ক্ষমতায়ন বলতে কী বুঝ? নারীর ক্ষমতায়নের স্তরগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ক্ষমতায়ন কী? ক্ষমতায়নের পর্যায় বা ধাপগুলো আলোচনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন বলতে কী বুঝ? নারীর ক্ষমতায়নের ধাপগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন কাকে বলে? নারীর ক্ষমতায়নের স্তরগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা দাও। নারীর ক্ষমতায়নের স্তরগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন কী? নারীর ক্ষমতায়নের স্তরবিন্যাসের বিবরণ দাও।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নারীর ক্ষমতায়ন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক তথা সকল ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষের তুলনায় অধস্তন অথচ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নারীর অবদান পুরুষের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। সমাজের সার্বিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাবার যোগ্য। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীদের এ অবদানকে বরাবরই অস্বীকার করেছে এবং নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে নারীদের অধস্তন করে রাখার জন্য। মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে সামাজিক অধস্তনতা ও পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই ।
ক্ষমতায়ন : ক্ষমতায়ন উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ক্ষমতায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা মানুষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং সকল বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়।
Venessa Griffen Perspective’ গ্রন্থে বলেছেন, আমার কাছে ক্ষমতা মানে-
১. নিয়ন্ত্রণ থাকা বা অধিকতর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা।
২. Women Development and Empowerment: A Pacific Feminist প্রত্যেক ব্যাপারে নিজস্ব বক্তব্য থাকা এবং অপরকে বক্তব্য শুনাতে পারা। নারীর পরিপ্রেক্ষিতের আলোকে সংজ্ঞা নির্দেশ করার এবং সৃষ্টি করার সামর্থ্য থাকা।
৪. মেয়েদের স্থান বলে সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত সমাজের নির্দিষ্ট এলাকা নয়, বরং সমগ্র সমাজের সাথে জড়িত। সামাজিক পছন্দ ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য থাকা।
৫. অবদান রাখতে পারে এমন সমতাপূর্ণ নাগরিক ও মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মান থাকা । জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “ক্ষমতায়ন হলো একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা একটি জনগোষ্ঠী প্রতিবাধক অপসারণের জন্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মকাণ্ড গ্রহণ করে।”
ক্ষমতায়নের স্তর : জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্ষমতায়নের পাঁচটি স্তর রয়েছে। স্তরগুলো ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে নিম্নরূপ :

ক্ষমতায়ন (Empowerment)
নিয়ন্ত্রণ (Control)
অংশগ্রহণ (Participation)
নারীজাগরণ (Consientisation)
সম্পদ আহরণ ও নিয়ন্ত্রণে অবাধ সুযোগ ও
অগ্রাধিকার (Access)
কল্যাণ (Welfare)

১. কল্যাণ : এ স্তরে নারীর বস্তুগত কল্যাণ অর্থাৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড ও আয় উপার্জন সংক্রান্ত নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য ও ব্যবধান চিহ্নিত করতে হবে এসব ক্ষেত্রে। কেবলমাত্র বৈষম্য চিহ্নিত করলেই যে ক্ষমতায়ন ঘটবে তা কিন্তু নয়, সাথে সাথে এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলোও নিতে হবে।
২. সম্পদ আহরণ ও নিয়ন্ত্রণে অবাধ সুযোগ এবং অগ্রাধিকার : সম্পদের মালিকানা, সম্পদের ব্যবহার ও সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নারী-পুরুষ সকলের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং এসব বিষয়ে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জমি জমা, সেবা, শ্রম, ঋণ, ব্যবসায় বাণিজ্য, চাকরি ও অন্যান্য কর্মে
নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ মোটের উপর সম্পদের সকল দিকে নারী ও পুরুষের মাঝে অসমতা বিদ্যমান।
৩. নারী জাগরণ : প্রত্যেক নারীর মধ্যে এ ধারণা জাগ্রত করার চেষ্টা করতে হবে যে, নারীর অক্ষমতা ত্রুটি বা অপারগতা তার অধস্তন অবস্থার জন্য দায়ী নয়। এ অবস্থা জৈবিক বা স্বাভাবিক নয়, বরং সময়ের ধারাবাহিকতায় সমাজই এ অবস্থার জন্ম দিয়েছে এবং তাকে লালন করছে, কাজেই এ অধস্তন অবস্থানের বিষয়টি অপরিবর্তনীয় কিছু নয় বরং পরিবর্তনযোগ্য।
৪. অংশগ্রহণ : সকল নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নারী ও পুরুষের সমান অংশিদারিত্বের অর্থই হলো অংশগ্রহণ। জেন্ডার বৈষম্য এবং সমাজে নারীর সকল অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে নারীর সচেতন হলে তারাও জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সমান অংশীদারিত্ব দাবি করবে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ধরনের কাজে নারী-পুরুষের সাথে সমতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করবে।
৫. নিয়ন্ত্রণ : অংশগ্রহণে সমান অধিকার অর্জন করতে পারলে নারী নিজ স্বার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের এবং সমাজের নিয়তি নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও প্রভাবিত করার সামর্থ্য লাভ করবে। নারীর মানসিক বিকাশ ও সম্পদ আহরণ যখন পুরুষের সাথে সমতার ভিত্তিতে হবে, তখন নিজ ইচ্ছা, চাহিদা ও স্বার্থ বাস্তবায়নের কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও পরিবর্তন করতে সামর্থ্য হবে এবং তখনই নারীর চূড়ান্ত ক্ষমতায়ন ঘটবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, নারীর ক্ষমতায়নের অর্থ এই নয় যে, নারীরা নিজেরা ক্ষমতায় আসার জন্য যারা ক্ষমতার চেয়ারে অধিষ্ঠিত আছেন তাদেরকে সরিয়ে দিবেন। এ Approach টির মূলকথা হলো, নারীকে কেবল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলাই যথেষ্ট নয়, বরং জীবনের সকল পর্যায়ে তার নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটানো এবং নিজের জীবনকে অন্যের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার শক্তি অর্জনের যোগ্যতা সৃষ্টি করাও প্রয়োজন, যাকে এক কথায় বলা চলে ক্ষমতায়ন। তবে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব হবে যখন উপর্যুক্ত স্তরগুলোতে নারী-পুরুষ সমঅধিকার নিশ্চিত সম্ভব হবে

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*