পরীক্ষণ পদ্ধতি কী? এর সুবিধা ও অসুবিধা বর্ণনা কর ।


অথবা, পরীক্ষ; পদ্ধতি কাকে বলে? এর সবল ও দুর্বল দিকসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির সংগা দাও। এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
নিয়ন্ত্রিত সৃষ্ট কৃত্রিম অবস্থায় কোন বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করা হলো পরীক্ষণ । নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করা হয় এজন্য সম্পূর্ণ বিষয়টি পরীক্ষকের আওতায় থাকে । পরীক্ষক ইচ্ছামতো অবস্থাগুলো পরিবর্তন করতে পারেন এবং পরীক্ষক জানেন কোন বিষয়টি কতটুকু পরিবর্তন করলে কি ঘটতে পারে ।
পরীক্ষণ পদ্ধতি : সাধারণভাবে বলা যায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কোন পর্যবেক্ষণ করাকে পরীক্ষণ বলে । অন্যভাবা বলা যায়, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্ভরশীল চলকের উপর স্বাধীন চলকের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করাকেই পরীক্ষণ বলে ।
Best (1981:57) বলেন, “পরীক্ষণ বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে ব্যবহৃত একটি বিশুদ্ধ পদ্ধতি যার দ্বারা উপাদানগুলোকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যায় এবং পর্যবেক্ষণকৃত ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।”
Festinger (1953) বলেন, “পরীক্ষণ হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্ভরশীল চলকের উপর স্বাধীন চলকের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা।”
Kenneth D. Baily (P-222) বলেছেন, “আমরা বলতে পারি যে, পরীক্ষণ হচ্ছে এক বা একাধিক নির্ভরশীল চলক এবং এক বা একাধিক অনির্ভরশীল চলকের মধ্যে বিদ্যমান কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের একটি নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি ।” Moser and Kalton এর মতে, “পরীক্ষণের ধারণা কিছুটা পরিবর্তনশীল । কিন্তু এটাকে ব্যাপক বা সংকীর্ণ যে অর্থেই ব্যবহার করা হোক না কেন এটা মূলত পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত ।” বিমল শাহ্ এর মতে, “পরীক্ষণ শব্দটি গবেষণার ঐ অংশটির পরিচয় বহন করে যেখানে কিছু চলক নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় । অন্যান্য চলক উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিচালনা করে ঐগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ চলকের উপর পর্যবেক্ষণ করা হয় ।”
সুতরাং বলা যায়, পরীক্ষণ হলো প্রমাণাদি সংগ্রহের অন্যতম সুসংবদ্ধ উপায় যার মাধ্যমে প্রকল্প যাচাই এবং তত্ত্বব গঠন করা হয় ।
পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা : পরীক্ষণ পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। প্রকৃতি বিজ্ঞানের গবেষণায় এবং উন্নয়নে পরীক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা উপস্থাপন করা হলো :
১. নিয়ন্ত্রণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হয়। এর ফলাফলে কোন অবাস্তব ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় না। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলকের অধ্যয়ন করা হয় এবং এ অধ্যয়নের মাধ্যমেই চলকসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয় ।
২. কার্যকরণ সম্পর্ক নির্ধারণ : স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলকের যে কার্যকরণ সম্পর্ক রয়েছে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য দুটি চলকের পারস্পরিক প্রভাব পরিমাপ করার জন্য কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ধারণ করা পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান কাজ । কম সময়ে গবেষণা কাজ সম্পন্ন করা যায় ।
৩. গ্রহণযোগ্য : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ফলাফল অধিক গ্রহণযোগ্য ও নির্ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফলে
৪. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : পরীক্ষণ পদ্ধতি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সফলভাবে পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে যে কোনো গবেষণা ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. তত্ত্ব গঠন : পরীক্ষণ পদ্ধতি নতুন তত্ত্ব গঠন এবং প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে যাচাই করা এবং বিভিন্ন পন্থার মাধ্যমে এ পদ্ধতি তত্ত্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।
৬. কম সময় ও স্বল্প ব্যয় : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হলো এ গবেষণা ছোট আকারে পরিচালনা করা হয়। তাই গবেষণার জন্য স্বল্প লোকবল, তুলনামূলক কম সময় ও কম গবেষণা হয় । তাই পরীক্ষণ পদ্ধতিতে কম সময় ও স্বপ্ন।
৭. গবেষকের উপস্থিতি : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে গবেষণার ক্ষেত্রে মূলত গবেষকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। এর ফলে গবেষণায় ভুল ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।
৮. পুনরাবৃত্তি : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো ঘটনার পুনরাবৃত্তি । এই পদ্ধতির মাধ্যমে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব হয় । পরীক্ষণের বারবার ভিন্ন ভিন্ন দল ও বিষয়ের উপর পুনঃপ্রয়োগ করা হয় । এর ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
৯. অধিক নির্ভরশীল পদ্ধতি : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নিয়মকানুন যথাযথভাবে পালন করে গবেষণা
কার্যসম্পাদন করা হয় বিধায় এ পদ্ধতি অধিক নির্ভরশীল পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
১০. সঠিক ফলাফল : সামাজিক গবেষণা ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পরীক্ষণ পদ্ধতি সফল ও সার্বিকভাবে ব্যবহার করলে, নির্ভুল ফলাফল লাভ করা সম্ভব হয়। পরীক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কম সময় ও স্বল্প সময়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব । উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, পরীক্ষণ পদ্ধতির বহুমুখী সুবিধা বিদ্যমান। যে কোন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় পরীক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । এ পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে গবেষণা কার্যে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না ।
পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা : নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো উপস্থাপন করা হলো :
১. কৃত্রিম পরিবেশ : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে গবেষকগণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে গবেষণা কার্যসম্পাদন করে থাকেন। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়ে চলক ব্যবহার করা হয়। এসব চলক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই কৃত্রিমতার কাণে গবেষণার ফলাফলে ভুলভ্রান্তি থাকে ।
২. গবেষণাগারে পরীক্ষণ ত্রুটি : সামাজিক অনেক বিষয় আছে যেগুলো গবেষণাগারে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এ সকল বিষয় সামাজিকভাবে একটির সাথে অপরটি পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত । তাই সামাজিক বিষয়গুলো পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা সকলক্ষেত্রে সম্ভব হয় না ।
৩. গবেষকের প্রভাব : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো গবেষকের প্রভাব। গবেষক গবেষণা ক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করে বিধায় ফলাফলে গবেষকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। ফলে গবেষক দ্বারা গবেষণার ফলাফল নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
৪. দক্ষ গবেষকের স্বল্পতা : পরীক্ষণ পদ্ধতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষক । কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ গবেষকের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়।
৫. নমুনার আকারে : মূলত ছোট আকারের গবেষণার ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় । কিন্তু নমুনার আকার বড় হলে পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যর্থ হয়।
৬. গবেষণায় ত্রুটি : পরীক্ষণে মূলত একাধিক পরীক্ষণ দলের অবস্থান থাকে। এসব দল বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রধান গবেষক এসব তথ্যের ভিত্তিতে ফলাফলে পৌঁছান। কিন্তু তথ্যে যদি ভুল থাকে তবে গবেষণার ফলাফলে ত্রুটি দেখা দেয় ।
৭. নিয়ন্ত্রণের অভাব : পরীক্ষণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত বিষয় অপরিহার্য। কিন্তু সামাজিক পরিস্থিতির যে জটিলতা লক্ষ করা যায় তার উপর নিয়ন্ত্রণ করা গবেষকের সম্ভব হয় না। কারণ এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রভাব বিদ্যমান থাকে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
৮. অসহযোগিতা : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে উত্তরদাতারা অনেকক্ষেত্রে তেমন সহযোগিতা করে না উত্তর গ্রহণকারীকে। উত্তরদাতারা বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী মতামত ব্যক্ত করেন । এর ফলে গবেষক নিরপেক্ষ কাজ করতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, পরীক্ষণ পদ্ধতির যেমন বহুমুখী সুবিধা রয়েছে তেমনি বিভিন্ন অসুবিধাও রয়েছে । পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগের যেসব অনিশ্চয়তা সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় তার ফলে এ পদ্ধতির বৈধতা গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয় ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*