পরিসংখ)নের সংজ্ঞা দাও। সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার ও সীমাবদ্ধতা বর্ণনা কর ।

অথবা, পরিসংখ্যান কাকে বলে? সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের প্রয়োগ দুর্বলদিকসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
“Statistics is the science of estimate and probabilities.” মানবসভ্যতার শুরু থেকে পরিসংখ্যানের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও এর পরিভাষাগত নামকরণ হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে শব্দটি ব্যবহার করেন Gottfried Achen wall. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য এ বিষয়টির আবির্ভাব। পরিসংখ্যান হলো এমন একটি পদ্ধতি যা প্রয়োগ করে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত
সংখ্যাভিত্তিক বিবরণসমূহের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা সম্ভব হয়। তাই বলা যায়, সামাজিক গবেষণায় এর গুরুত্ব অপরিসীম । বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায় ।
পরিসংখ্যান : ইংরেজি ‘Statistics’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে পরিসংখ্যান। ‘Statistics’ শব্দটি ইটালীয় শব্দ ‘Statista’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র’। ‘Statistics’ শব্দটি সর্বপ্রথম Gottfired Achen Wall ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ব্যবহার করেন। এ বিষয়কে তিনি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন দেশের সাথে পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে এ বিষয়টি আবিষ্কার করেন । তবে সাধারণত পরিসংখ্যান বলতে সে পদ্ধতিকে বুঝায়, যা প্রয়োগ করে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সংখ্যাভিত্তিক বিবরণসমূহের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। সম্পর্কহীন সংখ্যাসমূহকে পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। আবার কোন একটি বিচ্ছিন্ন সংখ্যাও পরিসংখ্যান বলে বিবেচিত হবে না।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
A. L. Bowley পরিসংখ্যানকে ‘গড়ের বিজ্ঞান’ (Science of average) নামেও অভিহিত করেছেন। যদিও গড় তথ্যাবলি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল, তথাপি এটি বহুসংখ্যক পরিসংখ্যান প্রণালির মধ্যে একটি প্রণালি মাত্র। কাজেই এটা সমগ্র পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।
ডব্লিউ. আই. কিং (W. I. King) এর মতে, “Statistics is the science of decision making in the field of uncertainty.” অর্থাৎ, অনিশ্চিত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিজ্ঞানই হলো পরিসংখ্যান। এ সংজ্ঞাতে কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যামূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
Selingman এর পরিসংখ্যানের সংজ্ঞানুসারে, “কোন অনুসন্ধানে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবদ্ধকরণ, উপস্থাপন, তুলনাকরণ এবং ব্যাখ্যাকরণই হলো পরিসংখ্যান।” ওয়েবস্টার (Webstar) এর মতে, “পরিসংখ্যান হলো কোন রাষ্ট্রে জনসাধারণের অবস্থা সম্পর্কিত শ্রেণিবদ্ধ তথ্যাবলি বিশেষভাবে সেসব তথ্যগুলো সংখ্যা বা সংখ্যার সারণি অথবা যে কোন রূপ সারণি আকারে বা শ্রেণি বিন্যাসের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।”
অধ্যাপক বডিংটন (Boddington) এর মতে, পরিসংখ্যান হলো “Science of estimates and probabilities.” অর্থাৎ, প্রাক্কলন এবং সম্ভাবনাসমূহের বিজ্ঞানই হলো পরিসংখ্যান; উল্লিখিত সংজ্ঞায় উপাত্তসমূহের চেয়ে তাদের বৈশিষ্ট্যে প্রাক্কলিত মানের এবং সম্ভাবনার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
স্যার আর. এ. ফিশার (Sir. R. A. Fisher) এর মতে, “পরিসংখ্যান বিজ্ঞান হলো ব্যবহারিক গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যেখানে সংগৃহীত তথ্যকে গাণিতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।” সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার :
১. মানব কল্যাণে পরিসংখ্যান: মানুষের ব্যক্তিগত থেকে জাতীয় জীবনে অর্থাৎ মানব কল্যাণে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অর্থাৎ দরিদ্রতা, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, অশিক্ষা, ভূমিকম্প, বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে পরিসংখ্যানের ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২. পূর্বাভাস প্রদানে পরিসংখ্যান : কোন বিষয় সম্পর্কে অতীতের সংখ্যাত্মক তথ্যাবলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করা যায়। যেমন বাংলাদেশে সময়ের পরিবর্তনের সাথে জনসংখ্যা, নগরায়ণ এবং শিল্পকারখানা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে একই গতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ২০১০ সালে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ এর দরকার পড়বে তার আনুমানিক ধারণা অর্থাৎ সম্ভাবনা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে বিগত বছরগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা বিশ্লেষণ করে ২০১০ সালের চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাহলে দেশ বিদ্যুৎ ঘাটতির কবলে পড়বে না, যা কালীন সারি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। এজন্য কোন বিষয়ের ভবিষ্যৎ ফলাফলের সম্ভাব্য ধারণার জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয় ।
৩. প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ : নীতি প্রণয়ন ও সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম । নীতি প্রণয়ন সুষ্ঠু ও কার্যকরী হতে হলে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট আকারে অতীতের পর্যাপ্ত তথ্য ও ধারণা থাকা দরকার । পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের অতীত তথ্যাবলি বিশ্লেষণ করে নীতি প্রণয়ন এবং সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব । যেমন- বাংলাদেশ বিমান বিগত বছরগুলোতে শুধু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে; অর্থাৎ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে, নি এবং জনবলের কাঠামো অনেক বেশি ও অদক্ষ। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই এবং প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ বিমানকে ছেড়ে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছে ।
৪. রাষ্ট্রীয় কাজে পরিসংখ্যান : রাষ্ট্রীয় কাজের সূত্র ধরেই পরিসংখ্যানের উৎপত্তি । রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এব সরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অপরিহার্য। রাষ্ট্রের কার্য পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, উৎপাদন নীতি, কর ধার্য ও আদায়, বাজেট প্রণয়ন, জাতীয় পে-স্কেল প্রণয়ন, জাতীয় আয় নিরূপণ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক নীতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে পরিসংখ্যান গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পরিসংখ্যানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এখানে পরিসংখ্যান প্রয়োগের ফলে গাণিতিক অর্থনীতির একটি জটিল বিষয়
৫. অর্থনীতিতে পরিসংখ্যান : অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান একটি মূল্যবান হাতিয়ার । অর্থনীতির সাথে পরিপূর্ণরূপ লাভ করেছে, যা হলো ইকোনোমেট্রিক (Econometrics)। পরিসংখ্যান পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে প্রতিটি অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য বা বিষয়গুলোকে উত্তমরূপে বিশ্লেষণ করা যায়। অর্থাৎ উৎপাদন নীতি, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রকৃত আয় নির্ণয় ইত্যাদি সবই পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয় ।
৬. ব্যবসায় বাণিজ্যে পরিসংখ্যান : ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অপরিহার্য । প্রতিটি আধুনিক ব্যবসায়ীকেই
সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পরিসংখ্যানের ব্যাপক ব্যবহার করতে হয়। পরিসংখ্যান ব্যবসায় ক্ষেত্রের বিশেষ ঝুঁকিগুলো নির্দেশ করে আগাম পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে তোলে। পরিসংখ্যান ফটকা কারবারি, দায় গ্রাহক, শেয়ার অর্থ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাদারদের নিকট ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান পথপ্ৰদৰ্শক ।
দালাল,
৭. বিমা ব্যবসায় পরিসংখ্যান : বিমা ব্যবসায়ের সমগ্র কাঠামোটিই সংখ্যাবহুলতা বিধির (Law of large number) ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত । মৃত্যু সারণি প্রণয়ন ব্যতীত জীবন বিমা ব্যবহার পরিচালনা করা সম্ভব হতো না। মৃত্যুকালীন বয়সের পরিসংখ্যান বিবরণী এবং মৃত্যুর হারের ভিত্তিতে এরূপ মৃত্যু সারণি প্রণয়ন করা হয়। মৃত্যু সারণি অবলম্বনে মানুষের সম্ভাব্য জীবনকালের অনুমান করা হয় এবং সে অনুসারে বিমার জন্য প্রদেয় কিস্তির টাকা নির্ণয় করা হয়। অগ্নি, দুর্ঘটনা, বেকারত্ব, অসুস্থতা ইত্যাদি অন্যান্য প্রকারের বিমাও এই ধরনের ঘটনাবলির প্রাক্কলনের উপর নির্ভরশীল । অতীত রেকর্ডপত্রের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের ঘটনার প্রাক্কলন করা হয় ।
৮. সামাজিক গবেষণায় : সমাজ সমীক্ষার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম সম্ভাব্য সংঘটনের পরিসংখ্যান অপরিহার্য। বহু জটিল ঘটনা সমাজ সমীক্ষার সাথে জড়িত থাকে এবং অসংখ্য প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক কারণে এগুলো প্রভাবিত হয়। এরূপ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ পরীক্ষাধীনে আনা যায় না বলে পরিসংখ্যান পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে ব্যাপক প্রয়োগের মাধ্যমে গবেষণা করে কারণগুলো নির্ণয় এবং করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় ।
৯. চিকিৎসাবিজ্ঞানে পরিসংখ্যান : বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা পরিমাপ, রোগ নির্ণয়ে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তার নির্ভুলতার মাত্রা নির্ণয় এবং যে সমস্ত কারণে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে অর্থাৎ রোগ হওয়ার কারণগুলো পরিসংখ্যানিক উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। যেমন- কোন কোম্পানির উচ্চ রক্তচাপজনিত ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করে, এক্স-রে মেশিন দ্বারা প্রাপ্ত ফলাফল কতটুকু গ্রহণযোগ্য, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কতটুকুর মধ্যে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয় এবং হার্ট এটাক হওয়ার কারণসমূহ ইত্যাদি । বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পরিসংখ্যানের ব্যাপকতা এতটাই বেড়েছে যে প্রাণ পরিসংখ্যান (Bio-statistics) বিজ্ঞানের একটি শাখায় পরিণত হয়েছে ।
১০. জনমিতিতে পরিসংখ্যান : মানুষের জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ এবং বহির্গমন ও গমন ইত্যাদির সংখ্যাত্মক উপাত্ত বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে মানুষের জীবন সম্পর্কিত ঘটনাবলির (Vital events) পরিসংখ্যান বিজ্ঞানকে জনমিতি বলা হয় ।
সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের সীমাদ্ধতা : বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় পরিসংখ্যানের বহুল ব্যবহার এবং প্রয়োগ সত্ত্বেও এর কতকগুলো অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পরিসংখ্যানের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহারের জন্য এদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে দেয়া হলো :
১. পরিসংখ্যান সংখ্যাভিত্তিক উপাত্তের উপর নির্ভরশীল : পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত তথ্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না এমন তথ্যের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা যায় না। মূলত পরিসংখ্যান পদ্ধতিগুলো সংখ্যাভিত্তিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। অতএব, পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ শুধু সংখ্যাত্মক পর্যালোচনা বা যেসব ঘটনাকে সঠিকরূপে সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় সেসব তথ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।
২. পরিসংখ্যানে সরাসরি গুণবাচক তথ্যাবলি ব্যবহৃত হয় না : গুণবাচক চলকগুলো সরাসরি সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না । যেমন- স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসে, কিন্তু কতটুকু ভালোবাসে তা সংখ্যাভিত্তিক পরিমাপ করা যায় না। এ ধরনের তথ্য সঠিক সংখ্যার আকারে প্রকাশ করা যায় না। বহু গুণগত চলক রয়েছে, যেমন- কোম্পানির আকার, পণ্যের গুণগতমান, নৈপুণ্য, মেধা ও শ্রমিকের দক্ষতা ইত্যাদি। উপর্যুক্ত বিষয়গুলোকে আনুমানিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যায় রূপান্তর করে বিভিন্ন পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ধরা যাক, অদক্ষ শ্রমিককে ১, আধা দক্ষ শ্রমিককে ২ এবং দক্ষ শ্রমিককে ৩ ইত্যাদি । গুণগত চলককে সঠিকভাবে সংখ্যায় প্রকাশ করতে না পারলে যথার্থ ফলাফল পাওয়া যাবে না ।
৩. পরিসংখ্যান পুঞ্জীভূত তথ্যের বিশ্লেষণ : পরিসংখ্যান পুঞ্জীভূত বা সমষ্টিগত তথ্যের বিশ্লেষণ করে এবং সামগ্রিক ফলাফলের উপর আলোকপাত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু সঞ্চয়ের অথবা ঋণের পরিমাণ হতে জনসাধারণের সঞ্চয়ের গড় প্রবণতা অথবা গড় খঋণ সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। এটা ব্যক্তি বিশেষের সঞ্চয়কে প্রকাশ করে না অথবা ব্যক্তিগত ঋণগ্রস্ততার অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে না। পরিসংখ্যান এ ধরনের ব্যাপার ব্যাখ্যা করতে পারে না। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান সামগ্রিক একটা ধারণা প্রদান করে।
৪. কোন স্বতন্ত্রকে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে না : পরিসংখ্যান কোন একক সংখ্যা বা বিচ্ছিন্ন সংখ্যাকে পর্যালোচনা বা একক কোন সংখ্যার উপর সাধারণত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা প্রয়োজন হয় সে পরিস্থিতিতে পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। পরিসংখ্যান স্বতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ না করে শুধুমাত্র সমষ্টির গড় ফল প্রকাশ করে।
৫. পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ গড় বিবেচনায় সত্য : কোন অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাদিকে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করলে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা কেবল উক্ত তথ্যাদির গড় বিবেচনায় সত্য। কেননা পরিসংখ্যান কোন একর বা বিচ্ছিন্ন তথ্যাদিকে বিশ্লেষণ করে না। পরিসংখ্যানে অন্যান্য বিজ্ঞানের মত কোন ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ একক ও নির্ভুল ফলাফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। পরিসংখ্যান শুধু গড় এবং সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে ফলাফল দেয়। এ কারণে পরিসংখ্যানিক তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করা হয় তার প্রাপ্ত ফলাফল গড় বিবেচনায় সত্য ।
৬. পরিসংখ্যান বিধিগুলো পরিবর্তনশীল : পরিসংখ্যান বিধিগুলো শুধু দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে সত্য। প্রকৃতি বিজ্ঞানের নিয়মগুলোর প্রকৃতি অপরিবর্তনীয়, কিন্তু পরিসংখ্যান বিধিগুলোর প্রকৃতি পরিবর্তনশীল। পরিসংখ্যান গড়, আসন্ন মান ও সম্ভাব্যতার পরিভাষায় প্রকাশিত হয়। বিষয়টির প্রকৃতিই এটাকে সম্পূর্ণভাবে সঠিক হতে দেয় না, অর্থাৎ কোন একটি ঘটনা বহুসংখ্যক কারণ দ্বারা প্রভাবিত বিধায় পরিসংখ্যান পদ্ধতিগুলোর মানও পরিবর্তনশীল
৭. পরিসংখ্যান তথ্যের পরিপূর্ণতা প্রকাশ করে না। মূলত পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করে জটিল তথ্যাদি সহজ, সরল এবং সংক্ষিপ্তরূপে উপস্থাপন করা হয়। এ কারণে তথ্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না । কেননা পরিসংখ্যান পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা গড় বিবেচনায় সত্য বলে তথ্যের পরিপূর্ণতা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশে অক্ষম।
৮. পরিসংখ্যানিক উপাত্তে ভুল থাকলে : পরিসংখ্যানের তথ্যাদি অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় অনভিজ্ঞ লোকের মাধ্যমে সংগৃহীত এবং সংরক্ষিত উপাত্তে ভুল থাকতে পারে। যার কারণে সঠিক পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলেও প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। এ কারণে কোন অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যটি সফল হয় না।
৯. ভুল ব্যাখ্যাকরণ : তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে যথাযথ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কোন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পৌছাতে হয়। এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ ও অসতর্কতার সাথে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যায়িত হলে ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ কারণে পরিসংখ্যানে ফলাফল বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যাকরণকেও অধিক দেয়া হয় ।
১০. পরিসংখ্যানিক সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক নয়: পরিসংখ্যানে নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। নমুনায়ন একটি পদ্ধতি যা বৃহৎ আকারের তথ্য সমষ্টি হতে ক্ষুদ্র আকারের কিছু তথ্য নিয়ে তা বিশ্লেষণ করে উক্ত তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে বুঝায়। কোন তথ্যবিশ্ব হতে একই আকারের অনেকগুলো নমুনা সংগ্রহ করা যায় এবং প্রায় প্রত্যেকটি নমুনার মান দ্বারা নিরূপক তথ্যবিশ্বের কোন বৈশিষ্ট্যকে পরিমাপ করলে আলাদা আলাদা ফলাফল পাওয়া যায়। আবার তথ্যবিশ্বের সকল উপাদানকে গণনায় নেয়া হয় না, ফলে তথ্যবিশ্বের কোন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিসংখ্যান দ্বারা শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অসম্ভব।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা দক্ষতার সাথে দূর করার মাধ্যমে একে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা যায় ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*