পল্লিউন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের অবদান/কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, পল্লিউন্নয়নে পরিষদের অবদান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পল্লিউন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি বর্ণনা কর।
অথবা, পল্লিউন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদ কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে? আলোচন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদই (ইউপি) হচ্ছে একমাত্র নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর পরবর্তী সময়ে এর সংশোধনীগুলো ইউপির আইনগত কাঠামো প্রদান করেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও সার্কুলারের মাধ্যমে তাকে আরও সমন্বিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। যদিও এ মুহূর্তে ইউপি ও পৌরসভা ছাড়া স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তর কার্যকর নেই, কিন্তু প্রস্তাবিত চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রবর্তিত হলে একটা ব্যাপক সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে বলে অনেকেই অনুমান করেন।
পল্লিউন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের অবদান বা কার্যাবলি (Contributions of functions of union parishad to rural development) : গ্রাম এলাকার উন্নতি, অগ্রগতি এবং গ্রামের মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । গ্রামীণ উন্নতি সাধনের জন্য পরিষদের হাতে বহুবিধ ক্ষমতা, বিভিন্নমুখী দায়িত্ব, কর্তব্য ও কার্যাবলি অর্পণ করা হয়েছে। বলা যায়, “The local union parishad is formulating & implementing the local policies which facilitates to achieve rural as well as national development in our society.” (Rural Development in Bangladesh, M. M. Abdullah).
গ্রাম উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের কাজগুলো হলো নিম্নরূপ :
১. কৃষির উন্নতি বিধান : ইউনিয়ন এলাকায় কৃষি উন্নয়নের জন্য বার্ষিক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ইউনিয়ন পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে সমবায় পদ্ধতির প্রচলন করা এর অন্যতম দায়িত্ব। কৃষকদের উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক, ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ করে।
২. শিক্ষার বিস্তার : ইউনিয়নে শিক্ষারপ্রসারের জন্য সাহায্য দান, পাঠাগার ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, বয়স্ক নিরক্ষরদের জন্য পাঠশালা স্থাপন ইত্যাদি কাজ ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে। অর্থাৎ, শিক্ষার উন্নতিকল্পে ইউপি এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
৩. সুস্বাস্থ্য বিধান ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : স্বাস্থ্য এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় সুস্বাস্থ্য বিধান ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরামর্শদান এবং এজন্য সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করে। জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য আবর্জনা পরিষ্কার, সংক্রামক ব্যাধি নিবারণ, টিকা প্রদান ইত্যাদি কাজ করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার
পরিকল্পনা বিষয়ে পরিষদের বহুবিধ দায়িত্ব রয়েছে।
৪. কুটিরশিল্পের উন্নতি : গ্রামীণ কুটিরশিল্পের উন্নতি বিধানে ইউপি কাজ করে। এছাড়া সমবায় আন্দোলনের উন্নয়ন, গ্রামীণ শিল্প, বন, গবাদি পশু ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্রেও ইউপি ভূমিকা রাখে ।
৫. গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : গ্রামীণ রাস্তাঘাট মেরামতসহ রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরি করার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। এছাড়া সাধারণের স্থান ও পথেঘাটে আলোর ব্যবস্থা করা, রাস্তার দু’পাশে বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, সাধারণের রাস্তা, গলি বা জায়গার জবরদখল নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজ ইউপি করে থাকে।
৬. অন্যান্য কাজ : পল্লিউন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য কাজগুলো হলো :
i.জন্ম, মৃত্যুর ও গবাদি পশুর বিক্রয় রেজিস্ট্রীকরণ ও অন্যান্য পরিসংখ্যান রক্ষা।
ii.বিধবা, এতিম, দরিদ্র ও বিপন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য এবং অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, শিলা ঝড়, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্যের ব্যবস্থা।
iii.শশ্মান, গোরস্থান, মিলনকেন্দ্র ও সর্বসাধারণের সম্পত্তি রক্ষা ও পরিচালনা।
iv.ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ।
V.পানি সরবরাহের জন্য কূপ, নলকূপ, দীঘি, পুকুর ইত্যাদির ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ ।
vi. খাসভূমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন এবং ক্ষতিকর ও মারাত্মক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পল্লিউন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অপরিসীম। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে পল্লী উন্নয়নের কার্যকর সংগঠন। ইউনিয়ন পরিষদের কাজকে সহজ ও বাস্তবমুখী করতে সহায়তা দিচ্ছে গ্রাম সরকার। উপজেলা পরিষদ অকার্যকর থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ এখন পল্লিউন্নয়নের মূল প্রতিভূ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*