স্বায়ত্তশাসনের সুফলসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, স্বায়ত্তশাসনের সুবিধাসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, স্বায়ত্তশাসনের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, স্বায়ত্তশাসনের সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, স্বায়ত্তশাসনের সুফল সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
অথবা, স্বায়ত্তশাসনের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর‌≈ ভূমিকা :
আধুনিককালের বৃহৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব সর্বত্র পরিলক্ষিত হলেও দূর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উপর কিছু কিছু ক্ষমতা যার ফলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্ম হয়েছে। স্থানীয় সংস্থাসমূহ আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সঠিকতা অনুধা
নগর,করে থাকে। করে, তাদের গুরুত্ব পর্যালোচনা করে এবং সমস্যাবলির সমাধানের ব্যবস্থা করে।
স্বায়ত্তশাসনের সুফল : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সুফল বহুমুখী। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের নিয
সুফল রয়েছে। যথা :
১. স্বায়ত্তশাসনে দায়িত্ব এবং সচেতনতা বৃদ্ধি : আঞ্চলিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে এবং স্বায়ত্তশাসন সংস্থাসমূহ অংশীদার হয়েও তাদের সুবিধার সাথে নিজেদের জড়িত করে মানুষ দায়িত্ব সচেতন হয়ে উঠে এবং পরবর্তীকালে দেশে বৃহৎ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করে।
২. গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ : স্বায়ত্তশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে গণচেতনা বৃদ্ধি পায়। তাছাড় স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে এ ধারণা জন্মে যে, সকল স্তরের মানুষের সমবেত কল্যাণ প্রচেষ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সুতরাং স্বায়ত্তশাসন রাষ্ট্র চেতনার ও গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ক্ষেত্র।
৩. শাসনব্যবস্থার ব্যয় সংকোচন : স্থানীয় লোকেরা নিজেদের সমস্যাবলির সমাধান নিজেরাই করে এবং এ জন্য যে ব্যয় হয় তাও স্থানীয় তহবিল থেকে সংগৃহীত হয়। সুতরাং এর ফলে শুধু যে কেন্দ্রের ব্যয় সংকোচন ঘটে তাই নয়, স্থানীয় লোকেরা নিজেদের অর্থ অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ব্যয় করতে শেখে। কেন্দ্র রাষ্ট্রীয় তহবিল বৃহত্তর স্বার্থে নিয়োজিত করতে পারে।
৪. কর্তব্যপরায়ণতার সূচনা : স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে কর্তব্যপরায়ণতার মনোভাব জাগ্রত হয়ে উঠে অটল ধৈর্যে কর্তব্য সম্পাদন করতে পারলে আপন কৃতকর্মে মানুষকে মহত্তর কর্মের উদ্দীপনা দান করে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থার সদস্যবর্গ কোনো মহৎ কর্মে কৃতকার্য হলে তারা এর জন্য গর্ববোধ করেন এবং নতুন নতুন পরিকল্পন গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেন
৫. কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ হ্রাস করণ : সাম্প্রতিকালে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবার কারণে সরকার আর্থসামাজি অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছে এবং কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এসব কার সুসম্পন্ন করা সম্ভবপর নয়। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সুসম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকারে উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ অনেক হ্রাস পেয়েছে।
৬. স্থানীয় জনগণের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সেতুবন্ধন : প্রত্যক্ষভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে স্থানীয় জনগণের সরাসরি সম্পর্ক বা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাকরণ সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের সাথে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি তাদের স্থানীয় পর্যায়ের যাবতীয় সমস্যাদি অভাব অভিযোগ রিপোর্ট আকারে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট উপস্থাপন করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এভাবেই পরোক্ষভাবে স্থানীয় সাধারণ জনগণের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৭. স্থানীয় জনগণের প্রশাসনিক কার্যে অংশ গ্রহণের সুযোগ : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাই বলা যায় কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের ক্ষেত্রে সম্পর্ক নিবিড়তর হয়ে থাকে।
৮. স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যার সমাধান : স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যার প্রকৃতি এক রকম আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সমস্যার প্রকৃতি আরেক রকম। সে প্রেক্ষাপটে স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ক্ষেত্রে একমাত্র স্থানীয় ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। স্বভাবতই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিষয়ের উপর যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার লক্ষ করা যায়, তবে তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক মধুর না হলেও তিক্ততার নয়।
৯. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে : স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক বিদ্যমান। স্থানীয় সরকার তৃণমূল পর্যায় থেকে জনগণকে রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন করে তোলে। আর তৃণমূল রাজনৈতিক নেতারাই এক সময় জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দান করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার মূল পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে।
১০. সুনাগরিকতার প্রথম পাঠ : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন জনসাধারণের মনে সুনাগরিকতার গুণাবলি সঞ্চার করে এবং যারা শাসনকার্যে অংশ গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, স্বার্থত্যাগ, পরম সহিষ্ণুতা, সহযোগিতা বিকশিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারকে সহায়তা করে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সরকারকে দূরবর্তী অঞ্চলের খুঁটিনাটি সমস্যার চিন্তা থেকে অভ্যাহতি দান করে এবং এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রকল্যাণে বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করতে পারে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*