পরিসংখ্যানের প্রধান প্রধান বিভাগসমূহ লিখ ।

অথবা, পরিসংখ্যানের প্রধান বিভাগসমূহ কী কী?
অথবা, পরিসংখ্যানের প্রধান প্রধান বিভাগসমূহের নাম উল্লেখপূর্বক বিশ্লেষণ কর।
উত্তরায় ভূমিকা
: পরিসংখ্যান হলো তথ্যবিশ্বের বা তথ্যবিশ্বের কোন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত সংখ্যাত্মক তথ্যের সংগ্রহণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ, উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে তথ্যবিশ্ব বা তথ্যবিশ্বের উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট মাত্রার ভ্রান্তি (Error) সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সম্বলিত একটি বিজ্ঞান ।
পরিসংখ্যানের প্রধান প্রধান বিভাগসমূহ : পরিসংখ্যানের আলোচ্য বিষয়সমূহকে মূলত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. তত্ত্বীয় পরিসংখ্যান (Theoretical Statistics)
২. ফলিত বা ব্যবহারিক পরিসংখ্যান (Applied Statistics)
১. তত্ত্বীয় পরিসংখ্যান : যে শাখায় পরিসংখ্যানের মৌলিক উন্নয়ন সাধনের জন্য নতুন নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবিত হয় এবং উদ্ভাবিত তত্ত্বসমূহের উপর জ্ঞান অর্জন করা হয় তাকে তত্ত্বীয় পরিসংখ্যান বলা হয়। সংখ্যা বহুলতা বিধি (Law of large number), সম্ভাবনা তত্ত্ব (Probability theory), পর্যবেক্ষণ ভ্রান্তি তত্ত্ব (Theory of error of observation) এবং প্রাক্কলনের তত্ত্ব (Theory of estimation) ইত্যাদিসহ আরো অনেক সহজ ও জটিল তত্ত্বীয় বিষয়গুলো তত্ত্বীয় পরিসংখ্যানের আওতাভুক্ত। এসব তত্ত্বসমূহই পরিসংখ্যান পদ্ধতির মূল ভিত্তি। আবার বহু কারণ দ্বারা প্রভাবিত সমস্যা বা ঘটনার তথ্যাদির সংগ্রহ, উপস্থাপন ও বিশ্লেষণের দ্বারা এদেরকে সহজবোধ্য ও অর্থপূর্ণ করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্র ও কলাকৌশল পরিসংখ্যান পদ্ধতি নামে পরিচিত। অর্থাৎ পরিসংখ্যান পদ্ধতি পরিসংখ্যান তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য উদ্ভাবিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল মাত্র। সুতরাং এ বিভাগে প্রকৃতিগতভাবে পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত বিভিন্ন সাধারণ ও গাণিতিক তত্ত্ব, সূত্র, সমীকরণ এবং এদের উৎপত্তি নির্ণয় সম্বলিত করা হয়।
২. ফলিত বা ব্যবহারিক পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যান তত্ত্বে উদ্ভাবিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ও গাণিতিক সূত্র বা পদ্ধতিসমূহের বাস্তব ব্যবহার বা প্রয়োগই এ বিভাগের আওতাভুক্ত। উদ্ভাবিত তত্ত্বের বা সূত্রের প্রয়োগের মাধ্যমে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তথ্যের উপর ভিত্তি করে তথ্য বিশ্বের বৈশিষ্ট্য বা তথ্য বিশ্বের উপর মন্তব্যকরণ (Interpretation), পূর্বাভাষ প্রদান (Prediction), প্রাক্কলন (Estimate) ইত্যাদি নির্ণয় করাই ফলিত পরিসংখ্যানের মূল উদ্দেশ্য । সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান, জনসংখ্যা পরিসংখ্যান, জৈব পরিসংখ্যান, কৃষি পরিসংখ্যান এবং নমুনা জরিপ ইত্যাদি শাখাগুলো ফলিত পরিসংখ্যানের প্রধান বিষয়। ব্যবহারিক দিক বিবেচনা করে ফলিত পরিসংখ্যানকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান (Descriptive Statistics)
খ. আরোহী পরিসংখ্যান (Inferential or Inductive Statistics)
ক. বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যানের যে শাখায় তথ্যবিশ্ব সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিকরণ, উপস্থাপন করা এবং কেন্দ্রীয় প্রবণতার ও বিস্তারের পরিসংখ্যান বলে। সংগৃহীত উপাত্তের তথ্যবিশ্ব হতে হয়। বর্ণনামূলক পরিসংখ্যানে নিরূপিত পরিমাপসমূহ নির্ণয় করার মাধ্যমে মন্তব্য করা হয় তাকে বর্ণনামূলক প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান ব্যবহৃত যথার্থতা যাচাই প্রয়োজন হয় না
খ. আরোহী পরিসংখ্যান : যে প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত উপাত্তে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করার পর তথ্যবিশ্ব বা তথ্যবিশ্বের কোন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় তাকে আরোহী পরিসংখ্যান বলা হয়। মূলত সংগৃহীত উপাত্ত হতে তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আরোহী পরিসংখ্যান ব্যবহৃত হয়। আরোহী পরিসংখ্যানে প্রাক্কলিত মানের যথার্থতা যাচাই এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনামূলক ও আরোহী পরিসংখ্যানের ধারণা দেয়া যায় । যেমন— কোন নির্দিষ্ট ঘটনার শুধু বর্ণনা দেয়ার উদ্দেশ্য সামনে রেখে গড় নির্ণয় করা হয়, তবে তা হবে বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান । অথচ আমরা যদি পূর্বাভাস বা সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্য সামনে রেখে গড় নির্ণয় করি তবে তা হবে আরোহী পরিসংখ্যান। কোন কারখানার সকল কর্মচারীর বেতনের গড় নির্ণয় করার জন্য আমরা ঐ কারখানায় কর্মচারীদের বেতনের গড় নির্ণয় করতে পারি। এক্ষেত্রে বেতনের গড়ের শুধু বর্ণনা দেয়া হলো। কিন্তু নমুনায়নের মাধ্যমে অল্পসংখ্যক কর্মচারীর বেতনের গড়কে যথার্থতা যাচাই এর মাধ্যমে সকল কর্মচারীর মজুরি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তবে তা হবে আরোহী পরিসংখ্যান। অন্য কথায় বলা যায়, আরোহী পদ্ধতিতে পরিসংখ্যানের সমর্থকের (Population) একটি প্রতিনিধিত্বশীল অংশ পর্যবেক্ষণ করে তা হতে সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অতএব বর্ণনামূলক ও আরোহী পরিসংখ্যানের পার্থক্য প্রক্রিয়াগত নয় বরং উদ্দেশ্যভিত্তিক ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, প্রাথমিক অবস্থায় রাষ্ট্রীয় কাজে সুবিধার জন্য পরিসংখ্যানের জন্ম হলেও বর্তমানে এটি আর কেবল সরকারি বা রাষ্ট্রীয় কোন বিজ্ঞান নয়। মানুষের জানার ক্ষেত্র এবং সমাজ প্রতিনিয়ত বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিসংখ্যান নামক পাঠটির ক্ষেত্র ও কৌশলের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*