জেলা পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা আলোচনা কর।

অথবা, জেলা পরিষদের গঠন, সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা বর্ণনা কর।
অথবা, জেলা পরিষদের গঠন,সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা আলোচনা কর।
অথবা, জেলা পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, জেলা পরিষদের গঠন, সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷। ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আদেশ জারি করে জেলা পরিষদকে জেলা বোর্ড নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৭৬ সালের স্থানীয় শাসন অধ্যাদেশ দ্বারা জেলা পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। অতঃপর ১৯৮৭ সালের মন্ত্রীপরিষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৮ সালে জেলা পরিষদ আইন পাস করে এবং তিনটি পার্বত্য জেলা ব্যতীত অন্য ৬১টি জেলার প্রতিটিতে একটি করে জেলা পরিষদ গঠন ও চালু করা হয়েছে। জেলা পরিষদের গঠন, সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা : জেলা পরিষদ আইন ২০০০ অনুসারে বিভিন্ন ধারাতে জেলা পরিষদের গঠন, সাংগঠনিক কাঠামো, বিধি এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
স্থাপন : ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনে ৩ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে :
১. এই আইন বলবৎ হবার পর, যত শীঘ্র সম্ভব, প্রত্যেক জেলায় এই আইনের বিধান অনুযায়ী একটি জেলা পরিষদ স্থাপিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার নামে এর জেলা পরিষদ পরিচিত হবে।
২. প্রত্যেক জেলা পরিষদ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং এই আইন ও বিধি সাপেক্ষে এর স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করবার, অধিকারে রাখবার ও হস্তান্তর করবার ক্ষমতা থাকবে এবং এর নামে এটি মামলা দায়ের করতে পারবে বা এর বিরুদ্ধে
মামলা দায়ের করা যাবে। পরিষদ গঠন : আইনের ৪ ধারা মোতাবেক ১. নিম্নরূপ সদস্য সমন্বয়ে পরিষদ গঠিত হবে। যথা :
ক. একজন চেয়ারম্যান খ. পনেরো জন সদস্য এবং গ. সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন মহিলা সদস্য।
২. চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যগণ ধারা ১৭ এর অধীন গঠিত নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে নির্বাচিত হবেন।
৩. চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যগণ নির্ধারিত পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার, ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।
পরিষদের মেয়াদ : আইনের ৫নং ধারা বিধান সাপেক্ষে পরিষদের মেয়াদ তার প্রথম সভার তারিখ হতে পাঁচ বছর হবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচিত নতুন পরিষদ তার প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদ কার্য চালিয়ে যাবে। নিম্নবর্ণিত সময়ে চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যথা :
ক. পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করবে সেই তারিখে।
খ. পরিষদের মেয়াদ শেষ হবার ক্ষেত্রে, উক্ত মেয়াদ শেষ হবার পূর্ববর্তী একশত আশি দিনের মধ্যে;
গ. পরিষদ ধারা বাতিল হবার ক্ষেত্রে, বাতিলাদেশ জারির পরবর্তী একশত আশি দিনের মধ্যে। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা : আইনের ৭৩ নং ধারাতে উল্লেখ রয়েছে :
১. এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেট বিক্তপ্তি দ্বারা প্রণয়ন করতে পারবে।
২. বিশেষ করে এবং উপর্যুক্ত ক্ষমতার সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ন না করে, অনুরূপ বিধিতে নিম্নবর্ণিত সকল অথবা যে কোনো বিষয়ে বিধান করা যাবে। যথা :
ক. পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব;
খ. পরিষদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানাদি প্রকল্পের পরিচালনা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি;
গ. পরিষদের পক্ষে চুক্তি সম্পাদন করার বিধান;
ঘ. পরিষদের কার্যাদি নিস্পন্ন সংক্রান্ত বিধান;
ঙ. পরিষদ কর্তৃক যে সকল রেকর্ড, রিপোর্ট এবং রিটার্ন রক্ষণাবেক্ষণ, প্রস্তুত বা প্রকাশ করা হবে তা নির্ধারণ;
চ. পরিষদ সার্ভিস গঠন ও নিয়ন্ত্রণ;
ছ.পরিষদের তহবিল ও বিশেষ তহবিলসমূহের পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এবং তাদের অর্থের বিনিয়োগ;
জ. বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় ইত্যাদি ।প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা : জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ৭৪ নং ধারায় প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতায় উল্লেখ রয়েছে :
১. এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে পরিষদ, সরকারের পূর্বানুমোদন ক্রমে, এই আইনের কোনো বিধি বিধানের সাথে অসামঞ্জস্য না হয় এরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে।
২. বিশেষ করে এবং উপর্যুক্ত ক্ষমতা সামগ্রিকতা ক্ষুণ্ন না করে অনুরূপ প্রবিধানে নিম্নরূপ বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়ন করা যাবে। যথা :
ক. পরিষদের কার্যাবলি;
খ. পরিষদের সভায় কোরাম নির্ধারণ;
গ. পরিষদের সভায় প্রশ্ন উত্থাপন;
ঘ. পরিষদের তলবি সভা আহ্বান;
ঙ. পরিষদের সভার কার্যবিবরণী লিখন;
চ. পরিষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়ন;
ছ. কমিটি গঠন এবং এর কার্য পরিচালনা;
জ. পরিষদের কোনো কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা অর্জন;
ঞ. পরিষদের অফিসের বিভাগ ও শাখা গঠন এবং তাদের কাজের পরিধি নির্ধারণ;
ট. গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর বিক্রয় রেজিস্ট্রিকরণ;
ঠ. এতিমখানা, বিধবা সনদ এবং দরিদ্রদের ত্রাণ সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রিকরণ, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ;
ড. টীকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন;
ণ. সংক্রামক ব্যাধির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ;
ত. খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল প্রতিরোধ ইত্যাদি। সাংগঠনিক কাঠামো : জেলা পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ :

ছক : জেলা পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জেলা পরিষদ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সর্বোচ্চ স্তর। বর্তমানে জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের বদলে জেলা পরিষদ প্রশাসকগণ দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পরিষদ জনকল্যাণে
বিবিধ কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*