বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ কী কী?

অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহের নাম লিখ।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানগুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বিজ্ঞান একটি বিমূর্ত ধারণা । কেউ বলেন বিজ্ঞান হলো সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান, কারো মতে বিজ্ঞান হলো জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া, আবার কেউ কেউ বলেন এটি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান । বিজ্ঞানী যে পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষণা কার্যক্রম চালনা করেন । তাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মূলত, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই বিজ্ঞানের ভিত্তি ।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানগুলো হলো নিম্নরূপ : ১. ঘটনা (Fact), ২. প্রত্যয় (Concept), ৩. চলক (Variable), 8. অনুমান (Hypothesis), ৫. অনুকল্প (Assumption), ৬. তত্ত্ব (Theory) । নিম্নে উপাদানগুলো তুলে ধরা হলো :
১. ঘটনা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি । ঘটনা দিয়েই তত্ত্বের শুরু এবং ঘটনা দিয়েই শেষ হয় । কারণের দ্বারা সৃষ্ট কোন কার্য বা অবস্থাই হলো ঘটনা । ঘটনা হচ্ছে দুটি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে একটি বিবৃতি । যেমন- “ধূমপায়ীদের মধ্যে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি।” এটি একটি ঘটনা। একটি ঘটনার মধ্যে দুই বা ততোধিক বিষয় বা উপাদানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান থাকে । এসব বিষয় বা উপাদান হলো প্রত্যয় ।
২. প্রত্যয় : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো প্রত্যয় । তত্ত্ব বা ঘটনার উপর অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্তকরণের উপর ভিত্তি করে প্রত্যয় গড়ে উঠে। প্রত্যয় অনুমান, অনুকল্প এবং তত্ত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । প্রত্যয়ের মাধ্যমে এগুলো তুলে ধরা হয় । যেমন— “ধূমপায়ীদের মধ্যে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি।”
৩. চলক : চলক হলো ঐ প্রত্যয়ের বৈশিষ্ট্য যা সরাসরি পরিমাপ করা যায়। ঘটনা বিশ্লেষণে, অনুকল্প পরীক্ষণে গবেষককে তথ্যসংগ্রহ করতে হয়। ঘটনা ঘটে গেলে তা আর ঘটনা থাকে না। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তার অস্তিত্ব চলে যায় মানুষের স্মৃতিতে, কাগজের লিখনে, কিংবা অন্যকোন উপায়ে ধারণকৃত অবস্থায় ।
৪. অনুমান : অনুমান হলো দুটি প্রত্যয়ের মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে বিবৃতি যা নির্দিষ্ট গবেষণায় সত্য বলে ধরে নেয়া হয় । যেমন— “ধূমপায়ীদের মধ্যে ক্যান্সারের মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় বেশি।” এ ঘটনার প্রত্যয় ও চলকের সমন্বয়ে গবেষকদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করলে একটি অনুমান গঠিত হয়। যেমন- অনুমানটি হলো, “ধূমপায়ীদের সাথে ক্যান্সারের মৃত্যুহারের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।” অনুমান গবেষককে অনুকল্প গঠনে তার সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে তত্ত্ব গঠনে সহায়তা করে । তবে গবেষকদের সর্বদাই যৌক্তিকতা ও নিরপেক্ষ অনুমান গঠন করতে হয়।
৫. অনুকল্প : অনুসন্ধান কাজে গবেষকে কি করতে হবে তা অনুকল্প বলে দেয়। ঘটনা, প্রত্যয়, চলকগত উপস্থাপন এবং অনুমান গবেষকে অনুকল্প গঠনে প্রবৃত্ত করে। অনুকল্প এক ধরনের অনুমান। তবে পার্থক্য হলো অনুমান প্রমাণসাপেক্ষ নয়। অর্থাৎ, অনুমান সত্য বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু অনুকল্প প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। “ধূমপানই সম্ভবত,
ক্যান্সারে অধিক মৃত্যুহারের জন্য দায়ী” সমাধানের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের সন্ধানে উপস্থিত সমস্যার একটি প্রাথমিক বা অস্থায়ী সমাধানই হলো অনুকল্প । অনুকল্প ঘটনা গঠনে সহায়তা করে।
৬. তত্ত্ব : অনুকল্পে প্রস্তাবিত কার্যকারণ সম্পর্কটি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাস্তব সত্য বলে প্রমাণিত হলে গবেষক তা সত্য বলে ধরে নেয় এবং তত্ত্ব আকারে প্রচার করেন। তত্ত্ব হলো দুটি প্রত্যয়ের মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে সাধারণ বিবৃতি । তত্ত্ব | বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চালিকাশক্তি এবং উদ্দেশ্যও বটে। তত্ত্ব মানবচিন্তার কেন? কিভাবে? কোথায়? কি? কে? ইত্যাদি প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে। আমাদের আলোচ্য উদাহরণ তত্ত্ব হবে, “ধূমপানই অধিক ক্যান্সারে অধিক মৃত্যুহারের জন্য দায়ী ।”
উপসংহার : আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ পরস্পর নির্ভরশীল, পর্যায়ক্রমিক এবং চাক্রিক শৃঙ্খলের সূত্রে সম্পর্কিত । এর কোন একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না । ঘটনা, প্রত্যয়, চলক, অনুমান, অনুকল্প ও তত্ত্বের সম্মিলিত কার্যক্রমই একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*