প্রমথ চৌধুরী তার ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধটিতে কীভাবে এবং কেন যৌবনকে রাজটিকা পরাতে চেয়েছেন? আলোচনা কর।

অথবা, যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে লেখক প্রকৃত যৌবন বলতে কী বুঝিয়েছেন? সমাজের যৌবন রক্ষা করা যায় কী প্রকারে? প্রবন্ধটি অবলম্বনে তা বিবৃত কর।
অথবা, ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে প্রমথ চৌধুরীর যৌবন বন্দনার স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী যৌবন বলতে কী বুঝিয়েছেন? কীভাবে সমাজদেহে এ যৌবন সঞ্চালিত করা যায়?
অথবা, ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী যৌবনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী যৌবন বন্দনায় মেতে উঠেছেন কেন?
অথবা, দেহের যৌবন ও মানসিক যৌবন বলতে কী বুঝ? প্রমথ চৌধুরীর ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অনুসরণে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী উদাত্ত কণ্ঠে যৌবনের বন্দনা করেছেন। যৌবনকালকে তিনি মানুষের জীবনের সর্বোত্তম সময় বলে আখ্যায়িত করে একে রাজটিকা পরাবার প্রস্তাব দিয়েছেন। যৌবনকে দেখেছেন তিনি জীবনের পরিপূর্ণ অভিব্যক্তি হিসেবে। দৈহিক যৌবনকে বড় করে না দেখে মানসিক যৌবনের বন্দনাগীতি রচনা করাই তাঁর এ প্রবন্ধের লক্ষ্য।
যৌবন কী : যৌবন মানুষের জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট সময়। সে কারণে আমাদের সমাজে বয়সের মাপকাঠিতে যৌবনকালকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করে যে মানুষ তাকে আমরা যুবক বলে থাকি এবং বয়স হলে বার্ধক্যে পদার্পণ করে মানুষ বৃদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রমথ চৌধুরী বয়স বেঁধে দেওয়া এ যৌবনকে দৈহিক যৌবন বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে এ যৌবন ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মনের যে যৌবন তা চিরস্থায়ী। এ চিরস্থায়ী মানসিক যৌবনই প্রকৃত যৌবন এবং আলোচ্য প্রবন্ধে এ যৌবনেরই জয়গান পেয়েছেন প্রাবন্ধিক।
যৌবনের ধর্ম : যৌবন সৃষ্টির সর্বোত্তম ক্ষেত্রে নতুন নতুন সৃষ্টির ভিতর দিয়ে জীবনকে সজীব, সচল ও সজাগ করে তোলাই যৌবনের ধর্ম। মানুষের যৌবন ভোগের উপকরণমাত্র নয়। যাঁরা যৌবন জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেন ভাটার সময় তাঁরা হাহুতাশ করে মরেন। যৌবনে মানুষের বাহ্যেন্দ্রিয়, কর্মেন্দ্রিয় ও অন্তৱেন্দ্রিয় সব সচল সবল হয়ে উঠে। এ সময় সৃষ্টির মূলে যে প্রেরণা আছে মানুষ সে প্রেরণা তার সকল অঙ্গে সকল মনে অনুভব করে। প্রমথ চৌধুরী তাই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা যৌবনের স্তুতি রচনা করেছেন।
যৌবনের মূল্যায়ন : যৌবন অমিত শক্তির উৎস এবং সৃষ্টির প্রেরণা। যৌবন মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আমাদের দেশে সকলেই যৌবনের কপালে রাজটিকার পরিবর্তে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে সর্বদাই প্রস্তুত। “এর কারণ হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্বাস মানবজীবনে যৌবন একটা মস্ত ফাঁড়া-কোনরকমে সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলেই বাঁচা যায়।” এ অবস্থায় সকলেরই কাম্য এক লাফে বাল্য থেকে বার্ধক্যে পদার্পণ। যৌবনের নামে সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত। কারণ তার অন্তরে শক্তি আছে।’ ব্যক্তির বিকাশ এবং সামাজিক উন্নয়নে যৌবনের উন্মুক্ত বিকাশ আবশ্যক।
যৌবন বন্দনা : যৌবন যেহেতু জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়, সেহেতু সমাজে যৌবনের যথেষ্ট সমাদর আছে। যৌবনের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা তাই চিরন্তন। এ কারণেই পুরাণের যযাতি নিজ পুত্রের কাছে যৌবন ভিক্ষা করেছিলেন। এ ভিক্ষা ছিল ভোগের লক্ষ্যে। কিন্তু যৌবন ভোগের উপকরণ নয়, একে কাজে লাগানোই প্রধান কাজ। যে যৌবন সমাজ সংসারের উন্নয়নে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখে, যে যৌবন দেহকে অতিক্রম করে মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে সক্ষম সে যৌবনের বন্দনা করাই মানুষের কর্তব্য। এ যৌবন দেহের সীমাবদ্ধ যৌবন নয়- মনের অশান্ত ও উদার যৌবন। একে বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। এর কপালে রাজটিকা পরাতে চান প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী।
প্রমথ চৌধুরীর যৌবন বন্দনা : সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী যৌবন বন্দনা করতে গিয়ে বলেছেন, যেমন প্রাণিজগতের রক্ষার জন্য নিত্য নতুন প্রাণের সৃষ্টি আবশ্যক এবং সে সৃষ্টির জন্য দেহের যৌবন চাই, তেমনি মনোজগতের এবং তদধীন কর্মজগতের রক্ষার জন্য সেখানেও নিত্য নব সৃষ্টির আবশ্যক এবং সে সৃষ্টির জন্য মনের যৌবন চাই। পুরাতনকে আঁকড়ে থাকাই বার্ধক্য অর্থাৎ জড়তা। মানসিক যৌবন লাভের জন্য প্রথম আবশ্যক প্রাণশক্তি। এখানে দেহের যৌবনকে অস্বীকার না করে মনের যৌবনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মনের যৌবন সমাজ দেহে সর্বদা বিরাজ করে। তা এক মন থেকে অন্য মনে স্থানান্তরিত হয়। জ্বরা একে দুর্বল করতে পারে না। বার্ধক্য এর পথ আগলাতে অক্ষম।
যৌবন বন্দনার স্বরূপ : যৌবনকে মেনে নিতে না পারাটা মানুষের জীবনের চরম ব্যর্থতা। যৌবন শক্তির প্রতীক। যে সমাজে যৌবন নেই সে সমাজ পঙ্গু ও অথর্ব। যৌবনের উত্থান সমাজের আমূল চেহারার পরিবর্তন ঘটায়। যারা যৌবনকে ভয় পায় তারা সমাজের অগ্রগতি চায় না। প্রবন্ধকার যৌবনের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই তিনি যৌবনের বন্দনা করেছেন। আর এ কারণেই তিনি যৌবনের কপালে রাজটিকা পরানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর যৌবন বন্দনার মধ্যে কোনো কপটতা নেই।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় যে, যৌবন সময়ের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ধৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোই মানুষের ধর্ম। দৈহিক যৌবনকে কাজে না লাগাতে পারলে বার্ধক্য তার স্থান দখল করে নেয়। কিন্তু মনের যে যৌবন সেখানে শৈশব ও বার্ধক্যের প্রবেশাধিকার নেই। সে যৌবন সমাজে সর্বদা বিরাজ করে। এ যৌবনের বন্দনা করাই আমাদের কর্তব্য। গ্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী সে মানসিক যৌবনের কপালে রাজটিকা পরিয়ে দিতে ইচ্ছুক। তাঁর যৌবন বন্দনার স্বরূপ হচ্ছে দেহকে অতিক্রম করে মনের যে যৌবন যা সমাজকে সজাগ সচল ও সজীব করে রাখে সে যৌবনের স্তুতি রচনা করা ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%af%e0%a7%8c%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%aa/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*