সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণের সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

অথবা, পর্যবেক্ষণের সংজ্ঞা দাও। পর্যবেক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা,পর্যবেক্ষণ কাকে বলে? পর্যবেক্ষণের প্রকৃতিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণের সংজ্ঞা লেখ। পর্যবেক্ষণের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণ হচ্ছে উপাত্ত সংগ্রহের নিয়মতান্ত্রিক, নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি । সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ হচ্ছে কোনো বিষয়বস্তু বা ঘটনাকে অবলোকন করা বা দেখা । কিন্তু বৈজ্ঞানিক অর্থে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু বা ঘটনাকে সুশৃঙ্খলভাবে অবলোকন করা বা দেখা এবং লিপিবদ্ধ করাই (Record) হচ্ছে পর্যবেক্ষণ ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সমাজ গবেষকগণ পর্যবেক্ষণকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কতিপয় উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
বিশিষ্ট সমাজ গবেষক পি. ভি. ইয়ং (P. V. Young) এর মতে, “Observation may be defined as systematic viewing, coupled with consideration of the seen phenomena.” অর্থাৎ, দৃশ্যমান প্রপঞ্চকে সুশৃঙ্খলভাবে দেখাকেই পর্যবেক্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে । মোজার এবং কালটন (Moser and Kalton) পর্যবেক্ষণের সংজ্ঞা দিতে যেয়ে ‘The Concise Oxford Dictionary’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “It is an accurate watching and noting of phenomena as they occur in nature with regard to cause and effect or mutual relations.” অর্থাৎ, পারস্পরিক সম্পর্ক ও কার্যকরণ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রকৃতিতে সংঘটিত ঘটনাবলি সঠিকভাবে দর্শন এবং লিপিবদ্ধ করাই হচ্ছে পর্যবেক্ষণ । বার্নার্ড এস. ফিলিপ্‌স (Bernard S. Phillips) এর মতে, “Observational methods of data collection are techniques for gathering information without direct questioning on the part of the investigator.” অর্থাৎ, উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি কৌশল, যাতে অনুসন্ধানকারীকে সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করে কেবল চাক্ষুষ দেখে তথ্য (Information) সংগ্রহ করা হয় । কেনেথ ডি. বেইলি (Kenneth d. Bailey) বলেছেন, “The observational method is the primary technique for collecting data on non-verbal behaviour.” অর্থাৎ, অমৌখিক আচরণের প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের কৌশলকে পর্যবেক্ষণ বলা হয়।
পর্যবেক্ষণ এর বৈশিষ্ট্যগুলো : সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল হিসেবে পর্যবেক্ষণের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সে বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. চাক্ষুষ ঘটনা : পর্যবেক্ষণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তু বা ঘটনাকে কাছ থেকে বা দূর থেকে সতর্কতার সাথে চাক্ষুষভাবে দেখা হয়। এক্ষেত্রে কেবল শুনে কোন ঘটনা বা বিষয়কে অবলোকন করা হয় না। Moser and Kalton এর ভাষায়, “In the strict sense, observation implies the use of eyes rather than of ears and voice.”
২. সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য : পর্যবেক্ষণ হলো উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে।
৩. পরিকল্পনা : যথাযথ পরিকল্পনা অনুসরণ করে পর্যবেক্ষণ পরিচালিত হয়। প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরণের জন্য কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি (Equipment) প্রয়োজন হবে তা পূর্ব থেকেই গবেষককে সিদ্ধান্ত নিতে হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন একটি সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্যামেরার দরকার । এটি গবেষককেপূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ।
৪. পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়াদি লিপিবদ্ধকরণ : পর্যবেক্ষণকৃত সবকিছু মনে রাখা একজন গবেষকের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন কাজ । তাই পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য (Information) তাৎক্ষণিকভাবে (immediately) লিপিবদ্ধ করা উচিত । এতে উপাত্তের সঠিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা (Validity) বৃদ্ধি পায় ।
৫. সরাসরি অধ্যয়ন : পর্যবেক্ষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটি একটি সরাসরি অধ্যয়ন পদ্ধতি । এক্ষেত্রে গবেষক ব্যক্তিগতভাবে মাঠে উপস্থিত হয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ স্বচোক্ষে পর্যবেক্ষণ করেন। এভাবে পর্যবেক্ষিত বস্তু এবং চোখের মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া (Interaction) ঘটে থাকে । ফলে বাস্তব উপাত্ত লিপিবদ্ধ (Record) করা যায় ।
৬. প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ : পর্যবেক্ষণ এমন একটি কৌশল যেটি কেবল প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে। কেননা এক্ষেত্রে প্রত্যেক গবেষক মাঠ পর্যায় থেকে গবেষণার সাথে সম্পর্কিত প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে।
৭. সরাসরি কার্যকারণ সম্পর্ক : পর্যবেক্ষণ কৌশলের সাহায্যে কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণ নয়, বরং আচরণের সামাজিক পটভূমি এবং ক্ষেত্রবিশেষে কার্যকারণ সম্পর্ক সরাসরি জানা সম্ভব হয় ।
৮. যথার্থ ও বিশুদ্ধ উপাত্ত : পর্যবেক্ষণ কৌশলের ক্ষেত্রে গবেষক সামাজিক ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত না করে অর্থাৎ মুক্ত পরিবেশে স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কার্যকলাপ হুবহু অবলোকন করে থাকে। ফলে এ কৌশলের সাহায্যে সমাজ সম্পর্কিত যথার্থ বিশুদ্ধ ও অবিষ্কৃত উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পর্যবেক্ষণ কৌশলের উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ দ্যমান থাকায় এ কৌশলের সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্তসমূহের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিকাশে পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*