লালন শাহ কে ছিলেন?

অথবা, বাউল সম্প্রদায়ের প্রকৃতি প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, লালন শাহের পরিচয় দাও।
অথবা, বাউল দর্শনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে লালন শাহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, বাউল দর্শনের প্রেক্ষাপটে লালন শাহ সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
লালনশাহ বাংলার লোকদর্শনের প্রাণপুরুষ
মধ্যযুগের বাঙালির ভাবান্দোলনের মহানায়ক। মধ্যযুগের বাংলায় বিকশিত যেসব ধর্মীয় ও দার্শনিক ভাবধারা এদেশের মানুষের জীবনাদর্শে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল তন্মধ্যে লালনশাহ প্রচারিত বাউলবাদ ছিল অন্যতম প্রধান। লালন শাহ সাধারণভাবে বাউল সম্রাট হিসেবেই আমাদের নিকট অতি পরিচিত। বাউলধর্ম বা দর্শন বলতে আমরা লালনকেই বুঝি। ঊনিশ শতকে লালন শাহের সাধনা ও গানের মধ্য দিয়েই বাংলায় বাউল মতাদর্শ পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে। এক কথায় লালন শুধু বাউল দর্শনই নয়, বরং তিনি ছিলেন বাঙালি দর্শনের প্রতিভূ পুরুষ।
লালন শাহ : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে লালন শাহ ফকির নামেই পরিচিত। বাউল পদাবলী সাহিত্যে লালন শাহের সৃষ্টি সর্বশ্রেষ্ঠ। লালন শাহের জীবন সম্পর্কে সঠিক তথ্য ইতিহাসে না থাকায় কিংবা তিনি নিজেও জাত- ধর্ম-বর্ণ সম্পর্কে সঠিক পরিচয় না দেয়ায় তাঁর পরিচয় সম্পর্কে পণ্ডিতগণের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেউ বলেন তিনি হিন্দু আবার কেউবা তাঁকে মুসলিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফকির লালনের জন্মস্থান নিয়েও বিভ্রাট আছে। তাঁর জন্মস্থান হিসেবে সিলেট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ প্রভৃতি অঞ্চলের নাম এসেছে। তবে লালনের প্রথম জীবনীকার বসন্ত কুমার পাল একটা বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট জানিয়েছেন। ১৩৩২ বঙ্গাব্দে বসন্ত কুমার পাল ‘হিতকরী’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলেন লালন ফকির কায়স্থ কুলের পদ্মাবতীর সন্তান। লালনের গান থেকে জানা যায়, তিনি এতিম ছিলেন। তাঁর জন্মের পূর্বে পিতা এবং জন্মের অল্পদিন পরে মা মারা যায়। ফলে শিশুকালে তিনি অসহায় অবস্থায় সিরাজ শাহের আশ্রয় লাভ করেন। অনেক গবেষক মনে করেন, তিনি জাতিতে মুসলিম ছিলেন। তাঁর পিতার নাম দরিবুলাহ দেওয়ান, মা আমেনা খাতুন এবং গোলাম কাদের ছিল তাঁর দাদার নাম। যতটুকু জানা যায় লালন শাহের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানার হরিশপুর গ্রামে। তবে তিনি নিকটবর্তী কুষ্টিয়া জেলার ছেউরিয়ায় আস্তানা নির্মাণ করেন। এছাড়া জানা যায় তিনি বাউল সাধনায় সিদ্ধি লাভের পর ঘোড়ায় চড়ে দেশ বিদেশে ধর্ম প্রচার করে বেড়িয়েছেন। লালন শাহের জন্ম ১৭৭২ সালে এবং মৃত্যু ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর। তাঁর গানগুলোর মধ্যে চমৎকার দর্শনচেতনা ও অধ্যাত্মচেতনার পরিচয় ফুটে উঠে। যেমন-
ক. খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।
ধরতে পারলে মন-বেড়ি দিতাম পাখির পায়৷
খ.এই মানুষে সেই মানুষ আছে
আমার হইল কি ভ্রান্তি মন
আমি বাইরে খুঁজি ঘরের ধন।
উপসংহার : পরিশেষে লালরশাহের গানগুলো থেকে বুঝা যায় তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কাছে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ আসত এবং দীক্ষা নিত। সাধনার গূঢ়তত্ত্ব প্রকাশে তিনি যুগপৎ হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের শব্দাদি ব্যবহার করেছেন। তাঁর দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সীমার মধ্যে অসীমের যাওয়া আসা বিষয়ে জ্ঞান লাভের সাধনা। সেই অধর ধরাকে নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা লালনের প্রায় সব গানেই ফুটে উঠেছে। লালন শাহ তাঁর অগনিত ভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে বহুকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর চিন্তা ও দর্শনের জন্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-2/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*