সামাজিক গবেষণাকে সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার বলা হয় কেন?

কঅথবা, কোন সামাজিক গবেষণাকে সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার বলা হয়?
অথবা, সামাজিক গবেষণা কি সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার? তোমার স্বপক্ষে উত্তর দাও।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
বিজ্ঞান বাস্তব, উদ্দেশ্যমূলক, যুক্তিভিত্তিক এবং সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান । মানবিক কল্যাণে সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছতেই বিজ্ঞানের আবির্ভাব, যার গতিশীল প্রক্রিয়ায় মানব জন্ম ধন্য । বিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো,প্রাকৃতিক ও সামাজিক অবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা । এ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় যে প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে আছে সেটি হলো গবেষণা। আর গবেষণা হলো সত্যানুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এ সত্যানুসন্ধানেরই একটি পথিকৃত হলো সামাজিক গবেষণা।
সামাজিক গবেষণা কিভাবে সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার : সামাজিক গবেষণা নিম্নোক্ত কারণে সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে । যেমন-
১. পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ : সামাজিক গবেষণা যে কোনো সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করে একটি সুনির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে আনতে চেষ্টা করে । যেমন- সামাজিক গবেষণা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা, অস্বাভাবিক গতি, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণকে উদ্ঘাটন করে এর পরিণামস্বরূপ বহুলোকের প্রাণহানীকে নির্দেশ করে ।
২. সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার : সামাজিক গবেষণার দ্বারা যে কোন সমস্যার কারণগুলো সুষ্ঠুভাবে জানা যায় এবং কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে সমস্যার সমাধান দেওয়া যায়, যা সমস্যা বিশ্লেষণে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। যেমন- জনসংখ্যা’ সমস্যাটি সম্পর্কে গবেষণা করলে এর কয়েকটি কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। যথা : অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পরিবেশ, সংযমের অভাব ইত্যাদি। এ কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে উক্ত জনসংখ্যা সমস্যাটির একটাসমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া যায় ।
৩. সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় : সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ছাড়া সমস্যার কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। একমাত্র সামাজিক গবেষণার বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সুচিন্তিত ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার জটিল প্রকৃতি, কার্যকারণ সম্পর্ক ও সমাজ জীবনে তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বিচার-বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় ।
৪. দলীয় প্রচেষ্টা : সামাজিক গবেষণা একটি দলীয় প্রচেষ্টা। তাই বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দল সামাজিক সমস্যা বিচার-বিশ্লেষণ ও কারণ উৎঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
৫. সমস্যার ব্যাপ্তি ও ব্যাপকতা সম্পর্কে জানা যায় : সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিভিন্ন দিক এবং সমস্যার ব্যাপ্তি ও ব্যাপকতা সম্পর্কে জানা যায়। যেমন- ‘পতিতাবৃত্তি’ সম্পর্কে গবেষণা করে আমরা জানতে পারি যে, এর ফলে যুবসমাজের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস হচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং বর্তমানকালের চরম ঘাতক ব্যাধি এইডস এর জন্ম হচ্ছে ইত্যাদি ।
৬. পূর্বোক্তিকরণ ও সতর্কীকরণ : সামাজিক গবেষণা কোনো সমস্যার পূর্বোক্তিকরণ, সতর্কীকরণ এবং তার সমাধান পরিকল্পনা প্রণয়নে সুস্পষ্ট ও সঠিক দিক নির্দেশনা দান করে। এভাবে কোনো সামাজিক সমস্যার সঠিক ও সুদূরপ্রসারী বিশ্লেষণে সামাজিক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৭. পর্যবেক্ষণশীল, বাস্তবভিত্তিক ও তথ্যনির্ভর : বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক সমস্যার
পশ্চাতে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অতিপ্রাকৃত ধারণা ইত্যাদি ক্রিয়াশীল । তাই সামাজিক গবেষণা এসব সমস্যার পশ্চাতে
দায়ী কারণগুলোকে সাক্ষাৎকার, পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও জরিপ প্রভৃতির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণশীল, বাস্তবভিত্তিক ও তথ্যনির্ভর
উপায়ে উপস্থাপিত করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবভিত্তিক অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন তথা সামাজিক সমস্যার কারণ প্রভৃতি সমাজে এর প্রভাব সম্পর্কে সামাজিক গবেষণা সঠিক, নিরপেক্ষ ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রদান করে সমস্যাকে স্পষ্ট করে তোলে ও সমাধানের পথ নির্দেশ করে। থাকে । এজন্য বলা হয় যে, সামাজিক গবেষণা সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ারস্বরূপ ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*