সামাজিক জরিপ পদ্ধতি কী? কেসস্টাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ আলোচনা কর ।


অথবা, সামাজিক জরিপ কাকে বলে? অনুধ্যান পদ্ধতির ধাপসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, সামাজিক জরিপের সংজ্ঞা দাও। কেসস্টাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ উল্লেখপূর্বক
আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আধুনিক সমাজ গবেষণায় জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত তথ্যানুসন্ধানের পদ্ধতি । এটি কোন একটি বিশেষ বিষয়ে তথা সমাজের প্রয়োজনে কোন সামাজিক সমস্যার উপর তথ্যসংগ্রহের জন্য চালানো হয় । এর মাধ্যমে কোন বিশেষ স্থানের জনসাধারণের জীবনযাপন প্রণালি ও কার্যের শর্ত সম্পর্কিত তথ্য জানা সহজ হয় ।
সামাজিক জরিপ : জরিপ পদ্ধতি পূর্বানুমান গঠন ও তত্ত্ব উন্নয়নের এবং যাচাইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সমাজের ঘটনাবলি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটি একটি মৌলিক পদ্ধতি বলে সমাজবিজ্ঞানীগণ মনে করেন। আধুনিক সমাজ গবেষকগণ
সামাজিক জরিপকে তথ্যসংগ্রহের বিভিন্ন অর্থে প্রকাশ করে থাকেন। যেমন- কোন কোন সমাজ গবেষকের মতে, এটি সামাজিক অনুসন্ধানের একটি পদ্ধতি। কারো মতে, এটি তথ্যসংগ্রহের কৌশল। আবার অনেকে এটিকে গবেষণার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সামাজিক জরিপ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে তাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
পলিন ভি. ইয়ং (Pauline V. Young) তাঁর ‘Scientific Social Surveys and Research’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে উল্লেখ করেন, “A survey of a community has been defined as the scientific study of its condition and needs for the purpose of presenting a constructive programme of social advance.” অর্থাৎ, সামাজিক / অগ্রগতির জন্য গঠনমূলক কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সামাজিক অবস্থা ও চাহিদার উপর বৈজ্ঞানিক উপায়ে সম্পন্ন অনুসন্ধানকে সামাজিক জরিপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় ।
জেরি এবং জেরি (Jary and Jary) এর মতে, কোন প্রশাসনিক একক বা কোন সুনির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসরত মানব গোষ্ঠী সম্পর্কে সর্বাত্মক উপাত্ত সংগ্রহই হলো সামাজিক জরিপ ।
মার্ক আব্রাম (Mark Abram) এর মতে, কোন একটি সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ডে সামাজিক দিক সম্পর্কে সংখ্যাত্মক উপাত্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে জরিপ বলা হয় ।
ই. এস. বোগারডাস (E. S. Bogardus) এর মতে, “A social survey is the collection of data concerning the living and working conditions, broadly speaking the people in a given community.” অর্থাৎ, কোন সম্প্রদায়ে বসবাসরত মানবগোষ্ঠী যারা একত্রে বসবাস এবং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত উপাত্তকে জরিপ বলে ।
চ্যাপম্যান (Chapman) এর মতে, “Social survey is the systematic collection of facts about people living in a specific geographic, cultural or administrative area.” অর্থাৎ, কোন সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক অথবা প্রশাসনিক এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক উপাত্ত সংগ্রহকে সামাজিক জরিপ বলে । সুতরাং বলা যায় সামাজিক জরিপ একটি যৌথ প্রচেষ্টা, যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার বর্তমান সমস্যা, পরিস্থিতি বা জনসংখ্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তাদের অবস্থা নিরূপণের জন্য গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে ।
কেস স্ট্যাডি পদ্ধতির ধাপসমূহ : ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি মৌলিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু আধুনিক কালে এ পদ্ধতি বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানের বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় বলে এর সর্বক্ষেত্রে যথাসম্ভব বিজ্ঞানসম্মত মান বাজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কাজ করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি যেসব সাধারণ ধাপ অনুসরণ করা হয় তা হলো নিম্নরূপ :
১. প্রয়োজনীয় কেস নির্বাচন : কেস স্টাডি কাজ শুরু হয় যে কোস সমস্যা বিষয় নির্বাচন করে নয়, বরং উপযুক্ত কেস নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যা গবেষকের নির্দিষ্ট সমস্যা দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুমিত। এসব প্রাসঙ্গিক সকল দিক বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সমস্যার গভীরতা ও বিস্তৃতি পরিমাপ করা হয় । উদাহরণস্বরূপ, বস্তিবাসীদের চিত্তবিনোদন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক কোন সমাজ গবেষক বিশেষ কোন একটি বস্তি নির্বাচন করে তার সার্বিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে পারেন ।
২. সাময়িক অনুমান গঠন : কেস স্টাডিতে সঠিক তথ্যসংগ্রহের উদ্দেশ্যে এমন কিছু অনুমান গঠন করে কাজ করা হয়, যা সম্পর্ক সাময়িক এবং কেবল গবেষকের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে সহায়ক। কেননা, এ ধরনের অনুমানের পথ নির্দেশনা ছাড়া এক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ।
৩. উপযুক্ত তথ্যসংগ্রহের উৎস ও মাধ্যম নির্বাচন : কেস স্টাডিতে সাধারণত একাধিক সূত্র হতে বিভিন্ন উপকরণ বা মাধ্যম ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করা হয়। তথ্যসংগ্রহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎসের পাশাপাশি যেসব কৌশল তথ্য সংগ্রহকল্পে ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে পর্যবেক্ষণ, আলোচনা, চেকলিস্ট, গাইড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কেস স্টাডির এ পর্যায়ে তথ্যের যথার্থতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে উৎস ও উপকরণ নির্বাচন যথেষ্ট সতর্কতা ও দক্ষতার সাথে করা প্রয়োজন ।
৪. তথ্যসংগ্রহ : কেস স্টাডির এ পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস হতে একাধিক কৌশল ব্যবহার করে গ্রহণযোগ্য তথ্যসংগ্রহের বেলায় গবেষক বা তার নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীদের কেস স্টাডির উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি, তথ্যসংগ্রহের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত পূর্ব পরিচিত ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া তথ্যসংগ্রহ কালে সতর্ক তত্ত্বাবধান ও ক্রস চেকিং এর ব্যবস্থা রাখা হয় ।
৫. তথ্য বিশ্লেষণ : কেস স্টাডির এ পর্যায়ে মাঠ হতে তথ্যাবলি বর্ণনাত্মক উপায়ে বিশ্লেষণ উপযোগী করে গবেষকের উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপস্থাপন করা হয়।
৬. সমাধান প্রদান ও ফলো-আপ : কেস স্টাডির এ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কেসের সমস্যা কিভাবে দূর করা যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকবে । তাছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রদত্ত সেবাকর্ম অনুসরণ বা Follo up এর দিকনির্দেশনাও এখানে থাকবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজ গবেষণার এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো ঘটনা অনুধ্যান । এর মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট সমস্যার স্বরূপ উন্মোচন করে তার সুষ্ঠু সমাধান পরিকল্পনার সম্যক সহায়তা করা। এ পদ্ধতি সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিদ্যা, মনোচিকিৎসা, অর্থনীতি শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করা হচ্ছে ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*