“মাঝে মাঝে গেছি আমি ওপাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে, ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল একেবারে।” কবি ‘ওপাড়া’ বলতে কোন পাড়াকে বুঝিয়েছেন এবং কবি সেখানে প্রবেশ করেননি কেন?

উত্তর : আলোচ্য পঙক্তিদ্বয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে। কবি ‘ও পাড়া’ বলতে সর্বসাধারণের পাড়া কিংবা ব্রাত্য মানুষের পাড়াকে বুঝিয়েছেন। মাঝেমধ্যে কবি ব্রাত্য মানুষের পাড়ায় ক্ষণিকের জন্য উঁকি দিয়েছেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগসূত্র রচনা সম্ভব হয়নি। সাধারণের মধ্যে প্রবেশের অক্ষমতা প্রকাশার্থে চরণ দুটি রচিত হয়েছে। জীবন সায়াহ্নে কবি তাঁর সাহিত্যের অপূর্ণতার কথা ব্যক্ত করেছেন। জীবন সংক্ষিপ্ত ও সীমিত। এ সীমিত বাতাবরণে সকল
শ্রেণির মানুষের হৃদয় জয় করা কঠিন। তারপরও হৃদয়ে হৃদয় মিশালে তার সন্ধান মেলে। কিন্তু সীমাবদ্ধ জ্ঞানে সকল মানুষকে জানা যেমন সম্ভব নয় তেমনি ভৌগোলিকতার কারণে সর্বত্র প্রবেশ করাও কঠিন। কবি সর্বত্র প্রবেশের দ্বার খুঁজে পাননি। কারণ চাষি হাল চাষ করে, জেলে জাল ফেলে ও তাঁতী বোনে তাঁত। এদের বিচিত্র কর্মক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে চলছে এ মানব সংসার। কিন্তু কবি তাঁর নিজের অবস্থান জানেন। কবি নিজেকে বিশ্বায়ত পৃথিবীর এক কোণে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সমাজের উচ্চমার্গে অবস্থানের কারণে, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন কথা তাঁর সাহিত্যে উপজীব্য করেননি। এটা কবির দৃষ্টিতে তাঁর সাহিত্য ও সংগীত কলার বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা। এটা তাঁর দুর্বলতা বটে। কবি যদি তাঁর এ সীমাবদ্ধতাটুকু অতিক্রমণ করতে পারতেন, তাহলে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির পূর্ণতা দাবি করতে পারতেন। পরিশেষে বলা যায় যে, সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার শক্তি অর্জনে অক্ষম ছিলেন কবি-যা আলোচ্য উক্তিতে তাঁর সরল-স্বীকারোক্তি।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*