বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কী বুঝ? বিকেন্দ্রীকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ উলেখ কর। বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, বিকেন্দ্রীকরণের সংজ্ঞা দাও। বিকেন্দ্রীকরণে কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে? বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, বিকেন্দ্রীকরণ কী? বিকেন্দ্রীকরণের বৈশিষ্ট্য লিখ। বিকেন্দ্রীকরণের উপাদান বর্ণনা কর।
অথবা, বিকেন্দ্রীকরণ কাকে বলে? বিকেন্দ্রীকরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কী বুঝ? বিকেন্দ্রীকরণের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর এবং উপাদানগুলোর বর্ণনা দাও।
অথবা, বিকেন্দ্রীকরণের সংজ্ঞা দাও। বিকেন্দ্রীকরণের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর ভূমিকা :
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আইন সম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বন্টনই বিকেন্দ্রীকরণ। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী বিষয়াবলিতে স্থানীয় জনগণের অারণ নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের মতাদর্শ।
বিকেন্দ্রীকরণ : সাধারণভাবে কোনো সংস্থার কার্যাদি ও দায়িত্বসমূহ কেন্দ্রীয়ভাবে গচ্ছিত না রেখে বিভিন্ন অধস্তন সংস্থাসমূহে না কেন্দ্রসমূহে অপৰা স্থানীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ে হস্তান্তর করা হলে তাকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে। এতে সিদ্ধান্ত আহণের কিছু ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে থাকে এবং বাকি সমুদয় ক্ষমতা কেন্দ্রের বাইরের উপকেন্দ্রগুলোতে ন্যস্ত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন বিজ্ঞ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং চিন্তাবিদগণ বিকেন্দ্রীকরণের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যথা:
অধ্যাপক অ্যালেন (Prof. Allen) বলেন, “কেন্দ্র হতে প্রয়োগ করা সম্ভব এমন কর্তৃত্ব ব্যতীত আর সকল কর্তৃত্বের সর্বনিন্ন স্তরে ভার অর্পণের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়।”
এল. ডি হোয়াইট (L.D. White) বিকেন্দ্রীকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “The process of decentralization denotes the transfer of authority, legislative, judiciary, or administrative from a higher level of government to a lower.” অর্থাৎ, বিকেন্দ্রীকরণ বলতে বুঝায় আইন, বিচার বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্ব সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায়ে স্থানান্তর।
মাওউড (Mowhood) বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেন যে, “Decentralization as a structure of government where bodies are created at the local level separated by law from the national centre in which local representatives are given formal power to decide on a range of public matter.” অর্থাৎ, বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে কেন্দ্রের কাজের বিভিন্ন দিক যেমন- পরিকল্পনা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি হস্তান্তর; কিন্তু এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অবশ্যই একটি আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে ।
অধ্যাপক ডুয়েট ওয়াল্ডো (Dwight waldo) এর মতে, “বিকেন্দ্রীকরণ এমন এক প্রবণতা নির্দেশ করে যেখানে
প্রশাসন ও দায়িত্ব কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হতে আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থাসমূহ নির্দিষ্ট স্থানীয় অবস্থার সাথে খাপখাওয়ানোর
উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা হয়।”
বিকেন্দ্রীকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ : বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
১. ক্ষমতার বণ্টন বা বিভাজন : বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় জাতীয়করণকৃত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে প্রত্যন্ত সংগঠনের কাছে বিভাজন করে অর্পণ করা হয়। ব্যাপক পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে এ ক্ষমতার বণ্টন বা বিভাজন কর্ম সম্পাদন করা হয়।
২. স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ : বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থায় স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে এবং সীমিত আঞ্চলিক আনুগত্য থেকে জাতীয় আনুগত্যবোধ জাগ্রত হয় । অর্থাৎ সীমিত গণ্ডির স্থানীয় জনগণ ব্যাপক জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত, আঞ্চলিক সংগঠন বা সংস্থাগুলো গ্রহণ করে।
৪. স্থানীয় সংস্থাসমূহের স্বাধীনতা : বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে স্থানীয় সংগঠনগুলো দায়িত্বশীল একক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পায়। ফলে স্থানীয় জনগণের চাহিদা, রুচি ও প্রয়োজন অনুসারে নতুন প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্থাসমূহ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।
৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব প্রদান : রাষ্ট্রের বহুমুখী কাজের ব্যাপকতার ফলে জনগণের সুবিধামতো সেবা প্রদান করা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষে বর্তমান সময়ে একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পক্ষে দেশের দূর-দূরান্তে কর্মরত অধস্তন কর্মচারীদের তদারক বা নিয়ন্ত্রণ করাও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্থানীয় সংস্থাকে দায়িত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়।
৬. দায়িত্বশীল নেতৃত্ব : স্থানীয় সংগঠনগুলোর বিকাশের সাথে সাথে এগুলোর স্বনির্ভর হওয়া ও বিভিন্ন কাজের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সুষ্ঠু ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।
বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহ : বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় জাতীয়করণকৃত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে প্রত্যন্ত সংগঠনের কাছে বিভাজন করে অর্পণ করা হয়। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে স্থানীয় সংগঠনগুলো দায়িত্বশীল একক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পায়।বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহ নিম্নরূপ :
১. দায়িত্বশীলতার উপাদান (Factors of Responsibility);
২. প্রশাসনিক উপাদান (Administrative Factors);
৩. কার্যসম্বন্ধীয় উপাদান (Functional Factors);
৪. বাহ্যিক উপাদান (External Factors).
১. দায়িত্বশীলতার উপাদান (Factors of Responsibility) : এ উপাদানটি প্রশাসনিক সংস্থার কর্তৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণের প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ হিসেবে কাজ করে। এ উপাদানের কারণে প্রশাসনিক সংস্থাসমূহ আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নিকট ব্যাপক স্বাধীন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি করে। কারণ কেন্দ্রে অবস্থিত কর্মকর্তাদের যতটা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের তত সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
২. প্রশাসনিক উপাদান (Administrative Factors) : যেসব প্রশাসনিক উপাদান বিকেন্দ্রীকরণকে প্রভাবিত করে সেগুলোর মধ্যে সংস্থার বয়স, সংস্থার নীতি ও পদ্ধতিসমূহের স্থায়িত্ব, সংস্থার আঞ্চলিক কর্মচারীদের দক্ষতা, সংস্থার কর্মসম্পাদনের গতি ও মিতব্যয়িতা এবং প্রশাসনিক দৃঢ়তা সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।
৩. কার্যসম্বন্ধীয় উপাদান (Functional Factors) : সংস্থার কার্যসম্পর্কিত উপাদান বিকেন্দ্রীকরণকে প্রভাবিত করে। সংস্থার বহুবিধ কাজের দায়িত্ব থাকলে বিকেন্দ্রীকরণের কাজও অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে। অনেক সংস্থার টেকনিক্যাল জ্ঞানের অধিকারী সুদক্ষ কর্মচারীর অভাবে বিকেন্দ্রীকরণের কাজও এগুতে পারে না।
৪. বাহ্যিক উপাদান (External Factors) : বাহ্যিক উপাদানসমূহ প্রশাসনিক সংস্থার অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি ও সমস্যার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তার বাহ্যিক কার্যাবলি ও সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করে। এ উপাদানসমূহের মধ্যে নাগরিকদের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অধীনস্থ করা, অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সাথে যোগসমূহের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা এবং আঞ্চলিক কার্যাবলিকে রাজনৈতিক চাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলা জরুরি। উপাদানগুলো নিম্নরূপ :
ক. উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টির ব্যাপক সমর্থন আবশ্যক সেখানে বিকেন্দ্রীকরণের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ. বিকেন্দ্রীকরণের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক উপাদান হলো প্রশাসন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় সংস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের পরিমাণগত দিক। কোনো সংস্থার সিদ্ধান্তসমূহ এমন এক পর্যায়ে গিয়ে গ্রহণ করা উচিত যেখানে অন্যান্য সংস্থা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক উপাদানটি উপেক্ষা করা যায় না। কাজেই আঞ্চলিক প্রশাসন, রাজনীতি বিবর্জিত হতে পারে না।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*