প্রতিবেদন লিখন কী? প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী কী? বর্ণনা কর ।

অথবা, প্রতিবেদন লিখন কাকে বলে? প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয় কোনগুলো?
অথবা, প্রতিবেদন লিখনের সংজ্ঞা দাও। কোন কোন বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন
করা হয়।
উত্তর৷ ভূমিকা :
একজন গবেষকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রতিবেদন লিখন। একটি ভালো প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোনো গবেষকের প্রতিবেদন লিখন মানেই হলো সমাজের সাথে কার্যকরী ও উদ্দেশ্যমূলক যোগাযোগ স্থাপন । সুতরাং গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্যাবলির সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবরণ। বস্তুত আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি আনুষ্ঠানিক নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচির অন্যতম ভিত্তি ও পূর্বশর্ত হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনের গুরুত্ব ও ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী লিখন সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
এস. এম. আমিনুজ্জামান (S.M. Aminuzzaman) তাঁর ‘Introduction of Social Research’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “Research report is a formal statement of the result of an investigation or of any matter on which definite information is required, made by some persons or body instructed or required to do so.” অর্থাৎ, যে কোন বিবরণ অনুসন্ধানের, ফলাফলের নিয়মতান্ত্রিক বিবৃতি হলো প্রতিবেদন, যা কিছু লোক কর্তৃক প্রণীত সুনির্দিষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যাবলির উপর প্রতিষ্ঠিত ।
জি. আর টেরি (G.R. Terry) এর মতে, “A research report is a formal presentation of summary information dealing with utilization of resources or status of operation useful in evaluation of progress making decisions and directing activities.”
গুড এবং হ্যাট (Goode and Hatt : 1981) এ প্রসঙ্গে বলেন, “Research report is the final stage of the research, and its purpose is to convey to interested persons the whole result of the study, in sufficient detail and so arranged as to enable each reader to comprehend the data and to determine for himself the validity of the conclusions.” অর্থাৎ, গবেষণা প্রতিবেদন হচ্ছে গবেষণার সর্বশেষ ধাপ এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে যারা গবেষণার সম্পূর্ণ ফলাফল এবং সিদ্ধান্তসমূহ জানতে আগ্রহী, তাদের কাছে এগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা, যাতে তারা এগুলো সহজে অনুধাবন করতে পারে।
পিটার লিটট্ল (Petter Little) বলেন, “গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষণার চূড়ান্ত ফল, যাতে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত কোনোকিছুর বিবরণ থাকে এবং বিবরণের সাথে সুপারিশ ও উপসংহার যুক্ত হয় ।” সুতরাং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরেজমিনে অনুসন্ধানের পর সংগৃহীত তথ্যাবলির সুস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনই হলো গবেষণা প্রতিবেদন। এটি হচ্ছে গবেষণার চূড়ান্ত ফল, গবেষকের চরম লক্ষ্য এবং গবেষক ও পাঠকের মধ্যকার সেতুবন্ধন । বস্তুত গবেষণা প্রতিবেদন একদিকে যেমন প্রচলিত জ্ঞানের নতুন সংযোজন, তেমনি বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের একটি অন্যতম হাতিয়ার ।
প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয় : প্রতিবেদন যাতে নির্ভুল, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, সেজন্য গবেষককে প্রতিবেদন তৈরি করার সময় নিম্নোক্ত বিষয় বা উপাদানসমূহ বিবেচনা করতে হয় :
১. পরিকল্পনা : প্রতিবেদন প্রণয়ন করার জন্য প্রথমেই একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার দরকার । কখন, কোথায়, কিভাবে, কোন উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে সে সম্পর্কে গবেষককে পূর্বেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে হয়।
২. সঠিক শিরোনাম : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় শিরোনামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে-যাতে তা সঠিক হয়। কেননা সঠিক শিরোনামের মাধ্যমে প্রতিবেদনের ধরনটি সহজেই অনুমান করা যায় ।
৩. নির্দিষ্ট কাঠামো : প্রতিবেদনের কোনো চিরন্তন কাঠামো নেই । তথাপি প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করার সময় সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করলে এটি পূর্ণাঙ্গতা পাবে।
৪. সুস্পষ্ট বক্তব্য : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় গবেষককে লক্ষ্য রাখতে হবে, তিনি যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা যেন স্পষ্ট হয় এবং পাঠক সহজে তা উপলব্ধি করতে পারেন ।
৫. সঠিক ও সহজ ভাষা : গবেষণা প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাষাকে সহজ সরল ও সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে করে পাঠক অতি সহজে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারে ।
৬. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যসমূহ
স্পষ্টভাবে বিধৃত থাকে। কেননা কি উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন প্রণয়ন হচ্ছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না ।
৭. আকর্ষণীয় উপস্থাপন : প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় লেখচিত্র, গ্রাফ, টেবিল, সারণি ইত্যাদি এমনভাবে সন্নিবেশ করতে হবে যাতে প্রতিবেদনটি দেখতে আকর্ষণীয় মনে হয় ।
৮. সময়মতো উপস্থাপন : প্রতিবেদন উপস্থাপনে গবেষককে সময়ের দিকটিকে বেশি বিবেচনা করতে হবে। কেনন সঠিক সময়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন না করলে এর কোনো মূল্য থাকবে না ।
৯. ব্যাকরণগত শুদ্ধতা : প্রতিবেদন লেখার সময় গবেষককে ভাষা প্রয়োগের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ সুন্দর শব্দ চয়ন এবং ভাষার ব্যাকরণগত দিকটি যাতে শুদ্ধ হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
১০. সংক্ষিপ্তসার : অনেক সময় পাঠকের পক্ষে পুরো প্রতিবেদনটি পড়া হয়ে উঠে না। তাই প্রতিবেদনের একটি সংক্ষিপ্তসার থাকলে পাঠকের পক্ষে সহজে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা লাভ করা সম্ভবপর হয় ।
১১. বাস্তবতা ও নির্ভরতা : গবেষককে অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করতে হবে এবং তৈরিকৃত প্রতিবেদনটি যাতে তথ্যনির্ভর হয়, সেদিকে তাকে খেয়াল রাখতে হবে।
১২. সুপারিশমালা : প্রতিবেদন প্রণয়ন করার সময় গবেষককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রতিবেদনের শেষে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা সংযোজিত থাকে । অর্থাৎ প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিবেদনের শেষে গবেষকের কিছু সুপারিশ থাকলে তা পাঠকের কাছে বেশি গুরুত্ব বহন করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, গবেষণা কর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা। কেননা এটি হচ্ছে গবেষণার চূড়ান্ত ফল এবং এর মাধ্যমে গবেষকের সাথে পাঠকের যোগাযোগ প্রতিস্থাপিত হয়। তাই প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় উপর্যুক্ত বিষয় বা উপাদানসমূহকে অত্যন্ত তাৎপর্যের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*