পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা না সামাজিক বিজ্ঞান? আলোচনা কর ।

অথবা, পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা আলোচনা কর।
অথবা, পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না সামাজিক বিজ্ঞান তা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর ভূমিকা :
সামাজিক প্রপঞ্চ স্বাভাবিকভাবে খুবই জটিল। সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু, সামাজিক প্রপঞ্চ নিয়ত পরিবর্তনশীল; বিভিন্নতায় পরিপূর্ণ এবং বেশিরভাগ সময় গুণগত বৈশিষ্ট্য বহন করে, যা সহজে ইন্দ্রিয় গোচর হয় না। গুণবাচক তথ্য পরিমাপ করা যায়, গণনা করা যায় না। পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা সামাজিক বিজ্ঞান : প্রথমত পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা এ বিষয়ে
মতভেদ আছে। কারণ, বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ একে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, আবার বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা জানতে হলে বিজ্ঞান কাকে বলে আগে জানা প্রয়োজন। বিজ্ঞান হলো কোন বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান এবং জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি । অন্যদিকে, কলা বলতে বুঝায় বিজ্ঞানের উপস্থাপন, প্রয়োগ ও প্রকাশ করা। সামাজিক বিজ্ঞান বলতে বুঝায় সমাজের বিজ্ঞান। যেখানে সমাজকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরিসংখ্যানকে প্রথমত বিজ্ঞান বলতে পারি। পরিসংখ্যানবিদগণ একে বলে গড়বিজ্ঞান, গণনাবিজ্ঞান, প্রাক্কলন ও সম্ভাবনা বিজ্ঞান, সংখ্যাবিজ্ঞান। পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের মত কোন বিষয়কে পরীক্ষা নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি করে থাকে । এ দৃষ্টিকোণ থেকে পরিসংখ্যান বিজ্ঞান। পদ্ধতি ও তত্ত্ব প্রয়োগের পরিণতির দিক থেকে পরিসংখ্যানকে কলা বলা যায়। তবে পরিসংখ্যান পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের মত বিজ্ঞান নয়। সাহিত্যের মত কলাও নয়। পরিসংখ্যান সামাজিক তথ্যকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকারের দিকনির্দেশনা দেয় পরিসংখ্যান। তাই পরিসংখ্যানকে আমরা সামাজিক বিজ্ঞান বলতে পারি। পরিসংখ্যানের সংজ্ঞা এবং এর ক্রমবিকাশ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদগণ এটাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। অনেকে এটাকে গড়ের বিজ্ঞান বা গণনার বিজ্ঞান বা সম্ভাবনার বিজ্ঞান বলেছেন। আবার অনেকে সামাজিক বিজ্ঞানও বলেছেন। বিজ্ঞান হলো পরীক্ষা নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও পদ্ধতিগতভাবে কোন বিষয় সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া। আবার কলা হলো বিজ্ঞানের কর্মফল। কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা বা কৌশলই হলো কলা। পরিসংখ্যানের কার্যাবলিকে বিজ্ঞানের অন্যান্য কার্যাবলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, পরিসংখ্যানের কার্যাবলি সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের কার্যাবলির অনুরূপ বা অনুসরণ করে। সুতরাং বলা যায়, বিজ্ঞানের কার্যাবলি বিবেচনায় পরিসংখ্যান হলো বিজ্ঞান। তাছাড়াও পরিসংখ্যান চারুকলার ন্যায় কলাও নয়। কারণ চারুকলায় মনের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা হয়। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিস্তৃতি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিল্পের উৎপাদন ও বন্টন,।এন-মজুরি, আমদানি-রপ্তানি, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ও শিশুর অধিকার, শিক্ষা, অপরাধ দমন ও সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এ কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি গবেষণার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে একে অনেকে সামাজিক বিজ্ঞান বলে থাকেন । পরিসংখ্যান বিজ্ঞান এবং কলা উভয়ই অর্থাৎ তত্ত্ব এবং পদ্ধতিসমূহের বিষয়ে পরিসংখ্যান একটি বিজ্ঞান এবং তথ্য ও পদ্ধতিসমূহের প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় এটা কলা। সার্বিকভাবে পরিসংখ্যান হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলোর সমন্বিত একটি বিজ্ঞান অথবা কোন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিজ্ঞান ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, সামাজিক পরিসংখ্যানের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও সামাজিক পরিসংখ্যান সমাজের বিভিন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করে, তুলনা করে বর্তমানকে অতীতের সাথে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দেয় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*