গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় নারীবাদ আলোচনা কর।

অথবা, মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্মের মুল্যায়ন কর।
অথবা, মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্মের মূল্য কী? বিস্তারিত তুলে ধর।
অথবা, মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? লিখ।
অথবা, গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় নারীবাদী অবস্থান বর্ণনা কর।
অথবা, গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মার্কসীয় দর্শন শ্রমিকের নির্যাতনকে নারীনির্যাতন অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে নারীনির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মার্কসের সমর্থন নিয়ে তার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ফ্রেডরিক এঙ্গেলস নারী নির্যাতনের ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন। এ নির্যাতনের একটি রূপ হলো গৃহকর্মে বিভিন্নভাবে নারীনির্যাতন। ধনিকতন্ত্রে, শিল্পায়ন ও পণ্য উৎপাদন গৃহ থেকে কর্মস্থলে স্থানান্তরের ফলে নারীর কর্মকে অনুৎপাদী এবং মজুরির বিনিময়ে শ্রমদানকারী পুরুষের কর্মকে উৎপাদী আখ্যা দেয়া হয়েছে। ধনিকতন্ত্রে নারীর গৃহকর্মের অবমূল্যায়ন ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকরণ নারীকে পুরুষের অধীনে অধস্তন জীবনযাপনে বাধ্য করেছে। ধনিকতন্ত্রে নারীকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে
গণ্য করা হয়েছে।
গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় নারীবাদ : সমাজতান্ত্রিক ও মার্কসীয় দৃষ্টিতে নারীদেরকে উৎপাদনের সাথে যুক্ত করেছে। তাঁদের মতে, নারীরা গৃহকর্মে যেসব কাজ করে সেগুলো উৎপাদনের আওতায় পড়ে। গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় নারীবাদকে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. গৃহ উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট : মার্কসীয় নারীবাদিগণ পুঁজিবাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রবলভাবে আক্রমণ করেছেন। নারী প্রধানত উৎপাদনকারী এবং গৌণত ভোক্তা। নারী একটি শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে Margaret Benston তাঁর ‘The Political Economy of Women’s Liberation’ গ্রন্থে বলেছেন, “Responsible for the production of simple use-value in those activities associated with the home and family.” অর্থাৎ, গৃহ ও পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সহজ ব্যবহারযোগ্য মূল্যবান সৃষ্টির জন্য দায়ী। নারী শ্রম দ্বারা ঘরে যা উৎপন্ন করে তার জন্য তাকে যে ক্লেশ করতে হয়, অন্যদিকে বাজারে বিক্রয়ের জন্য উৎপাদিত পণ্য উৎপন্নের জন্য তার চেয়ে বেশি ক্লেশ করতে হয়, একথা বলা যায় না।
২. গৃহকর্ম সামাজিকভাবে পরিচালনা : নারীমুক্তির একমাত্র উপায় এই যে, সমাজ গৃহকর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করবে এবং সামাজিকভাবে নিষ্পন্ন করবে। অর্থাৎ, গৃহকর্মকে সেবাশিল্পে পরিণত করে সমাজ ঐ শিল্প অধিগ্রহণ করবে। গৃহকর্ম সামাজিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা গৃহীত হলে নারীর গৃহকর্মের বোঝা হালকা হবে। ফলে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ সহজ হবে। নারীর গৃহকর্ম তখন রাষ্ট্রায়ত্ত সেবাশিল্পে রূপান্তরিত হবে। যার ফলে নারীমুক্তি সহজতর হবে।
৩. নারীকে রাষ্ট্রায়ত্ত সেবায় য়োগ : গৃহকর্মের দায়িত্ব সমাজের উপর বর্তালে দেখা যাবে যে, সমাজ বা রাষ্ট্র নারীকেই ঐসব সেবাশিল্পে বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে নারী যে কর্ম এতদকালে ঘরে করত, এখন তা ঘরের বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত সেবাশিল্পে গিয়ে করতে দেখা যায়। তবে মার্গারেট ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই সামান্য পরিবর্তন নারীর জন্য একটি অগ্রগতি।
৪. পরিবারের গুরুত্ব হ্রাস : গৃহকর্ম সামাজিকভাবে নির্বাহ করার অর্থ প্রকারান্তরে পরিবারের গুরুত্ব হ্রাস। রান্নাবান্না থেকে সন্তান পালন পর্যন্ত সবই যদি গৃহের বাইরে সমাজ কর্তৃক নির্বাহ হয়, তাহলে পরিবারের অস্তিত্ব ও প্রয়োজন থাকে না। পরিবারে নারীর অবস্থানের অবমূল্যায়নের জন্য ধনিকতন্ত্রকে দায়ী করে পরিবার ভেঙে ফেলা গ্রহণযোগ্য নয়। ধনিকতন্ত্রের পরিবার কেবল নারীর প্রজনন ব্যবহার করে, শ্রমশক্তি বৃদ্ধি করার অর্থনৈতিক যন্ত্র নয়। পরিবারে মানুষ ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও আরাম আয়েশ লাভ করে যা সকল মানুষের প্রত্যাশা।
৫. উদ্বৃত্ত মূল্য : ডেলা কস্টা ও সেল্টা জেমস্ বলেছেন যে, নারীর গৃহকর্ম উৎপাদনশীল কর্ম উপযোগী এ অর্থে নয়, মার্কসের অর্থনৈতিক থিওরী উদ্ধত্তমূল্য অর্থে নারীর গৃহকর্ম উৎপাদনশীল কর্ম। নারীর উৎপাদনশীল কর্মশক্তিকে যোগদানের প্রশ্ন উঠে না, কারণ সে উৎপাদনশীল কর্মশক্তির অন্তর্ভুক্ত। নারীর কর্ম অন্য সব শ্রমের আবশ্যক শর্ত, যে শ্রম থেকে উদ্ধৃত্ত মূল্য নিষ্কাশন করা হয়। আজকের এবং ভবিষ্যতের শ্রমিক খাদ্যবস্তু, সংবেদী ও পারিবারিক আয়েশ প্রদান করে নারী ধনিকতন্ত্রের চাকা সচল রাখে। কাজেই নারীর গৃহকর্মকে ‘উদ্ধত্ত মূল্য’ সৃষ্টিকারী উৎপাদনশীল কর্ম আখ্যা না দিয়ে উপায় নেই ।
৬. কর্মের মজুরি প্রাপ্য : মেরিয়া রোসা, ডেলা কস্টা ও সেলমা বলেছেন, গৃহকর্ম যদি উৎপাদনশীল কর্ম হয়, তাহলে সে কর্মের জন্য মজুরি প্রাপ্য, নারী অবশ্যই মজুরির দাবিদার। নারী গৃহে মজুরি ছাড়া কাজ করবে, আবার মজুরি অর্জনের জন্য ঘরের বাইরে শিল্পকর্মে নিযুক্ত হবে, দ্বিবিধ কর্মে গলদঘর্ম হবে এ ন্যায্য হতে পারে না। নারীর প্রতি অন্যায় আচরণ
রোধ করতে হলে নারীকে গৃহকর্মের জন্য মজুরি দিতে হবে। মজুরি পেলে গৃহকর্ম ঘরে বাইরে কর্মের সাথে এক পংক্তিভুক্ত হবে, ঘরে বাইরে কাজ না করেই নারী অর্থনৈতিক স্বাধিকার লাভ করবে। স্বামী, পিতা বা বন্ধু তথা ব্যক্তি নয়, নারীকে গৃহকর্মের মজুরি দেবে রাষ্ট্র।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সেবাশিল্পে নারীদের বেতন যদি আশানুরূপ হয়, তাহলে অনেক পুরুষও এ কাজ গ্রহণ করতে চাইবে, গৃহকর্ম তখন আর নারীর কর্ম থাকবে না। গৃহকর্মের সামাজিক বা গৃহকর্মের মজুরি নির্ধারণ এ দু’প্রক্রিয়া নারীর ঐতিহ্যবাহী কর্ম বিভাজনের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু মার্কসীয় নারীবাদীরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছেন যে, যখন নারীকে বহিঃঅঙ্গনে, জন শিল্পে, কলকারখানা, অফিস আদালতে চাকরি দেয়া হয়, তখন এমন কাজ দেয়া হয়, যা গৃহকর্মের অনুরূপ বা গৃহকর্মের সম্প্রসারিত রূপ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*