাদের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব এখনো কেউ দিতে পারেনি। এটা নারীদের জন্য গর্বের বিষয়।
১১. সংসদীয় কমিটিতে নারী : বাংলাদেশের সংসদ বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে কাজ করে। এসব কমিটিতে পুরুষের সংখ্যা বেশি। এখানে পালাক্রমে নারীদের যুক্ত করা হয়। তবে এখানে বৈষম্য রয়েছে। কারণ কমিটিতে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারীদের নিযুক্ত করা হয় না। এটা নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। তবে নারীদের সংসদীয় কমিটিতে তেমন
কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয় না।
১২. সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নারী : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন কিছুটা অর্জিত হলেও হয়েছে। কারণ ১৯৯১ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত দুই জন নারী নেত্রী পালাক্রমে সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের কোনো বিকল্প এখন পর্যন্ত কেউ চিন্তা করতে পারে না। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তারা অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালনা করেছেন। কোনো পুরুষ নেতা তাদের মতো ইমেজ এখনো তৈরি করতে পারেনি। এটি সত্যিই নজিরবিহীন ও আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
১৩. নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে : বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে অত্যন্ত স্বল্প সংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দেয়। মনোনয়ন নির্ধারণী কমিটিতে নারীদের সংখ্যা অনেক কম। এর কারণ হলো দলগুলো পিতৃতান্ত্রিক বজায় রাখার জন্য পুরুষকে নারীর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বেশি। তাই আমরা বলতে পারি যে, এক সময় আমাদের দেশে জেন্ডার বৈষম্য থাকবে না এবং নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*