জেলা প্রশাসনের কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, জেলা প্রশাসকের কার্যক্রম আলোচনা কর।
অথবা, জেলা প্রশাসকের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, জেলা প্রশাসক কী কী কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে? বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জেলা প্রশাসন হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক একক। জেলা বলতে সাধারণত প্রশাসনিক সুবিধার্থে কোনো দেশের এমন কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলকে বুঝায়, যেখানে সরকারের সমুদয় শাখা সরজমিনে তাদের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকে। জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী এবং সর্বোত্তম সেবা জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিয়ে
প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন। সরকারি বিভিন্ন নীতির কার্যকারিতা ও প্রতিক্রিয়া মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনই সুষ্ঠুভাবে যাচাই করা হয়। এখানেই জনসাধারণ তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে নীতিনির্ধারণের জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। তাই এ মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন তথা জেলা প্রশাসনের গুরুত্ব অত্যধিক।
জেলা প্রশাসকের কার্যাবলি : জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসনের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী কর্মকর্তা। নির্দিষ্ট জেলার যাবতীয় সরকারি কার্য নিষ্পন্ন করার চূড়ান্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসকের ভূমিকা ও কার্যাবলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জেলা প্রশাসক নানাবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা : জেলা প্রশাসক জেলার শান্ত পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়ী থাকেন। তিনি জেলার সামগ্রিক পুলিশ বাহিনীর প্রধান হিসেবে পুলিশের সহযোগিতায় তা করে থাকেন।
২. আগ্নেয়াস্ত্র বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণ : জেলা প্রশাসন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। অন্যদিকে অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা করেন।
৩. ভূমি সংক্রান্ত দায়িত্ব : জেলার সার্বিক কৃষি পরিসংখ্যানের সংরক্ষণ ও পরিচালনা তার অন্যতম দায়িত্ব। তাছাড়া ওয়াকফ ও দেবোত্তর সম্পত্তির প্রশাসন ও বিভিন্ন ট্রাস্ট ও অনাথ সংক্রান্ত প্রশাসন পরিচালনা ও মোতাওয়ালী নিয়োগ করাও জেলা প্রশাসনের কাজ।
৪. জরুরি অবস্থায় : বিভিন্ন দাঙ্গাহাঙ্গামা, হরতাল, ধর্মঘট, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, শ্রমিক আন্দোলনসহ জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূল রাখা অন্যতম কাজ।
৫. শিক্ষাবিষয়ক : জেলা প্রশাসক জনশিক্ষা বা বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পাঠাগার, লাইব্রেরি স্থাপন ও পরিচালনা করে। তাছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, নকল প্রতিরোধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনসহ অন্যান্য শিক্ষাবিষয়ক কাজে জেলা প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
৬. দুর্নীতি দমনে : জনগণের শান্তিরক্ষার খাতিরে দুর্নীতি সম্পর্কিত অভিযোগ সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি দমন বিভাগের বিধিবদ্ধ মামলা সরকারের নিকট প্রেরণ এবং জেলা দুর্নীতি দমন কমিটির সভা আহ্বান তার দায়িত্ব।
৭. রাজস্ব প্রশাসন : জেলা প্রশাসক রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার প্রস্তাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া তিনি জেলার রাজস্ব প্রশাসকের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করেন।
৮. কারাগার সংক্রান্ত : কারাগারে বিচারাধীন ও সাজা সংক্রান্ত কয়েদিদের মঞ্জুরির ব্যবস্থা বেসরকারি ব্যক্তিদের কারাগার প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করা জেলা প্রশাসকের কাজ।
১৯. বিচারব্যবস্থা বিষয়ক : জেলার সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য জেলা প্রশাসক ফৌজদারি আদালতগুলো পরিচালনা ও তত্ত্বাবধায়ন করেন। এক্ষেত্রে তিনি নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সমন্বয়সাধন করেন।
১০. সমন্বয়সাধন : জেলা পর্যায়ের সকল বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন জেলা প্রশাসকের একটি প্রাথমিক দায়িত্ব। তিনি সকল জাতি গঠন বিভাগের কাজ তত্ত্বাবধায়ন করেন এবং এসব বিভাগীয় কর্মচারীর কার্য সমান্তরালভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।
১১. লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট : কতিপয় ব্যবসায় বাণিজ্য সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান, ব্যবসাজনিত নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট প্রদান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট প্রদান করা লোক প্রশাসনের দায়িত্ব ।
১২. কর্মচারী প্রশাসন : তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, শৃঙ্খলাজনিত কার্যক্রম, জেলা প্রশাসনের বাজেট প্রস্তুতকরণ, অফিসার ও কর্মচারীদের বার্ষিক গোপন রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা জেলা প্রশাসকের কাজ ।
১৩. পরিবার-পরিকল্পনা বিষয়ক : জেলা প্রশাসক পরিবার পরিকল্পনা বোর্ডের বিভিন্ন কার্যক্রম নিজ তদারকির মাধ্যমে পরিচালনা করেন। এ ব্যাপারে সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের বাস্তবায়নও নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সম্পাদন করেন।
১৪. স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত : এ সম্পর্কিত কার্যাবলির অগ্রগতি মনিটরিং মূল্যায়নের ব্যবস্থা স্থানীয় সংস্থার অফিসসমূহ পরিদর্শন করা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার যাবতীয় সমস্যাবলি সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
১৫. নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ : নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ যেমন- প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যদ্রব্যের আহরণ ও বিতরণ এবং বেসামরিক বিভাগসমূহের নিয়ন্ত্রণও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব।
১৬. প্রটোকলের ব্যবস্থা : রাষ্ট্রের কোনো পদস্থ কর্মকর্তা বা ব্যক্তি যেমন- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য কোনো মন্ত্রী বা অন্য কোনো বিশেষ ব্যক্তি কোনো জেলায় পরিদর্শনে গেলে তাঁর প্রটোকলের ব্যবস্থা করা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব। তিনি তাঁদের আপ্যায়ন ও যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
১৭. চিত্তবিনোদন : জনগণের চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে উৎসাহ ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে যাবতীয় ব্যবস্থা করা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
১৮. যানবাহন সংক্রান্ত : জেলার সকল যানবাহন (বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, রিকশা) চলাচলের জন্য
অনুমতি প্রদান করে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার মাধ্যমে যান চলাচলের সুন্দর ব্যবস্থা করেন।
১৯. উন্নয়নমূলক কাজ : জেলা প্রশাসক জেলার সকল উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থাকেন। সেচ পরিকল্পনা, রাস্তা নির্মাণ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি, টেলিফোন বোর্ড তদারকি এবং জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনাসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন জেলা প্রশাসক।
২০. অন্যান্য কার্যক্রম : উল্লিখিত কার্যক্রম ছাড়াও আরো অনেক কাজ জেলা প্রশাসক সম্পাদন করে থাকেন। যেমন- রেশন ব্যবস্থা, বাড়িভাড়া, সরকারি প্রচার, আদমশুমারি, সমাজ বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে অভিযান ইত্যাদি। তিনি বিভিন্ন সভা, সমিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাপক ও বিস্তৃত। আধুনিক জীবন ও সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিধান জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। আর এসব দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসককে অত্যন্ত সুদক্ষ ও দূরদর্শী হতে হয়। কেননা, একজন দক্ষ জেলা প্রশাসকের উপরই জেলা
প্রশাসনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সফলতা নির্ভরশীল।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*