শ্রেণিবদ্ধকরণের সংজ্ঞা দাও? শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রকারভেদ আলোচনা কর ।

অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণ কাকে বলে? শ্রেণিবদ্ধকরণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণ বলতে কী বুঝ? শ্রেণিবদ্ধকরণের ভিত্তি বিশ্লেষণ কর।
অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণ কী? এর ধরনসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। শ্রেণিবদ্ধকরণ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে সংগৃহীত উপাত্তগুলো এলোমেলো অবস্থায় থাকে। এলোমেলো উপাত্তগুলোকে গবেষণার
কাজে ব্যবহার করা যায় না। শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে উপাত্তগুলোকে সাজিয়ে প্রকাশ করা যায় । উপাত্তের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতির ভিন্নতার কারণে একই প্রকার শ্রেণিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না ।
শ্রেণিবদ্ধকরণ : প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত উপাত্তসমূহ বিছিন্ন অবস্থায় থাকে । সংগ্রহের পর বিছিন্ন উপাত্তসমূহকে শ্রেণিবদ্ধ করতে হয় । নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অনুসন্ধান ক্ষেত্র হতে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় । সংগৃহীত উপাত্ত বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে এবং আকারে বড় হয়। সংগৃহীত উপাত্তসমূহকে উদ্দেশ্যানুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যাসের প্রয়োজন হয় । উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপাত্তসমূহকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিতে বিভক্ত করাকে উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণ বলে । শ্রেণিকরণ বা শ্রেণিবদ্ধকরণ অবিন্যস্ত তথ্যের উপস্থাপন করার প্রথম প্রক্রিয়া। সাধারণত যে কোনো অনুসন্ধানের সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া একই বৈশিষ্ট্যের উপর সংগৃহীত ভিন্ন ভিন্ন মানের মধ্যেও তারতম্য বা পার্থক্য দেখা যায় । এরূপ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বা একই বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন মানের তারতম্য বা পার্থক্য পৃথকীকরণের দ্বারা চরিত্রকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তথ্যকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বা বিভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করাকেই শ্রেণিকরণ বলা হয়। শ্রেণিকরণের মাধ্যমে তথ্যাদিকে এমনভাবে শ্রেণি বা ভাগ করা হয় যার ফলে একই শ্রেণির মধ্যে শ্রেণিকৃত বৈশিষ্ট্য বা মানসমূহ মোটামুটি ফুটে উঠে। শ্রেণিকরণে শ্রেণির সংখ্যা, শ্রেণির ভিত্তি ইত্যাদি মূলত তথ্যের প্রকৃতির উপরই নির্ভর করে। তাছাড়া শ্রেণিগুলো পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র হওয়া উচিত এবং তথ্যে গৃহীত প্রত্যেকটি মান যে কোনো একটি শ্রেণিতে শ্রেণিবদ্ধ হতে হবে। প্রতিটি মান একবারের অধিক শ্রেণিবদ্ধ হওয়া
কোনো প্রকারেই বাঞ্ছনীয় নয়। সুতরাং দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের তথ্যাদিকে যুক্তিসংগত উপায়ে উপস্থাপন করে এদের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের বা গুণাগুণের দ্বারা তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করাই শ্রেণিকরণের প্রধান উদ্দেশ্য । শ্রেণিবদ্ধকরণের ভিত্তি বা ভিত্তি অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রকারভেদ : প্রাপ্ত উপাত্তের
শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রক্রিয়া বেশ কঠিন। কারণ, সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয় না। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া অনেক সময় প্রাপ্ত উপাত্তের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। যেমন- ১. সময়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, ২.স্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, ৩. গুণভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ও ৪. সংখ্যাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ।
১. সময়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : উপাত্ত সংগ্রহের সময়ের উপর ভিত্তি করে উপাত্তকে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হলে তাকে সময়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ বলে। ঘটনা সংঘটনের সময়কে অনেক সময় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের শ্রেণিবদ্ধকরণে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে উপাত্তসমূহকে বিন্যস্ত করা হয়। সাধারণত ১ বছর সময় ব্যবধানে এক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয় । উদাহরণস্বরূপ, ৭ বছরে শিশু মৃত্যুও সংখ্যা প্রদর্শন করে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা যেতে পারে । আবার ৫ বছরে দুর্ঘটনায় মৃত্যুও সংখ্যা শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে । সময়ভিত্তিক একটি শ্রেণিবিভাগ নিম্নে দেওয়া হলো

এ ধরনের শ্রেণিবিভাগে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনার মধ্যে তুলনা করা যায়। এ ধরনের শ্রেণিবদ্ধ সারণিকে কালীন সারি বলে ।

১. স্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : গবেষণার কার্য অনেক সময় ভৌগোলিক অবস্থানকে ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপাত্তসমূহের শ্রেণিবিভাগ করা হলে তাকে ভৌগোলিক অবস্থানভিত্তিক বা স্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ বলে । যেমন- আদমশুমারির সময় বিভাগ, জেলা, থানা, গ্রাম এভাবে ভৌগোলিক অবস্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করা হয় । নিম্নে স্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগের একটি উদাহরণ দেয়া হলো :

এক্ষেত্রে স্থানভিত্তিক শ্রেণিবিভাগে নির্দিষ্ট সময়ে কয়েকটি দেশের জনসংখ্যাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়কে ব্যবহার নাও করা হতে পারে ।
২. গুণভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : বিশেষ কোনো গুণের ভিত্তিকে উপাত্ত শ্রেণিবদ্ধ করাকে গুণভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ বলে। সবসময় উপাত্তকে সংখ্যায় প্রকাশ সম্ভব নয়। এমন কিছু প্রপঞ্চ আছে যেগুলো গুণের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। কারণ অনেক সময় সংখ্যার মাধ্যমে এগুলো প্রকাশ করা যায় না।
৩. সংখ্যাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ : উপাত্তকে সংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা হলে তাকে সংখ্যাভিত্তিক বা সংখ্যাত্মক শ্রেণিবিভাগ বলে। এক্ষেত্রে সংখ্যাসমূহ বিন্যাসের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নাই। যেমন- একটি শহরে বিভিন্ন বয়সের জনগণ থাকতে পারে । একটা বয়সসীমা পর্যন্ত কতজন লোক শহরে বাস করে এভাবে দেখানো যেতে পারে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংগৃহীত উপাত্তের উপর্যুক্ত প্রকারভেদগুলো সমাজবিজ্ঞানের গবেষকদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সংগৃহীত উপাত্তকে, তাদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যাস করে অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে গবেষণা কর্মকে সম্পাদন করা যায় ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*