প্রশাসনিক সংগঠন কাকে বলে? প্রশাসনিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

অথবা, প্রশাসনিক সংগঠন বলতে কী বুঝ? প্রশাসনিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
অথবা, প্রশাসনিক সংগঠন কী? প্রশাসনিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সংগঠনকে বাদ দিয়ে প্রশাসন কিংবা প্রশাসনকে বাদ দিয়ে সংগঠনের আলোচনা অসম্পূর্ণ। দেশের প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। গোষ্ঠীগত কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সংগঠন। বলা যায় যে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর রাখার হাতিয়ার হলো সংগঠন। রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য। সংগঠন থেকেই প্রশাসনের সূচনা হয় ।
প্রশাসনিক সংগঠনের সংজ্ঞা : প্রশাসনিক সংগঠন হচ্ছে প্রশাসন ক্ষেত্রে কতিপয় মানুষের ঐক্যবদ কর্মপ্রচেষ্টা। আভিধানিক অর্থে সংগঠন করাটির অর্থ হচ্ছে “আত্মনির্ভরশীল অঙ্গগুলোর কাজের মধ্যে সংযোগ বিধান করার যাতে প্রতি অংশ যেন সমগ্র সত্তার কাঠামোধীনে বিশেষ কার্যক্রন, দায়িত্ব ও ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে। বিভিন্ন লেখক ও চিন্তাবিদ সংগঠনের যেসব সংজ্ঞা প্রদান করেছেন নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো:
লিউনার্ড ডি. হোয়াইট এর মতে, “কোনো স্বীকৃত উদ্দেশ্য সম্পাদনের সুবিধার্থে কার্যক্রম ও দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে কর্মচারীদের বিন্যাস করাই সংগঠন।”
জে.ডি. মুনি এবং রেইলি ‘The Principles of Organization’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন “অভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রত্যেক মানবসংঘের গঠন রীতিই হচ্ছে সংগঠন।
জে.এম. ফিফনার এর মতে, সংগঠন বলতে ব্যক্তিসমূহের মধ্যকার ও গোষ্ঠীসমূহের মধ্যকার সম্পর্ককেই বুঝায়।সুশৃঙ্খল শ্রমবিভক্তির স্বার্থেই এগুলোকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়।”
লুথার গুলিকের মতে, “সংগঠন হচ্ছে কর্তৃত্বের আইনগত কাঠামো যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কর্মের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপবিভক্তি, বিন্যাসিত এবং সমন্বিত করা হয়।” উপযুক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, সংগঠন হচ্ছে কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও সাজসরঞ্জামের সমন্বিত রূপ। আর প্রশাসনিক সংগঠন হলো শাসন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় জনবল, উপকরণ, যন্ত্র, সরঞ্জাম প্রভৃতিকে সমস্বয়ের মাধ্যমে একত্রীকরণ প্রক্রিয়া।
প্রশাসনিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য : রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য। সংগঠন থেকেই প্রশাসনের সূত্রপাত হয়। প্রশাসনিক সংগঠনের নিজস্ব ও সু-স্পষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে প্রশাসনিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. বিশেষজ্ঞতা ও শ্রমবন্টন নীতি : একটি সামগ্রিক কাজকে বিভিন্ন এককে বিভাজন করার নামই হলো শ্রমবণ্টন। আর শ্রমবণ্টনের ভিত্তি হলো বিশেষজ্ঞতা। সাধারণত প্রশাসনিক সংগঠনে ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার ও বিষেশজ্ঞ জ্ঞানের অধিকারী লোক থাকে। এসব বিশেষ যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতেই শ্রমবণ্টন হয়ে থাকে। এনবিভাগ নীতি অনুযায়ী প্রশাসনিক কাজকে মন্ত্রণালয়, বোর্ড বা কমিশন ইত্যাদিতে ভাগ করা হয়ে থাকে।
২. পদসোপান নীতি : প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য হলো পদলোপান নীতি। পদলোপান নীতির মূল কথা হলো প্রতিটি সংগঠনের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মকর্তাবৃন্দপদ ক্রমিকভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সংগঠনের পদসমূহ বিভিন্ন স্তরে স্তরে বিভক্ত হয়ে সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়। সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের বণ্টনকে পিরামিড টাইপ সংগঠন বলা হয়।
৩. কর্তৃত্ব অৰ্পণ নীতি : পদসোপান ভিত্তিক সংগঠনে সকল কর্তৃত্ব আইনগতভাবে সাধারণত সংগঠন প্রধানের হাতেই ন্যস্ত থাকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের পরিধি নীতিতে এটিই নির্দেশিত হয় যে, কোনো নির্দিষ্ট সীমার বাইরে কোনো নিয়ন্ত্রণই চর্চা করা সম্ভব নয়। এখানেই কর্তৃত্ব অর্পণ নীতির সন্ধান পাওয়া যায়। তাই বলা যায় যে, কর্তৃত্ব অর্পণ নীতির অর্থ হলো প্রত্যেক কর্মচারীকে তার কাজ সম্পাদন করতে সমর্থ হওয়ার মতো যথেষ্ট কর্তৃত্ব প্রদান করতে হবে।
৪. সমন্বয় নীতি : প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো সমন্বয় নীতি। সমন্বয় সাধন কোনো স্বতন্ত্র কাজ নয় বরং সকল কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে ও সংগঠনকে ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা করে। সংগঠনের এ বৈশিষ্ট্যটি ভুল-ত্রুটি দূর করে শক্তিশালী ভিত্তি দান করে।
৫. যোগাযোগ রক্ষা করা : প্রশাসনিক সংগঠনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো যোগাযোগ রক্ষা করা। প্রাচীন কালে মানুষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যোগাযোগ বা ভাষার ব্যবহার করলেও বর্তমানে শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক প্রয়োজনে যোগাযোগ রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রশাসনিক সংগঠনে এক ব্যক্তির নিকট থেকে অপর ব্যক্তির নিকট সংবাদ আদান-প্রদান করা হয়, যা মানুষের আচরণ ও ভাবের সাথে সম্পর্কিত।
৬. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ : প্রশাসনিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্রীয়করণ ও বিকেন্দ্রীকরণ। কেন্দ্রীয়করণ ও বিকেন্দ্রীকরণ হলো মূলত দুটি বিপরীত ধর্মী প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয়করণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্র হতে সকল প্রকার নির্দেশনা দেয়া ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অপর দিকে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে ক্ষমতা বিভিন্ন অঞ্চল বা স্থানীয় পর্যায়ে বিন্যাস করে দেওয়া হয়।
৭. কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব : প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব। কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব শব্দ দুটি দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় বুঝালেও এদের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রশাসনিক সংগঠন তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে থাকে।
৮. নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্র : নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্র বা Span of Control প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্র হলো একজন প্রশাসক যতজন অধঃস্তন ব্যক্তি বা যতগুলো ইউনিটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার সংখ্যা।
৯. লাইন ও স্টাফ এজেলি : প্রশাসনিক সংগঠনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো লাইন ও স্টাফ এজেন্সি। যে কোনো দেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে দুই ধরনের কর্মচারী কাজ করে। এদের একদল কর্মচারীকে বলা হয় লাইন এজেন্সি এবং অন্যদলকে বলা হয় স্টাফ এজেন্সি। লাইন এবং স্টাফ সংগঠনের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত একটি ধারণাগত ভিত্তি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় পদসোপান বা এজেন্সিকে বলা হয় লাইন এজেন্সি। আর স্টাফ এজেন্সি বলতে এমন এক ধরনের এজেন্সিকে বুঝায় যা কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে, কিন্তু দায়িত্ব চর্চা করে না।
উপসংহার : উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রশাসনিক সংগঠন রাষ্ট্র পরিচালনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সংগঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের মধ্যে সমন্বয় ও জটিলতা দূর হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*