তোমার ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো একটি বিষয়ের উপর গবেষণা নকশা তৈরি কর।

অথবা, তোমার নিজ মনোগ্রাফের একটি গবেষণা নকশা প্রণয়ন কর।
অথবা, একটি যে কোন বিষয়ের উপর গবেষণা নকশা প্রস্তুত কর।
অথবা, একটি মনোগ্রাফের গবেষণা নকশা প্রস্তুত করে দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ, কল্পনা গঠন ও চলক স্থিরকরণের পর গবেষক প্রকৃত অনুসন্ধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা হলো গবেষণার উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোন সমস্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে হলে সেজন্য পরিকল্পনা করতে হয়। কারণ প্রত্যেক গবেষকই অনুসন্ধান কর্ম পরিচালনা করতে গিয়ে কখন, কিভাবে, কোথায়, কার কাছ থেকে, কত সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে কল্পনা যাচাই বা গবেষণা করবেন, সে সম্পর্কে বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করে থাকেন। তাই উপর্যুক্ত বিষয়ে গবেষক একটি পরিকল্পনা বা নীল নকশা গড়ে তোলেন। সমাজ গবেষণায় এ নীল নকশা বা পরিকল্পনাকেই গবেষণা নকশা বলে । মনোগ্রাফের জন্য একটি গবেষণা নকশা :
১. গবেষণার শিরোনাম : গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা : তেঁতলি ইউনিয়নের উপর একটি সরেজমিনে প্রতিবেদন ।
২. ভূমিকা : বাংলাদেশের পল্লি এলাকার জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং সঠিকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর, ফি এবং অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে আয় করে এবং তা ব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ স্থানীয় উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সমস্যার সমাধান করে তথা আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করে থাকে । এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প খাতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা হতে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের যথাযথ ব্যবহারের পথ সুনিশ্চিত করে থাকে । বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশের অধীনে তিন ধরনের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ছিল।
যথা : ক. ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিষদ । খ. থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ । গ. জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ । পরবর্তীকালে স্থানীয় সংস্থাগুলোর জন্য দুটি অধ্যাদেশ প্রণীত হয় । যথা : ক. স্থানীয় সরকার (থানা পরিষদ এবং থানা প্রশাসন পুনর্গঠন অধ্যাদেশ, ১৯৮২)। খ. স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ অধ্যাদেশ, ১৯৮৩)। বর্তমান স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ কর্যাবলি পরিচালিত হচ্ছে । ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার আধ্যাদশে প্রতিটি ইউনিয়নকে তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে একজন চেয়ারম্যান ও নয়জন সদস্য ছিল। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মোট তিনজন সদস্য নির্বাচিত হতো। চেয়ারম্যান ইউনিয়নের ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন এবং নয়জন সদস্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত হতেন । চেয়ারম্যানকে পরিষদের সদস্য হিসেবেও গণ্য করা হতো । ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ (মহকুমা প্রশাসক) ইউনিয়নের সকল মহিলাদের মধ্য হতে দু’জন মহিলা সদস্যকে মনোনীত করতেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা ১৯৮৩ সালে অধ্যাদেশে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রত্যেক ওয়ার্ড হতে একজন করে মোট তিনজন মহিলা সদস্য মনোনীত করার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৮ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে মহিলা সদস্যদের মনোনয়নের দায়িত্ব উপজেলা পরিষদের বদলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮৯ সালে আর এক সংশোধনীর মাধ্যমে মহিলা সদস্য মনোনয়নের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে সরকার মনোনীত ব্যক্তির হতে দেয়া হয়। বর্তমানে নির্বাচনের মধ্যমে মহিলা সদস্য নির্বাচিত করার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে ।
ব্যতিক্রম : ১৯৮৩ সালে ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ ১৯৮৩ কে সংশোধন করে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ও রাঙ্গামাটি জেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদগুলোর জন্য সদস্য মনোনীত করার ব্যবস্থা করা হয়, তারা স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন প্রতিনিধি এবং তাদের সংখ্যা তিন এর বেশি নয় ।
৩. গবেষণার উদ্দেশ্যাবলি ও যৌক্তিকতা :
i. আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা নিরূপণ ।
ii. ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকারিতা সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণের মনোভাব মূল্যায়ন ।
iii.ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকরী করে তুলতে সরকারি অনুদান ও সাহায্য সহযোগিতা সময়োপযোগী কি না তা বিশ্লেষণ করা ।
iv. আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকাকে কিভাবে আরো কার্যকরী করে তোলা যায় এ ব্যাপারে সুপারিশমালা প্রণয়ন ।
v. আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের সীমাবদ্ধতাগুলো খুঁজে বের করা ।
vi. গবেষণালব্ধ ফলাফলের মাধ্যমে এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি করা, যা পরবর্তিতে এ সম্পর্কিত অন্যান্য গবেষণার ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি তথ্যের উৎস ও পথনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ।
৪. গবেষণা পদ্ধতি : অত্র গবেষণা কর্মটি সম্পাদনের জন্য আমরা নিম্নলিখিত পদ্ধতি গ্রহণ করব । যথা :
i. সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর নিকট থেকে ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক আয় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ তথা বাজেট সংগ্রহ ।
ii. সরাসরি প্রশ্নপত্রের সাহায্যে আর্থসামাজিক
ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের মতামত সংগ্রহ ।
iii. সরলদৈব নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যসমূহ উপস্থাপন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ ।
iv. ফলাফল যাচাই ও সুপারিশমালা তৈরি ।
v. এ গবেষণায় তাত্ত্বিক দিকের চেয়ে বাস্তব অবস্থার উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হবে ।
৫. গবেষণার এলাকা : গবেষণার ক্ষেত্র বা এলাকা হিসেবে সিলেট সদর থানার ১১ নং তেঁতলি ইউনিয়নকে বেছে নেয়া হয়েছে । এর অবস্থান সিলেট শহর থেকে প্রায় ১৫ কি. মি. দক্ষিণে ।
৬. সেম্পল সাইজ ও পপুলেশন : অত্র গবেষণায় পপুলেশন হিসেবে উক্ত ইউনিয়নের সমগ্র জনসাধারণকে বুঝাবে এবং এর থেকে আমরা Cluster mathod প্রয়োগ করে ১০০০ অধিবাসীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।
৭. গবেষণার অনুকল্প : ইউনিয়ন পরিষদের আর্থসামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের উন্নয়ন হচ্ছে ।








১০. সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. মোঃ মকছুদুর রহমান, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্য পুস্তক প্রকাশনা
বোর্ড,১৯৮৮ ৷
২. কামাল সিদ্দিকী, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব লোকাল গভমেন্ট ঢাকা, ১৯৮৯।
৩. ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল, ১৯৭৭।
৪. মো: শাসসুর রহমান, আধুনিক লোক প্রশাসন, বাংলা একাডেমি ঢাকা, ১৯৮৭।
৫. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন, গোল্ডেন বুক হাউস, ঢাকা, ১৯৮০।
6. Encyclopedia of Social Science; Vol.5-6. 1959.
7. D. H. Cole; Local Goverment in devoloping Countries, (Newyork, MacGraw Hill Book
Company; 1964)
৮. Kamal Siddique: Local Government in Bangladesh (Dhaka, NILG. 1985)
৯. গবেষকগণের স্বাক্ষর ও তারিখ ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*