চলকের সংজ্ঞা দাও । চলকের প্রকারভেদসমূহ বর্ণনা কর

অথবা, চলক কাকে বলে? চলক কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, চলক কী? এর প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
অথবা, চলকের সংজ্ঞা লেখ। চলকের ধরনসমূহ কী কী? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক পরিসংখ্যানে চলক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় । এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং সর্বাধিক সংবেদনশীল উপাদান। বস্তুত চলক হলো যে কোনো কার্যক্রমের ঐ সমস্ত পরিবর্তনীয় উপাদান যা ব্যবহারযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য ।
চলকের সরল সংজ্ঞা : যা পরিবর্তিত হয় বা পরিবর্তনশীল রাশিই হলো চলক। যে বৈশিষ্ট্য চলমান বা যে বৈশিষ্ট্যের মানের পরিবর্তন ঘটে তাকেই চলক বলে ।
উদাহরণ : উচ্চতা, ওজন, আয়, বয়স ইত্যাদি । Barry F. Anderson এর মতে, “A variable is a set of mutually exclusive properties.” (1968, P- ৪) অর্থাৎ, চলক হলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন গুণের সমাবেশ।
P. V. Young এর মতে, “A variable is any quantity or characteristics which may posses different numerical values or categories. (1948, P-280).” অর্থাৎ চলক হলো যে কোনো পরিমাণ বা বৈশিষ্ট্য যা বিভিন্ন সংখ্যামান অথবা শ্রেণিতে বিভক্ত । Johan Galtung এর মতে, “A variable is a set of values that form a lassification.” (1969, P.20) অতএব বলা যায়, গুণগত পরিমাণগত যে কোনো পরিবর্তনের সূচকই হচ্ছে চলক । বস্তুত সামাজিক গবেষণায়গুণগত ও পরিমাণগত উভয় চলকের উপরই তথ্য সংগ্রহ করা হয় ।
চলকের প্রকারভেদ : কোনো গবেষণার কাজে চলকগুলোকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিবেচনা করা হয় । মূলত ব্যবহারিক দিকের উপর লক্ষ রেখেই চলককে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণিবিভাজন করা যায় ।
ক. প্রকৃতিগত দিক থেকে চলক দু’প্রকার । যথা :
i. গুণগত চলক : যে সমস্ত চলক গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যা সরাসরি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপিত করা যায় না তাই গুণবাচক চলক । যেমন- সংস্কৃতি, মেধা, ধর্ম, আবেগ, মনোভাব, বুদ্ধি ইত্যাদি ।
ii. সংখ্যাবাচক চলক : তথ্যের যেসব বৈশিষ্ট্য সংখ্যায় পরিমাপ করা যায় তাদেরকে সংখ্যাবাচক চলক বলে। যেমন— ওজন, বয়স, উচ্চতা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি ।
খ. গতিপথ (Trend) অনুযায়ী চলক দু’প্রকার । যথা :
i. বিচ্ছিন্ন চলক : যে সকল চলককে কেবল পূর্ণসংখ্যায় প্রকাশ করা যায়, আংশিকভাবে নয় তাদেরকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে । অন্য কথায় যেসব চলক ভেঙে পরিমাপ বা প্রকাশ করা যায় না তাদেরকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে । যেমন-পরিবারের লোকসংখ্যা, বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষসংখ্যা ইত্যাদি ।
ii. অবিচ্ছিন্ন চলক : যে চলক একটি পরিসীমার মধ্যে যে কোনো সংখ্যামানের হতে পারে তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে । অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন চলককে পূর্ণসংখ্যায় এবং ভগ্নাংশে দুভাবেই প্রকাশ করা যায়। যেমন- আয়, উৎপাদন, বয়স, ওজন ইত্যাদি ।
গ. পদ্ধতি (Method) অনুযায়ী চলক প্রধানত তিন প্রকার । যথা :
i. স্বাধীন চলক : যে চলক অন্য কোনো চলকের সাহায্য ছাড়া ঘটনার উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে তাকে স্বাধীন চলক বলে । অর্থাৎ একটি কার্যকরণ সম্পর্কের ব্যাখ্যায় যে চলক বা চলকগুলো নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে সেই চলক বা চলকগুলোকে স্বাধীন চলক বলে। স্বাধীন চলক অন্যকোন চলকের উপর নির্ভরশীল নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কোনো শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের পড়াশুনার সময় একটি স্বাধীন চলক ।
ii. নির্ভরশীল চলক : স্বাধীন চলকের উপস্থিতি ও পরিবর্তনের ফলে যে চলকের উপস্থিতি ও পরিবর্তন নির্ভর করে তাকে নির্ভরশীল চলক বলে। যেমন- একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কত নম্বর পাবে তা নির্ভর করে সেই পরীক্ষার্থীর প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়াশুনা করছে তার উপর । কারণ হচ্ছে- স্বাধীন চলক । ফলাফল হচ্ছে- অধীন চলক ।
এ জন্যই Kidder and Judd বলেন, “Independent variables are causes and dependent variables are the effects.”
iii. মধ্যবর্তীয় বা নিয়ন্ত্রিত চলক : যে সকল চলক স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলকের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে সে সকল চলককে বলা হয় মধ্যবর্তী চলক। এসব চলকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখেন বলে এদেরকে নিয়ন্ত্রিত চলক বলা হয় । গবেষণার ভাষায় নিয়ন্ত্রিত চলককে অন্তর্বর্তী চলকও বলা হয় ।

প্রভাবান্বিত করে । তাই দারিদ্র্যের সাথে কিশোর অপরাধের সম্পর্ক কতখানি মধ্যবর্তী চলক সম্পর্কে হবে এবং এদের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য দারিদ্র্য কিশোর অপরাধের জন্য দায়। এখানে দারিদ্র্য কারণ এবং তা স্বাধীন চলক, কিশোর অপরাধ কার্য বা তা নিরূপণ করতে হলে গবেষককে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । সজাগ থাকতে
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবর্তনশীল রাশি হলো চলক। বিশেষকরে সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক যে সকল উপাদান পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করতে চান সেগুলোই চলক হিসেবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*