পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর ।

অথবা, পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলির বর্ণনা দাও।
অথবা, পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের পল্লি তথা গ্রামাঞ্চলের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ইউনিয়ন পরিষদ, থানা বা উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। তেমনি শহরাঞ্চলের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পৌরসভা। অতীতের শহর কমিটি পরিবর্তিত করে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এটাও কেন্দ্রীয় সরকারের
প্রতিনিধিত্বস্বরূপ কাজ করে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলশ্রুতি হিসেবে পৌরসভার গুরুত্ব অপরিসীম। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সহায়ক হিসেবে গণতন্ত্রকে জনগণের নিকট অধিক অর্থবহ করে তোলে। এদিক থেকে পৌরসভার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
পৌরসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি : পৌরসভা বহুবিধ কার্যসম্পাদন করে থাকে। পৌর এলাকার জনসাধারণের কল্যাণার্থে এবং সুবিধার্থে একে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যনির্বাহ করতে হয়। নিম্নে পৌরসভার কার্যাবলিসমূহ
১. জনস্বাস্থ্য : পৌরসভা শহরে জনস্বাস্থ্যমূলক কার্যাদি সম্পন্ন করে। সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ, কলেরা ও বসন্তের টিকাদান, ময়লা ও আবর্জনা অপসারণ, প্রসূতিদের জন্য মাতৃসদন স্থাপন, হাসপাতাল কেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
২. নগর পরিকল্পনা : শহর উন্নয়নের জন্য যে, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাই নগর পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী নগর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদির ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়।
৩. শিক্ষাবিস্তার : শহর এলাকায় বয়স্ক ও নিরক্ষরদের শিক্ষাদানের জন্য পৌরসভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে, হোস্টেল চালু রেখে ছাত্রদের বৃত্তিদানের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারের প্রসার ঘটান ।
৪. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : পৌরসভা তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, জাদুঘর স্থাপন, আর্ট গ্যালারি পরিচালনার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহরবাসীদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এছাড়া শিশুমেলা, বিজয় দিবস মেলা এবং অনুরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
৫. বিচার সংক্রান্ত : এটা ক্ষেত্র বিশেষে কিছু বিচার সংক্রান্ত কার্যসম্পাদন করে থাকে। এটা পৌর এলাকার ছোটখাটো বিপদ ও কলহের মীমাংসাকল্পে সালিশি আদালত গঠন করে থাকে। পৌরসভার চেয়ারম্যান এ আদালতের সভাপতি রূপে কাজ করেন।
৬. পানি সরবরাহ : এটা শহরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে থাকে। বড় শহরগুলোতে ‘WASA’ এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ভূতলগামী পয়ঃপ্রণালির ব্যবস্থা পৌরসভার অন্যতম একটি কাজ।
৭. গৃহনির্মাণ : শহরে গৃহনির্মাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌরসভা গৃহের প্ল্যান্ট অনুমোদন করে। আর অনুমোদিত প্ল্যান্টে তৈরিnগৃহ ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। অযোগ্য বা পুরাতন গৃহ, যা বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
৮. পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা : পৌরসভা পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনগণকে এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দান করতে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৯. রাজপথ ও সড়ক : শহরে পরিকল্পনা অনুসারে রাস্তাঘাট তৈরি, রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তা সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এ লক্ষ্যে সরকার বা অন্যান্য সংস্থার সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করে।
১০. জননিরাপত্তা : শহরে জননিরাপত্তার জন্য পৌরসভা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অগ্নি নির্বাপনের জন্য ফায়ার বিগ্রেড স্থাপন করা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ, মাদক ও স্বাস্থ্যহানিকর দ্রব্যের ক্রয়বিক্রয় নিষিদ্ধ, কবরস্থান ও শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণ, দুর্যোগকালীন ত্রাণ সহায়তা দান করে।
১১. খাদ্য সরবরাহ : শহরে বসবাসরত নাগরিকদের জন্য খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজারের খাদ্যদ্রব্য যাতে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ক্রয়-বিক্রয় হয় তা নিশ্চিত করা এ পর্যায়ের অন্যতম কাজ। খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন পৌরসভার নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র খোলার ব্যবস্থা করা।
১২. কর্মসংস্থানের সৃষ্টি : পৌরসভার অন্যতম প্রধান কাজ হলো পৌরসভার আওতাধীনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা সমুন্নত থাকে।
১৩. পার্ক ও উদ্যান : শহরে চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক ও উদ্যান তৈরি করে ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পৌরসভা এ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১৪. সমাজকল্যাণ : পৌরসভা এতিমখানা, কল্যাণকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে জনকল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণ করে। আর ভিক্ষাবৃত্তি, জুয়াখেলা, কিশোর অপরাধ প্রভৃতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে। কোনো কোনো সময় মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থাও গ্রহণ করে।
১৫. অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্য : পৌরসভা বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কার্যসম্পাদন করে থাকে। রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ এবং তা সংরক্ষণ, জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হতে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করা,nবাসস্থানের বন্দোবস্ত করা, কুটির শিল্পের প্রসার এ উন্নতি বিধান করা এবং সমবায় আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলা পড়া সবার অন্যতম দায়িত্ব।
১৬. জীবজন্তু সংরক্ষণ : জীবজন্তুর চিকিৎসার জন্য পৌরসভা পশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে। জীবজন্তু যাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুরে জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখাও এর অন্যতম কাজ।
১৭. বিবিধ কার্য : আলোচিত কার্যাবলি ছাড়াও পৌরসভা বাজার নিয়ন্ত্রণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা, বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন, বৈদ্যুতিক আলো সরবরাহ, খেলার মাঠ নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন-প্রভৃতি কার্যসম্পাদন করে থাকে।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরসভা বহুবিধ কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নগরস্বাস্থ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, শিক্ষা বিস্তার, পানি সরবরাহ, গৃহনির্মাণ, সড়ক সংস্কার, জননিরাপত্তা, সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম প্রভৃতি।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*