নারীর ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ আলোকপাত কর।

অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়সমূহ আলোকপাত কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের সমস্যা সমাধানের উপায় বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সাম্প্রতিককালের উন্নয়ন ভাবনায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তথা বিত্তহীন জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটি বেশ জোরেসোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সমতার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের
অধিকার মর্যাদার সমতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
নারীর ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ : নারীর ক্ষমতায়নের পথে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত অথবা ক্ষমতায়নের উপায়সমূহ নিম্নে আলোকপাত করা হলো :
১. উপযুক্ত পরিবেশ : নারীর ক্ষমতায়নের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করে, নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগের বন্দোবস্ত করে, ব্যাপক হারে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। সর্বোপরি প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক শিক্ষাপদ্ধতির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
২. সংগঠিত বা একত্রীকরণ : নারীদের আজকের অধস্তন পর্যায় থেকে কোনো কর্তৃত্বের অবস্থানে নিয়ে আসতে হলে তাদেরকে সংগঠিতকরণ বা একত্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র সুসংগঠিত কর্মপ্রয়াসই তাদেরকে বিরাজমান বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে সমকর্তৃত্বের সোনালি সূর্যকে ছিনিয়ে আনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।
৩. নেতৃত্বের যোগ্যতা ও গতিশীলতা : কোনো কর্মপ্রয়াস সফল হবে কী নিষ্ফল হবে তা অনেকাংশে নেতৃত্বের যোগ্যতা ও গতিশীলতার উপর নির্ভর করে। সুতরাং, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্যে নেতৃত্বের বিকাশ সাধন ও নতুন নতুন নেতৃত্বের তথা সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য অব্যাহতভাবে কর্মপ্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।
৪. অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ : যেকোনো প্রকার কর্তৃত্ব কিংবা নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার গুরুত্ব এককথায় তুলনাহীন। সুতরাং, পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে সমমর্যাদা ও অবস্থানে তুলে আনতে হলে তাদেরকে দক্ষতা অর্জন ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে। একমাত্র সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে যে এটা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য।
৫. আত্মজাগরণ সৃষ্টি : সম্পদহীনতা ও ক্ষমতাহীনতা মানুষকে শুধু বস্তুগতভাবেই দরিদ্র করে দেয় না, এটা মানুষের আত্মিক শক্তিকেও বিনষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে বলার কথা যেটা, সেটা হলো অধস্তন অবস্থা ও অবস্থানে থাকতে থাকতে অধিকাংশ নারীই আজ হতাশ। এমনকি অনেকে হীনম্মন্যতাবোধেও আক্রান্ত। এ জাতীয় অবস্থা থেকে তাদেরকে উদ্ধার পেতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা । এজন্য নানাবিধ উপায়, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় নারীদের মাঝে আত্মজাগরণ সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা : নারীদেরকে শুধু সংগঠিত করলেই সুফল পাওয়া যাবে না। তাদের সংগঠিত শক্তিটাকে কাজে লাগানোর জন্য কর্মসূচি নিতে হবে সঠিক। এতে সংগঠনের সক্রিয়তা আসবে এবং এ সক্রিয়তাই একদিন যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ত করবে অর্থাৎ, সকল পর্যায়ে তাদের অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের সুফল নিশ্চিত করবে।
৭. অধিকার : এটা সার্বজনীন সত্য যে, “অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।” কেননা, অধিকার আর দাবি এক জিনিস নয়। নারীর প্রতি আজ যে অন্যায় অবিচার ও শোষণ নিপীড়ন চলছে তার বিপরীতে সমঅধিকার ও মর্যাদার যে কথা আসছে তা শুধু দাবিই নয়, এটা নারীদের জন্মগত অধিকারও বটে। আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি আছে। তথাপি নারীরা যে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা আজ দিবালোকের মতো সত্য।
৮. আইন: নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে আইনের কথাটাও আসে। আসলে নারীbঅধিকার আদায় ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইনের তেমন কোনো অপর্যাপ্ততা নেই। তবে সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিরাজমান অপর্যাপ্ততা দূর করতে হলে দরকার প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় গ্রহণের জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইন সহায়তা প্রদান করা। এতে করে নারীদের সচেতনতাবোধ বাড়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সাহসের ব্যাপ্তিও ঘটবে যা কি না নারীর ক্ষমতায়নের পথকে অনেকটা সহজতর করে তুলবে।
৯. পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া : যে কোনো কাজ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন সাধন করতে হলে প্রথম করণীয় হিসেবে আসবে সমস্যা চিহ্নিতকরণ। সমস্যার কারণাদি নির্ণয় ও তার ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ করে করণীয় নির্ধারণ করা। সর্বোপরি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এসবের জন্য আশু করণীয় হলো পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া এবং সঠিক ক্রিয়াকর্মে সর্বাত্মক সমন্বয়সাধন করা।
১০. ক্ষমতায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা ও দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করা : নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হলো ক্ষমতায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা ও দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করা। নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতাসমূহ অপসারণ করে কার্যকর ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, উল্লিখিত পন্থা অবলম্বন করে নারীর ক্ষমতায়ন করা যায়। দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর মধ্যদিয়েই তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। স্থানীয় সরকার নারীর গ্রহণ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিত্ব

বাড়াতে তেমনি পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বত্র মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে দারিদ্র্য, মৌলবাদ এমনকি নারীদের অদক্ষতা ও নারীর ক্ষমতায়নে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা, অঙ্গীকার আর সুনীতির।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*