পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ ।

অথবা, পরিসংখ্যানের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, পারসংখ্যানের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পরিসংখ্যানের সংজ্ঞাগুলোবিশ্লেষণ করলে পরিসংখ্যানের বা উপাত্তসমূহের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। কোন একটি একক সংখ্যা বা সম্পর্কহীন কোন তথ্যমালাকে পরিসংখ্যান বলা যাবে না। আমরা এখন পরিসংখ্যানে এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করবো।
পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য : পরিসংখ্যানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১. পরিসংখ্যান হলো তথ্যের সমষ্টি : একক ও সম্পর্কহীন সংখ্যা পরিসংখ্যান হবে না। একাধিক সম্পর্কযুক্ত সংখ্যা সমষ্টিগতভাবে পরিসংখ্যান হবে। পরিসংখ্যান কতকগুলো সম্পর্কযুক্ত এককের সমষ্টি।
২. পরিসংখ্যান অবশ্যই সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত হবে : কোন অনুসন্ধানের বর্ণনামূলক তথ্য পরিসংখ্যান নয়। পরিসংখ্যান হতে হলে তথ্যসমূহের সংখ্যাত্মক প্রকাশ আবশ্যক। গুণবাচক তথ্য, যেমন- ভালো মন্দ, ধনী-গরিব, সুন্দর- কালো এবং ভালো পণ্য ইত্যাদি সরাসরি পরিসংখ্যানের আওতায় না পড়লেও এদের কতজন ভালো এবং কতজন মন্দ অথবা কতজন ধনী ও কতজন গরিব এরূপে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তারা পরিসংখ্যান হবে। তথ্যের সংখ্যাত্মক প্রকাশ তথ্যের গুণবাচক বক্তব্যের চেয়ে ঢের বেশি যথার্থ ও নির্ভুল হতে পারে।
৩. পরিসংখ্যান অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশের সাথে সম্পর্কিত : পূর্বনির্ধারিত কোন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশের সাথে অনুসন্ধানের ফলাফল বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গৃহীত হলে উক্ত সংখ্যাত্মক তথ্যাদি পরিসংখ্যান হবে। অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য দ্বার্থহীন এবং সুস্পষ্ট হতে হবে অর্থাৎ অনুসন্ধানের ক্ষেত্র একক এবং তথ্যের নির্ভুলতা কমাতে হবে। উদ্দেশ্যহীনভাবে গৃহীত সম্পর্কহীন সংখ্যাসমূহ পরিসংখ্যান হবে না। কারণ এরা সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদানে ব্যর্থ হবে। উদাহরণস্বরূপ ময়মনসিংহ এলাকার মৎস্য চাষীদের বার্ষিক মুনাফা সম্পর্কে জানার জন্য ফরিদপুর এলাকার মৎস্য চাষীদের মুনাফার পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ করলে এলাকার ভিন্নতার কারণে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না ।
৪. পরিসংখ্যান বহুবিধ কারণ দ্বারা প্রভাবিত : পরিসংখ্যান নানাবিধ কারণ দ্বারা প্রভাবিত অনুসন্ধানের সংখাত্মক বর্ণনা হতে পারে। পরিসংখ্যান তথ্য বহুবিধ প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হবে। কেননা পরিসংখ্যান শুধু একটি কারণের ফল নয়। পরিসংখ্যান তথ্যাদি বহুসংখ্যক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এসব কারণের কোনটিকে পৃথকভাবে পর্যালোচনা করা দুরূহ ব্যাপার। যেমন- কোন একটি লোকের সঞ্চয় তাঁর আয়ের পরিমাণ, সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং খরচের প্রকৃতি ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তেমনি কোন একটি খুচরা দোকানের বিক্রয়ের পরিমাণ দোকানের আয়তন, অবস্থান, বিক্রয় প্রচেষ্টা এবং মূল্যনীতি ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়। উপযুক্ত ক্ষেত্রেই সঞ্চয় এবং বিক্রয়ের পর্যালোচনা করতে হলে যে বিভিন্ন উপাদান এ চলকগুলোকে প্রভাবিত করে সেগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। তবেই পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগের ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে ।
৫. পরিসংখ্যান উপাত্ত তুলনাযোগ্য এবং সমজাতীয় : পরিসংখ্যানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো দুই বা ততোধিক ঘটনার মধ্যে তুলনার সুযোগ সৃষ্টি করা। তথ্য সংগ্রহের কাজ এমনভাবে করা উচিত যাতে সেগুলোর মধ্যে পারস্পরিক তুলনা সম্ভবপর হয়। তুলনা যোগ্যতার একটি অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হলো তথ্যের সমপ্রকৃতি ও সমতুল্যতা।
৬. তথ্যাবলির গ্রহণযোগ্যতা: কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্যাবলির গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে তা যেন তথ্যগুলোর মধ্যে প্রতিফলিত হয়। যেমন- দুটি শহরের মোবাইল সেট বিক্রির সেন্টারগুলোর মাসিক মুনাফার মধ্যে তুলনা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে সেন্টারগুলোতে সেট বিক্রির পাশাপাশি মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিমকার্ড বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিম বিক্রির মুনাফা ব্যতীত শুধু সেট বিক্রির মুনাফার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তা না হলে প্রাপ্ত ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায়, পরিসংখ্যান হলো কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষভাবে সংগৃহীত সংখ্যায় প্রকাশিত মান, তুলনা ও সমজাতীয়, যুক্তিযুক্ত সঠিকতায় প্রাক্কলিত, সুশৃঙ্খলভাবে সংগৃহীত এবং উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত তথ্যের সমষ্টি।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*