বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন কী?

অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন বলতে কী বুঝ?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন কাকে বলে?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন বলতে কী বুঝায়?
অথবা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর।। ভূমিকা :
উনিশ শতক পৃথিবীর ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সময়। এ সময়ে পাশ্চাত্যে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। মানুষ মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে মানবতাবাদ, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা,যুক্তিবাদিতা, উদারতাবাদ প্রভৃতি বিস্তার লাভ করে। পাশ্চাত্যের এ উৎকর্ষতার প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশও প্রভাবিত হয়। ঢাকাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামক একটি প্রগতিশীল সংগঠন। এ সংগঠনই বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন : পাশ্চাত্যের প্রভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার জন্য বিশ শতকের শুরুর দিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানটি। এ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হোসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুল কাদির প্রমুখ জ্ঞানতাপস। এদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। বুদ্ধির মুক্তি বলতে বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটানোকে বুঝায়। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে মুসলিম সাহিত্য সমাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এ সংগঠনটি মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে প্রশস্ত করে দেয়। ১৯২৬ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ সংগঠনটির সদস্যরা বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে উদারনৈতিক চিন্তাধারার মাধ্যমে বাঙালি মুসলমান সমাজ উন্নয়নে ব্যাপকভাবে চেষ্টা করে তাদের ভাবজগতের বা জ্ঞান জগতের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে। মুসলিম সাহিত্য সমাজের ‘শিখা’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা ছিল, যেটি এ সংগঠনটির দুৎপাত্র হিসেবে কাজ করতো এবং বছরে একবার প্রকাশিত হতো। এটি একদিকে যেমন সাহিত্য সমৃদ্ধ ছিল, অপরদিকে সেটা ছিল দার্শনিক চিন্তা ভাবনায় পরিপূর্ণ। এ পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যার শিরোনামের নিচে লেখা থাকতো “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব”। এ পত্রিকায় বিভিন্ন খ্যাতনামা সাহিত্যিকের লেখা বের হতো এবং যারা এ পত্রিকায় লিখতেন তাদেরকে ‘শিখা গোষ্ঠী’ নামে অভিহিত করা হতো।
সুতরাং বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলন সম্পর্কে বলা যায় যে, শিখা গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের” ছত্রছায়ায় মুক্তবুদ্ধি চর্চার লক্ষে যে প্রগতিশীল দার্শনিক আন্দোলন গড়ে তোলেন তাই বাংলাদেশ দর্শনে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন নামে পরিচিত।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন মূলত বাঙালি বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম সমাজের উন্নয়নে গড়ে উঠে, যার মূল লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্যের মতো এদেশেও জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধন করা। এ লক্ষে তারা মুক্তিবাদী, উদারতাবাদী, মানবতাবাদী দর্শন ও সাহিত্য রচনা করেছেন। বাঙালি দর্শনের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী আন্দোলন হিসেবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b6-%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%ac%e0%a6%bf/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*