পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর ।

অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিশেষত্ব আলোচনা কর।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নিয়ামকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তরা ভূমিকা :
প্রাচীন যুগে যখন মানুষ সবেমাত্র পশুপালন ও চাষাবাদ শুরু করেছিল, পুরুষেরা তখন পশুপালন করতো আর মেয়েরা ফলমূল সংগ্রহ ও উচ্ছিষ্ট খাবার বসবাসের স্থানের চারপাশে ছড়িয়ে চাষাবাদ আরম্ভ করে। ধীরে ধীরে লাঙল, ঢাকা প্রভৃতি আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এগুলো পুরুষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কারণ নারীর পক্ষে এগুলো চালানো সম্ভব ছিল না। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে নারীরা সমাজে পুরুষের অধস্তন হয়ে পড়ে। বর্তমান পৃথিবীর সামান্য কিছু স্থানে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বলভাবে টিকে আছে। মূলত পুরুষতন্ত্রই বর্তমান সমাজব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য : পিতৃতন্ত্রের রূপ বা বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন সমাজ এবং ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নিম্নে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. পুরুষপ্রধান সমাজ : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো পুরুষপ্রধান সমাজ। এ ব্যবস্থায় পুরুষেরাই শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। তাদের দ্বারাই সবকিছু পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, থাকে। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় নারীদের ভূমিকায় কোন গুরুত্বই সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই পুরুষের প্রাধান্য বিদ্যমান
২. বংশপরিচয় বাবার নামে : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ছেলেমেয়েদের বংশপরিচয়ে মায়ের কোন উল্লেখ থাকে না। বাবার বংশপরিচয়ের দ্বারাই তাদের বংশপরিচয় নির্ধারিত হয়। সমাজে পিতার সন্তান হিসেবেই তারা পরিচিতি লাভ করে। যদিও নারী গর্ভে ধারণ করে এবং জন্মের পর সম্ভানকে লালন পালন করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে কিন্তু তার ভূমিকা উহ্যই থেকে যায়।
৩. নারী বিয়ের পর স্বামীর পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করে : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের পূর্বে নারীরা পিতার তত্ত্বাবধানে থাকে এবং বিয়ের পর সে চলে যায় স্বামীর তত্ত্বাবধানে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া সে কোনকিছু করতে পারে না। স্বামী কর্তৃক তার উপর যা কিছু চাপিয়ে দেয়া হয় সে তা করতে বাধ্য থাকে।
৪. সম্পত্তির উত্তরাধিকারে কন্যা পুত্র অপেক্ষা কম পায় : পুত্র এবং কন্যা উভয়েই পিতামাতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও এবং অনেক ক্ষেত্রে পিতামাতার বিভিন্ন ব্যাপারে মেয়েদের অবদান বেশি থাকা সত্ত্বেও সম্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের অধিকার ছেলেসন্তানের তুলনায় কম। যেমন- আমাদের দেশে পিতামাতার সম্পত্তি ভাই যতটুকু পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক।
আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা এ অর্ধেক অংশটুকুও ভোগ করতে পারে না।
৫. পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের ভূমিকাই যেহেতু মুখ্য, তাই এখানে পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষাটাও তীব্র। পুত্রসন্তানকে এখানে ভবিষ্যতের অবলম্বন হিসেবে দেখা হয়। আর এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, কোন নারী যদি পুত্রসন্তান ধারণে অক্ষম হয় তখন তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
৬. খাদ্য ফটনে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য : এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয় যেহেতু ছেলে সন্তানেরাই সমাজের ভবিষ্যৎ কর্ণধার, তাই খাদ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। খাদ্য বণ্টনে এরূপ বৈষম্যের কারণে বেশিরভাগ মেয়েরাই অপুষ্টিতে ভোগে। আর এরই ফলশ্রুতিতে দেখা যায় যে, সন্তান জন্মদানের সময় এসব পুষ্টিহীন মহিলাদের, অধিকাংশেরই মৃত্যু ঘটে।
৭. মেয়েদের উপর পারিবারিক দায়দায়িত্ব অর্পিত হয় : পিতৃতন্ত্রে মনে করা হয় যে, গৃহের বাইরে মেয়েদের কোন কাজ থাকতে পারে না। তাদের কাজ কেবল সন্তান লালনপালন আর রান্নাবান্নার মধ্যেই সীমিত। এহেন মানসিকতার ফলস্বরূপ নারীদেরকে এক প্রকার গৃহবন্দী অবস্থাতেই জীবনযাপন করতে হয়।
৮. মেয়েদের শিক্ষার প্রতি অনিহা : পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয় যে, মেয়েরা যতই শিক্ষিত হোক তারা সারা জীবনই স্বামীর সেবা, সন্তান লালনপালন, রান্নাবান্না এবং ঘরসংসার সামলানোর বাইরে কোন দায়িত্ব পালন করতেnপারবে না। তাই দেখা যায়, পিতা যতটুকু আগ্রহ নিয়ে তার পুত্রসন্তানটিকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কন্যাসন্তানটির শিক্ষার ব্যাপারে ঠিক ততটুকুই অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন। যার ফলে নারীশিক্ষা ব্যাপারটি থেকে যাচ্ছে অবহেলিত।
৯. নারীনির্যাতন : পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীনির্যাতন একটি সাধারণ চিত্র। এখানে নারীকে তার প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় স্বামীর নির্দেশ অনুসারে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষেরা নারীকে তার ভোগ্যপণ্য হিসেবে মনে করে তাকে যথেচ্ছাভাবে ব্যবহার করে থাকে। যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে নারী প্রতিনিয়তই পুরুষের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে যাচ্ছে। নারীনির্যাতনে যেসব রূপ লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, হত্যা, পুড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি অন্যতম।
১০. গর্ভধারণে নারীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দেয়া : গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে পুরুষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকে। এক্ষেত্রে নারীর যদি কোন সমস্যা থাকে বা তার ইচ্ছা বা অনিচ্ছা থাকে তাকে গৌণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বহুবিধ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এ ব্যবস্থায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে মেয়েরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ও স্বাধীনতা খুব কমই ভোগ করতে পারে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*