বিস্তার কেন পরিমাপ করা হয়?

অথবা, বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
অথবা, বিস্তার পরিমাপের তাৎপর্য তুলে ধর।
অথবা, বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গড়, মধ্যমা ও প্রচুরকের সাহায্যে গণসংখ্যা নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান পরিমাপ করা যায় । কিন্তু কেন্দ্রীয় মান থেকে তথ্যসারির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সংখ্যার ব্যবধান নির্ণয় করা যায় না। বিস্তার পরিমাপের সাহায্যে তথ্যসারির প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান জানা যায়। সামাজিক পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পাশাপাশি বিস্তার পরিমাপও ব্যাপক গুরুত্ববহ । বিস্তার পরিমাপের সাহায্যে তথ্যসারির প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান জানা যায়।
বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা: বিস্তার পরিমাপের সাহায্যে কেন্দ্রীয় মান বা গড় হতে তথ্যের মানগুলোর দূরত্ব বা পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। এর ফলে নিবেশনের গড় মানের চতুর্দিকে অন্যান্য মানগুলোর অবস্থান কিরূপ তা বুঝা যায় এবং দু বা ততোধিক নিবেশনের বিস্তৃতি পরিমাপের মাধ্যমে তাদের মধ্যে তুলনা করতে বিস্তার পরিমাপ অত্যাবশ্যক। নিম্নে বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো :
i. বিস্তার পরিমাপের মাধ্যমে কোন তথ্যসারির মানগুলোর সামঞ্জস্যতা পরিমাপ করা যায়। যে তথ্যসারির বিস্তার যত বেশি তার মানগুলোর পারস্পরিক দূরত্বও তত বেশি অর্থাৎ তত বেশি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন- কোন একটি কোম্পানির একশত টাকা মূল্যমানের শেয়ারের মূল্য পর পর ২০ দিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল মূল্যগুলোর বিস্তার খুবই বেশি। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য অস্থিতিশীল অর্থাৎ এক দিনের মূল্যের সাথে অন্য দিনের মূল্যের পার্থক্য যথেষ্ট।
ii. বিস্তার পরিমাপের মাধ্যমে কোন তথ্যসারি বা নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান অর্থাৎ গড় মানের যথার্থতা ও প্রতিনিধিত্বশীলতা যাচাই করা যায়।
iii. কোন নিবেশনের অভ্যন্তরীণ ভেদ নির্ণয়ে ও নিয়ন্ত্রণে বিস্তার পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
iv: যখন কেন্দ্রীয় প্রবণতার বিভিন্ন পরিমাপ যেমন- গড়, মধ্যমা ও প্রচুরক ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্যসারির প্রকৃতি উদ্ভাবনে ব্যর্থ হলে তখন বিস্তার পরিমাপ দ্বারা তথ্যের যথার্থ প্রকৃতি উদ্ভাবন করা যায় ।
v. দুই বা ততোধিক নিবেশনের কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ যেমন- গড়, মধ্যমা ও প্রচুরক সমান হলেও এদের গঠন প্রকৃতি ভিন্ন হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে নিবেশনসমূহের মধ্যে তুলনা করতে বিস্তার পরিমাপ ব্যবহার করা হয়।
vi. দুই বা ততোধিক নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান পরস্পর অসমান হলেও এদের আকার-আকৃতির মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকতে পারে। এ ধরনের নিবেশনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মান এককভাবে তথ্যের প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারে না। এজন্য বিস্তার পরিমাপ প্রয়োজন হয়।
vii. দুই বা ততোধিক নিবেশনের চলকসমূহের একক ভিন্ন ভিন্ন হলে এদের মধ্যে তুলনা করতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ দ্বারা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নিবেশন দুটির মধ্যে তুলনা করতে আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপ ব্যবহৃত হয়।
vili. নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের পরিবর্তনশীলতা পরিমাপে বিস্তার পরিমাপ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পণ্যসমূহের পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য নির্ণয়ে বিস্তার পরিমাপ দরকার।
ix. উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে বিস্তার পরিমাপ একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনৈতিক চলকের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং স্বল্পমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানে বিস্তার পরিমাপ প্রয়োজন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। বিস্তার পরিমাপ হলো সংখ্যা মানগুলোর মধ্যক মান হতে বিস্তার বা পার্থক্যের পরিমাপ। এ বিস্তার পরিমাপের মাধ্যমে মধ্যক মানের প্রতিনিধিত্বের একটি সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। তাৎপর্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে, তথ্যসারির তুলনা করতে, উচ্চতর পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় মানের
নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ে প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*