প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী কী?

অথবা, প্রতিবেদন প্রণয়নের উপাদানসমূহ লিখ।
অথবা, প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়?
অথবা, প্রতিবেদন প্রণয়নের উপাদানসমূহের উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা কর।

উত্তরা৷ ভূমিকা : একজন গবেষকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রতিবেদন লিখন। একটি ভালো প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোনো গবেষকের প্রতিবেদন লিখন মানেই হলো সমাজের সাথে কার্যকরী ও উদ্দেশ্যমূলক যোগাযোগ স্থাপন। সতরাং গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্যাবলির সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবরণ । বস্তুত আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি আনুষ্ঠানিক নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচির অন্যতম ভিত্তি ও পূর্বশর্ত হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনের গুরুত্ব ও ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
প্রতিবেদন প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয় : প্রতিবেদন যাতে নির্ভুল, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, সেজন্য গবেষককে প্রতিবেদন তৈরি করার সময় নিম্নোক্ত বিষয় বা উপাদানসমূহ বিবেচনা করতে হয় :
১. পরিকল্পনা : প্রতিবেদন প্রণয়ন করার জন্য প্রথমেই একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার দরকার । কখন, কোথায়, কিভাবে, কোনো উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে সে সম্পর্কে গবেষককে পূর্বেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে হয় ।
২. সঠিক শিরোনাম : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় শিরোনামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তা সঠিক হয়। কেননা সঠিক শিরোনামের মাধ্যমে প্রতিবেদনের ধরনটি সহজেই অনুমান করা যায় ।
৩. নির্দিষ্ট কাঠামো : প্রতিবেদনের কোনো চিরন্তন কাঠামো নেই। তথাপি প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করার সময় সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করলে এটি পূর্ণাঙ্গতা পাবে ।
৪. সুস্পষ্ট বক্তব্য : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় গবেষককে লক্ষ্য রাখতে হবে, তিনি যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা যেন স্পষ্ট হয় এবং পাঠক সহজে তা উপলব্ধি করতে পারেন ।
৫. সঠিক ও সহজ ভাষা : গবেষণা প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাষাকে সহজ সরল ও সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে করে পাঠক অতি সহজে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারে ।
৬. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য : প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যসমূহ স্পষ্টভাবে বিধৃত থাকে । কেননা কি উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন প্রণয়ন হচ্ছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না ।
৭. আকর্ষণীয় উপস্থাপন : প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় লেখচিত্র, গ্রাফ, টেবিল, সারণি ইত্যাদি এমনভাবে সন্নিবেশ করতে হবে যাতে প্রতিবেদনটি দেখতে আকর্ষণীয় মনে হয় ।
৮. সময়মতো উপস্থাপন : প্রতিবেদন উপস্থাপনে গবেষককে সময়ের দিকটিকে বেশি বিবেচনা করতে হবে। কেননা
সঠিক সময়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন না করলে এর কোন মূল্য থাকবে না ।
৯. ব্যাকরণগত শুদ্ধতা : প্রতিবেদন লেখার সময় গবেষককে ভাষা প্রয়োগের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ সুন্দর শব্দ চয়ন এবং ভাষার ব্যাকরণগত দিকটি যাতে শুদ্ধ হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে ।
১০. সংক্ষিপ্তসার : অনেক সময় পাঠকের পক্ষে পুরো প্রতিবেদনটি পড়া হয়ে উঠে না। তাই প্রতিবেদনের একটি সংক্ষিপ্তসার থাকলে পাঠকের পক্ষে সহজে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা লাভ করা সম্ভবপর হয় ।
১১. বাস্তবতা ও নির্ভরতা : গবেষককে অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করতে হবে এবং তৈরিকৃত প্রতিবেদনটি যাতে তথ্যনির্ভর হয়, সেদিকে তাকে খেয়াল রাখতে হবে।
১২. সুপারিশমালা : প্রতিবেদন প্রণয়ন করার সময় গবেষককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রতিবেদনের শেষে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা সংযোজিত থাকে । অর্থাৎ প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিবেদনের শেষে গবেষকের কিছু সুপারিশ থাকলে তা পাঠকের কাছে বেশি গুরুত্ব বহন করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গবেষণা কর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা। কেননা এটি হচ্ছে গবেষণার চূড়ান্ত ফল এবং এর মাধ্যমে গবেষকের সাথে পাঠকের যোগাযোগ প্রতিস্থাপিত হয় । তাই প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় উপর্যুক্ত বিষয় বা উপাদানসমূহকে অত্যন্ত তাৎপর্যের সাথে বিবেচনা করা উচিত ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*