নারীর অধস্তনতার কারণ হিসেবে পিতৃতন্ত্রের দায়বদ্ধতা আলোচনা কর।

অথবা নারীর অধস্তনতার মূল কারণ পিতৃতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা নারীকে অধস্তন করে রেখেছে। তুমি কী তাই মনে কর?
অথবা, নারী সমাজের অধস্তনতার প্রধান কারণ পিতৃতান্ত্রিকতা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারীর অধস্তনতার কারণ হিসেবে পিতৃতন্ত্রের দায়বদ্ধতার বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সভ্যতার সূচনালগ্নে সমাজে নারীদের প্রাধান্য থাকলেও ধীরে ধীরে লাঙল, চাকা প্রভৃতি আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এগুলো পুরুষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে নারীরা সমাজে পুরুষের অধস্তন হয়ে পড়ে। বর্তমান পৃথিবীর সামান্য কিছু স্থানে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বলভাবে টিকে আছে।
প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নারীদেরকে পুরুষের অধিনস্ত করে রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
নারীর অধস্তনতার কারণ পিতৃতন্ত্র : আমাদের বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ, যার অধিকাংশ মানুষই অত্যন্ত দরিদ্র, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। নিম্নে একজন নারীর সমগ্র জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. জন্মকাল : আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রেই মেয়েরা পুরুষের অধীন। সবসময়েই স্বীকার করে নিচ্ছে পুরুষের প্রাধান্য। একজন পুত্রসন্তানকে যতটা আদরের সাথে পৃথিবীতে গ্রহণ করা হয়, কন্যাসন্তানকে সেভাবে গ্রহণ করা হয় না। অনেক মাকে কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে নির্যাতন বা তালাকের সম্মুখীন হতে হয়।
২. শিশুকাল : কন্যা শিশুদের জীবনীশক্তি ছেলে শিশুদের চেয়ে বেশি থাকে এ ধারণার বশবর্তী হয়ে এবং অনেকটা অবহেলার কারণে কন্যা শিশুদের চিকিৎসা, খাদ্য প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়। অসুখ বিসুখের সময় একজন ছেলে শিশুকে যেমন তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক তত তাড়াতাড়ি কন্যা শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় না।
৩. বাল্যকাল : শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি মূলত এ সময়েই হয়ে থাকে। তাই বাড়তি যত্নের দরকার হয়ে থাকে। এ সময়কার যত্নের অভাবে বেশিরভাগ কন্যা শিশুই অসুস্থতায় ভোগে এবং এটা সারাজীবন তাদেরকে বয়ে বেড়াতে হয়। তারতম্য দেখা যায় শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও। ছেলেদেরকে ঠিকই বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের ঘরের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে পাঠায় কিন্তু তা বেশিদূর পর্যন্ত এগোয় না।
৪. কৈশোরকাল : আমাদের দেশের অধিকাংশ গ্রামের মেয়েদের এ সময়ে বিয়ে দিয়ে দেয়, অনেক ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদেরও এর শিকার হতে হয়, যার কারণে অপরিণত বয়সে তারা সন্তান ধারণে বাধ্য হয় এবং অনেকেই অকালে প্রাণ হারায়। অন্যদিকে, ছেলেরা এ বয়সে স্কুল শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
৫. যৌবনকাল : এ যৌবনকাল বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ের জীবনেই আসে না। কথায় বলে মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি’ এ মতবাদকে বিশ্বাস করে অল্প বয়সে তারা সাংসারিক জীবনধারণ করতে বাধ্য হয়
৬. প্রৌঢ়ত্ব : প্রতিটি মানুষকে তার জীবনের বাস্তব সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবার অধীনস্ত থাকে নারী, বিয়ের পর স্বামীর, স্বামীর অবর্তমানে ছেলের কিংবা ভাইয়ের অধীনে থাকতে হয়। প্রতিটি মানুষেরই এ সময়ে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা। তাই এগুলোর অভাবে মেয়েদের অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়।
৭. বার্ধক্য : বার্ধক্য হলো নরনারীর জীবনের শেষ পর্যায়। এ সময় এসেও নারীকে অনেক দুঃখ, কষ্ট ভোগ করতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে যেসব কারণে নারীরা আজ বৈষম্যের স্বীকার তার অন্যতম কারণ পিতৃতন্ত্র । পিতৃতান্ত্রিক সমাজকাঠামো নারীদের প্রতি ক্ষেত্রে বৈষম্যের চোখে দেখে। জন্মের পর নারীরা প্রথম বৈষম্যের স্বীকার হয়ে পিতৃগৃহে, ফলে ছোট থেকেই তারা বৈষম্যমূলক মনোভাব নিয়ে গড়ে উঠে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*