বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে নারীর অবস্থান কেমন? কেন বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন? আলোচনা কর।

অথবা, বাজেট বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে জেল্ডার অবস্থান নির্ণয় কর।
অথবা, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে নারীর অবস্থান তুলে ধর। বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন কেন?
অথবা, বাংলাদেশে জাতীয় বাজেটে নারীর অবস্থান কীরূপ? বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাজেট হচ্ছে কোনো দেশের সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যাতে সেদেশের আগামী এক বছরের আয়ব্যয়ের হিসাব নথিভুক্ত থাকে। আর এ আয়ব্যয়ের হিসাব সেদেশের জাতীয় নীতির আলোকে করা হয়ে থাকে। একটি দেশের জাতীয় বাজেট সেদেশের জাতীয় উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। কিন্তু এ নারীরা জাতীয় বাজেটে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? আর আমাদের বাজেট কতটা জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট? বর্তমান বিশ্বে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ বাজেট যদি জেন্ডার সংবেদনশীল না হয়, তাহলে জনসংখ্যার অর্ধেক নারীরা পিছিয়ে থাকবে ফলে জাতীয় উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে নারীদের অবস্থান আলোচনা করা এবং জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের জেনীয়তা আলোচনা করাই এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে নারীর অবস্থান : বাজেট দু’ধরনের। উন্নয়নমূলক বাজেট এবং রাজস্ব বাজেট। এ দু’ধরনের বাজেটে নারীর অবস্থান দেয়া হলো :
রাজস্ব বাজেট : সরকারের মোট ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে রাজস্ব ব্যয়। রাজস্ব ব্যয়ের ৩০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতনভাতা, বোনাস ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এর রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীর মাত্র ১২ শতাংশ নারী এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রের উচ্চস্তরে নারীর অংশগ্রহণ মোট চাকরির মাত্র ২ শতাংশ। এ কারণে পেনশন এবং গ্র্যাচুয়িটির জন্য ব্যয়কৃত মোট রাজস্ব ব্যয়ের শতাংশের খুব সামান্যই নারীরা পেয়ে থাকে।
উন্নয়নমূলক বাজেট : উন্নয়নমূলক বাজেটে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প থাকে। কিছু প্রকল্প থাকে সরাসরি নারীদের জন্য যেখানে শুধু নারীর জন্যই অর্থ বরাদ্দ থাকে। যেমন- প্লাজ প্রজেক্ট, মহিলা মন্ত্রণালয়ের সবগুলো প্রজেক্ট এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপদ মাতৃত্ব ও নারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক প্রজেক্ট। জাতীয় বাজেটে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি :
১. নারী উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব : জাতীয় বাজেটে নারীদের জন্য বরাদ্দ নিয়ে দেশব্যাপী মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, তৃণমূল মানুষের জনমত যাচাই, নীতিনির্ধারকদের বৈঠক, প্রতি লবিং ইত্যাদি হলেও গত বছরগুলোর বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বর্তমান বাজেটে এমন দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে। সরকার নারী উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উইড ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে। এসব উইড ফোকাল পয়েন্টের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেটে নারী উন্নয়নের বিষয়টি সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব থাকলেও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উইড ফোকাল পয়েন্টগুলো দক্ষতার পরিচয় দেয়নি। নারীর স্বার্থে সরকার উইড ফোকাল পয়েন্ট করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাজেট প্রণয়নে পুরুষেরই নিয়ন্ত্রণ বহাল থেকেছে।
২. নারী ইস্যুকে ‘সমাজকল্যাণমূলক’ তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা : জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে ও আর্থসামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদেরকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার শর্ত থাকলেও নারী ইস্যুকে কেবল ‘সমাজকল্যাণমূলক’ তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখা এবং একমাত্র মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপরই নারী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রবণতা দেখা যায়।
৩. নারীকে দুস্থ, বিত্তহীন, হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা : ২০০২-২০০৩ অর্থবছরের বাজেটে নারীকে বিত্তহীন, দুস্থ ও হতদরিদ্র হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। নারীদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি এবং তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের কোনো পদক্ষেপের ঘোষণাও বাজেটে থাকে না। অর্থাৎ নারীদের ভিতরের সম্ভাবনাময় কাজের ধারাকেই বাজেটে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করা হয়।
৪. শ্রমজীবী নারীদের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকা : ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরের বাজেটে শ্রমজীবী নারীদের কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ তাদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ রাখা হয় নি এবং অসংগঠিত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অসংখ্য শ্রমজীবী নারীদের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই। অথচ সরকারি কোষাগারে রয়েছে নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান।

জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের প্রয়োজনীয়তা : বাজেটে একটি দেশের সমগ্র মানবজাতির আয় ও ব্যয়ের হিসাব অর্থাৎ যে কোনো দেশের গোটা সমাজের জন্য এটি একটি অর্থনৈতিক দলিল। যেকোনো দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাজেট খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। কেন বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন তা নিম্নে আলোচনা হলো :
১. উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য : উন্নয়নের সুফল নারী ও পুরুষের মধ্যে সমভাবে বণ্টিত না হলে, উন্নয়ন টেকসই হবে না। জনসংখ্যার অর্ধেকই যেখানে নারী, সেখানে বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল না হলে উন্নয়ন টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
২. উন্নয়ন ধারায় নারীর সমঅংশীদারিত্বের জন্য : মানব উন্নয়নের সূচকগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নারীরা পিছিয়ে, সম্পদে নারীদের ভাগ কম, তথ্য প্রযুক্তিতে নারীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। এ ব্যবধান হ্রাস করার জন্যও অন্তত বাজেটে নারীর জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকা উচিত।
৩. নারীর কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য : বাজেটে নারীদেরকে দুঃস্থ, বিত্তহীন, অসহায় হিসেবে না দেখে বরং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে নারীদের জন্য অর্থ বরাদ্দের বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন ।
৪. গ্রামীণ নারীদের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন : কৃষিক্ষেত্রে, বীজ সংরক্ষণে গ্রামীণ নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন দরিদ্র ও বিত্তহীন নারীর মধ্যেও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তাই কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করে এদের কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবস্থা ও বরাদ্দ রাখাও দরকার। তাই বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল হতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারীরা হলো দরিদ্রতম। এ কারণে শুধু নারীকে টার্গেট করে বরাদ্দ না করা হলে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নারী খুব কম সুবিধাই ভোগ করবে। ‘নারী সহায়ক’ কোনো বাজেট প্রণয়ন করা না হলে নারীদেরকে ক্ষমতায়নে সহায়তা করা যাবে না। তাই জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অমূল্য অবদান এবং উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয় বিবেচনা করে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*