জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা দাও ।

অথবা, ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ গৃহীত মতামত ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ গৃহীত মতামত আলোচনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ গৃহীত মতামত বর্ণনা কর।
অথবা, ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ গৃহীত মতামতের বিবরণ দাও।
অথবা, জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পিতৃতন্ত্রের পুরুষ নারীর প্রতিবাদ সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে। নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে পুরুষ তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। পিতৃতন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার সামর্থ্য নারীর নেই। তবে সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে নারী সকল বাধাবিপত্তি কাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও পরিবর্তন সাধন করার সামর্থ্য অর্জন করবে। নিজ চাহিদা পূরণ এবং নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। নারী হবে ক্ষমতাবান। নারী ও পুরুষে ক্ষমতার বৈষম্য থাকবে না। নারীর উপর পুরুষ প্রাধান্য রহিত হবে, নারীর অধীনতা পাশ ছিন্ন হবে। জাতিসংঘ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনগ্রসর নারীদের জাগরণে জাতিসংঘ অর্থায়ন ও কৌশলের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে থাকে। জাত নারীসমাজ সৃষ্ট জেন্ডার ভূমিকা ও পুরুষের অধীনতা অগ্রাহ্য করে জেন্ডার বৈষম্যকে জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতায় রূপান্তরিত করবে।
জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ক্ষমতায়ন : ক্ষমতার অর্থ সমাজের সকল স্তরে অবদান রাখার সামর্থ্য থাকা। কেবল পরিবারে নয়, ক্ষমতার অর্থ নারীর অবদানকে স্বীকার করা এবং মূল্য দেওয়া। জাতিসংঘের দৃষ্টিতে ক্ষমতায়ন হলো, “People take control and action in order to overcome obstacles.” একটি জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধকতা অপসারণের জন্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মকাণ্ড গ্রহণ করে। যে কাঠামোগত অসমতা একটি নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অসুবিধাজনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছেন, সে কাঠামোগত অসমতার প্রতিবন্ধক দূর করার জন্য উক্ত জনগোষ্ঠীর সমবেত কর্মকাণ্ডকে ক্ষমতায়ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সংজ্ঞানুসারে বলা যায়, “Empowerment is the process by which women mobilise to understand, identify and overcome gender discrimination, so as to achieve equality of welfare and equal access of resources.” ক্ষমতায়ন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা নারী কল্যাণে সমতা এবং সম্পদ আহরণে সমান সুযোগ অর্জনের লক্ষ্য সামনে নিয়ে জেন্ডার বৈষম্য অনুধাবন, চিহ্নিতকরণ ও বিলোপ সাধনের জন্য একজোট হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞায় ক্ষমতায়নের পাঁচটি স্তর আছে। স্তরগুলো ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে নিম্নরূপ :
১. নিয়ন্ত্রণ,
২. অংশগ্রহণ,
৩. নারী জাগরণ,
৪. সম্পদ আহরণ ও
৫. কল্যাণ
১. নিয়ন্ত্রণ : অংশগ্রহণে সমঅধিকার অর্জিত হলে নারী নিজ স্বার্থ তথা ইচ্ছা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের এবং সমাজের নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও প্রভাবিত করার সামর্থ্য লাভ করবে। নারী যখন সম্পদ আহরণ ও মানসিক বিকাশে পুরুষের সাথে সমতা অর্জন করবে, তখন নিজ ইচ্ছা, চাহিদা ও স্বার্থ বাস্তবায়নের কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও পরিবর্তন করতে সমর্থ হবে। আর তখন নারীর চূড়ান্ত ক্ষমতায়ন ঘটবে। নারী হবে নিজের ভাগ্য নিয়ন্তা এবং পুরুষের সাথে সমতার ভিত্তিতে নারী পুরুষ উভয়ে মিলে হবে সমাজের ভাগ্য নিয়ন্তা। নারী বা পুরুষ কেউ কারও অধীনে থাকবে না। উভয়ে হবে সমভাবে ক্ষমতাবান। ক্ষমতার ভারসাম্যের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ সমাজকে সমতাভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
২. অংশগ্রহণ : অংশগ্রহণ অর্থ সকল নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নারী ও পুরুষের সমঅংশীদারিত্ব। জেন্ডার বৈষম্য এবং সমাজের একদেশদর্শিতার অসারতাবোধ জাগ্রত হলে নারী জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সমঅংশীদারিত্ব দাবি করবে। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সকল কর্মকাণ্ডে নারী- পুরুষের সাথে সমতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করবে।
৩. নারী জাগরণ : প্রত্যেক নারীর মধ্যে এ সত্য জাগ্রত করতে হবে যে, নারীর অধস্তন অবস্থার জন্য নারীর অক্ষমতা, অপারগতা বা ত্রুটি দায়ী নয়। এ অবস্থা স্বাভাবিক বা জৈবিক নয়, বরং সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট ও লালিত ব্যবস্থা। কাজেই এ অধস্তন অবস্থানও পরিবর্তনীয় এবং পরিবর্তনযোগ্য। জাগ্রত নারী এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। এমনকি পুরুষের অধীনতা পাশ ছিন্ন করতে পারে।
· ৪. সম্পদ আহরণ : সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ব্যবহার এবং সম্পদের মালিকানা দ্বারা নারী পুরুষ সবার জন্য সমভাবে উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমভাবে সুযোগ ও অধিকার দিতে হবে। সম্পদ, ঋণ, শ্রম ও সেবা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, চাকরি ও অন্যান্য কর্ম, ব্যবসায় বাণিজ্য, উৎপাদন কর্মে নিয়োগ ও উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় নৈপুণ্য প্রশিক্ষণ মোটের উপর সম্পদের সকল দিকে নারী বৈষম্যের শিকার। এ বৈষম্যের ফলে নারী-পুরুষের ব্যবধান এবং নারীর তুলনামূলক দুর্বল অবস্থান।
৫. কল্যাণ : নারীর ক্ষমতায়নের এ স্তর নারীর বস্তুগত কল্যাণ অর্থাৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি এবং আয় উপার্জন, আর্থিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত এসব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে বৈষম্য ও ব্যবধান চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু কেবল বৈষম্য চিহ্নিত করলে ক্ষমতায়ন ঘটবে না, এজন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, জাতিসংঘ নারীর ক্ষমতায়নের যে পাঁচটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছে তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*