গবেষণা নকশার প্রকারভেদ আলোচনা কর।

অথবা, গবেষণা নকশার প্রভেদসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, গবেষণা নকশার শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, গবেষণা নকশার ধরনসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, গবেষণা নকশাকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়।
উত্তর ভূমিকা :
সমাজ গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ, কল্পনা গঠন ও চলক স্থিরকরণের পর গবেষক প্রকৃত অনুসন্ধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা হলো গবেষণার উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোন সমস্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে হলে সেজন্য পরিকল্পনা করতে হয়। কারণ প্রত্যেক গবেষকই অনুসন্ধান কর্ম পরিচালনা করতে গিয়ে কখন, কিভাবে, কোথায়, কার কাছ থেকে, কত সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে কল্পনা যাচাই বা গবেষণা করবেন সে সম্পর্কে বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করে থাকেন। তাই উপর্যুক্ত বিষয়ে গবেষক একটি পরিকল্পনা বা নীল নকাশা গড়ে তোলেন। সমাজ গবেষণায় এ নীল নকশা বা পরিকল্পনাকেই গবেষণা নকশা বলে ।
গবেষণা নকশার প্রকারভেদ : সাধারণত গবেষণা নকশাকে তিনভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে । যথা :
১. পরীক্ষামূলক নকশা,
২. আপাত পরীক্ষামূলক নকশা,
৩. অপরীক্ষামূলক নকশা ।
১. পরীক্ষামূলক নকশা : যে গবেষণায় চল বা দলের মধ্যেমে পরীক্ষণীয় উপাত্ত বা ডাটার পরিমাপ করা যায় এবং এর মাধ্যমে গবেষণা নকশায় যাচাই করা যায়, তাই সাধারণভাবে পরীক্ষামূলক নকশা। পরীক্ষামূলক নকশার বিভিন্ন প্রকারভেদ করে বিভিন্ন গবেষক আলোচনা করেছেন। Wilkinsin and Bhandarkar এর মতে, “পরীক্ষণের নকশা মূলত দু’প্রকার । যথা :
ক. অভীক্ষণোত্তর যাচাই মাত্র নকশা : যে পরীক্ষণমূলক নকশায়, পরীক্ষণীয় চলে নিয়ন্ত্রিত এবং পরীক্ষণ দলকে উন্মুক্ত করার পরে মাত্র নির্ভরশীল চলের পরিমাপ নেয়া হয়, তাকে অভীক্ষাণোত্তর যাচাই মাত্র নকশা বলা হয়ে থাকে ।
খ. পূর্বাপর যাচাই নকশা : এ ধরনের পরীক্ষণমূলক নকশা দল বা দলগুলোকে পরীক্ষণীয় চলে উন্মুক্ত করার আগে এবং পরে নির্ভরশীল চলের পরিমাপ নেয়া হয় । Mctuigan এর মতে, পরীক্ষণের নকশা পাঁচ প্রকার। যথা :
ক. দৈবচয়িত দুই দলীয় নকশা,
খ. তুল্য দুই দলীয় নকশা,
গ. দৈবচয়িত বহুদলীয় নকশা,
ঘ. উপাদানভিত্তিক নকশা এবং
ঙ. আন্তঃদলীয় নকশা ।
ক. দৈবচয়িত দুই; দলীয় নকশা : দৈবচয়িত দুই দলীয় নকশা বা সংক্ষেপে, ‘দুই দলীয়’ নকশা মনোবিজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত একটি মৌলিক নকশা । কোন অনির্ভরশীল বা পরীক্ষণীয় চল নির্বাচনের পর গবেষক যখন কোন আচরণ এর উপর নির্ভরশীল চলের দুটি মাত্রা প্রয়োগ করতে চান এবং দেখতে চান যে, অনির্ভরশীল চলের দুটি মাত্রার সংশ্লিষ্ট আচরণ বা নির্ভরশীল চলকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে কি না, তখন তিনি এ নকশা ব্যবহার করেন । অনির্ভরশীল চলের দুটি মাত্রাকে দুটি শর্ত বলা যায় । দৈবচয়িত দুই দলীয় নকশার তথ্য গাণিথক বিশ্লেষণের সূত্র যা ‘t’-test নামে পরিচিত । এ ‘t’ নির্ণয়ের সূত্র নিম্নরূপ :

খ. তুল্য দুই দলীয় নকশা : দৈবচয়িত দুই দলীয় নকশায় ধরে নেয়া হয় যে, পরীক্ষণে অংশগ্রহণকারীদেরকে দৈবচয়িতভাবে দুটি দলের ন্যস্ত করার ফলে পরীক্ষণের শুরুতে দুটি মূলত সমদল পাওয়া যাবে (অবশ্য), এ অনুমানের যথার্থতা পরীক্ষণ পাত্রের সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত পরীক্ষণ পাত্রের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাবে, অনুমানটি ততই সমর্থন লাভ করবে। সকল নকশারই মৌল যুক্তি হলো মূলত সমদল নিয়ে পরীক্ষণ শুরু করতে হবে। পরীক্ষণীয় চলের প্রয়োগের পূর্বে নির্ভরশীল চলের মাত্রার বিচারে দলগুলো অভিন্ন ছিল এ যুক্তিকে পরিতৃপ্ত করার একটি উপায় হচ্ছে তুল্য দলীয় নকশার ব্যবহার। তুল্য দুই দলীয় নকশার তথ্য গাণিতিক বিশ্লেষণ এর সূত্যে খানে, D = প্রতি জোড়ার সদস্যদের নির্ভরশীল চলে সাফল্যাংকের পার্থক্য।
গ. দৈবচয়িত বহুদলীয় নকশা : মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নকশাগুলোর মধ্যে বহুদলীয় নকশা অন্যতম । যখন পরীক্ষণে তিন বা ততোধিক শর্ত থাকে, অথবা অনির্ভরশীল চলে তিন বা ততোধিক মাত্রাকে পরীক্ষণপাত্রের উপর প্রয়োগ করতে হয়, তখন বহুদলীয় নকশা ব্যবহার করা হয়। দৈবচয়িত বহুদলীয় নকশার গাণিতিক বিশ্লেষণ এর সূত্র : ১ম ধাপ : প্রত্যেক দলের SS নির্ণয় : SS = Ex2
২. দুই বা ততোধিক অনির্ভরশীল চলের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া । একটি উপাদানভিত্তিক নকশার ছক : সম্মোহনের মাত্র সম্মোহিত করা হয়েছিল
২য় ধাপ : Se (Square root of error variance)।SSA+SSB+ SSC নির্ণয় : Se = 3 (n-1) এখানে, n হচ্ছে প্রতি দলে পরীক্ষণপাত্রের সংখ্যা ।
৩য় ধাপ : ডানকানস রেঞ্জ টেস্টের উপযোগী Se এর জন্য স্বাধীনতার মাত্রা বা df নির্ণয় : df = N-r ( যেখানে, N হচ্ছে পরীক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মোট সংখ্যা এবং r হচ্ছে দলের সংখ্যা)
ঘ. উপাদানভিত্তিক নকশা : উপাদানভিত্তিক নকশা হচ্ছে একই পরীক্ষণে দুই বা ততোধিক অনির্ভরশীল চলের প্রভাব অনুসন্ধানের একটি সম্ভাব্য নকশা । যখন কোন পরীক্ষণে দুই বা ততোধিক অনর্ভিরশীল চলের, নির্বাচিত মাত্রাগুলোর প্রভাব সব সম্ভাব্য সমন্বয়ে অনুসন্ধান করতে হয়, তখন উপাদানভিত্তিক নকশা ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের নকশায় নির্ভরশীল চলের পরিমাপ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণে নিম্নোক্ত তথ্য পাওয়া যায়। যথা :
১. নির্ভরশীল চলের উপর প্রত্যেকটি অনির্ভরশীল চলের প্রভাব এবং সংবেদনশীলতা উচ্চ নিম্ন
ঙ. আজ্ঞদলীয় নকশা : পূর্বে আলোচিত দৈবচয়িত দু’দলীয় নকশা, তুল্য দু’ দলীয় নকশা, দৈবচয়িত বহুদলীয় নকশা এবং উপাদানভিত্তিক নকশা ছিল আন্তঃদলীয় নকশার উদাহরণ। সম্মোহিত করা হয় নি আন্তঃদলীয় নকশার একটি বিকল্প হচ্ছে আন্তঃদলীয় নকশা যাতে অনির্ভরশীল চলের দুই বা ততোধিক মাত্রা একই দলীয় নকশার পরীক্ষণ পাত্রের উপর পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করা হয়। এভাবে একটি পরীক্ষণীয় শর্তে প্রত্যেক পরীক্ষণ পাত্রের জন্য একটি নির্ণায়ক সাফল্যাংক পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন পরীক্ষণীয় শর্তের অধীনে প্রাপ্ত নির্ণায়ক সাফল্যাংকের তুলনা থেকে অনির্ভরশীল চলের মাত্রায় পরিবর্তন আনয়নের প্রভাব নিরূপণ করতে পারা যায় । সংক্ষেপে, আন্তঃদলীয় নকশায়, বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত দলগুলোর মধ্যে নির্ভরশীল চলে সাফল্যাংকের তুলনা করা হয়। অন্যদিকে, আন্তঃদলীয় নকশায়, একই পরীক্ষণ পাত্রদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় এবং বিভিন্ন পরীক্ষণীয় শর্তের কার্যফল হিসেবে তাদের সাফল্যাংকের তুলনা করা হয়। সূত্র : A = -( যেকানে, D হচ্ছে প্রতিজোড়া পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য)(ED) লিল্ডকুইস্ট এর মতে, পরীক্ষণের মৌলিক নকশা ছয় প্রকার । যথা :
ক. সরল দৈবচয়িত নকশা : এ নকশা পরীক্ষণীয় চলের প্রতিটি মাত্রা আলাদা আলাদা নমুনা চলের উপর পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করে থাকে ।
খ. নভিত্তিক নকশা : উপাদানভিত্তিক নকাশার দুই বা তার অধিক পরীক্ষণীয় চলের প্রভাব ও পারস্পরিক ক্রিয়া যুগপৎভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
গ. দৈবচয়িত পুনরাবৃত্তিমূলক নকশা : নানারকম পুনরাবৃত্তিতে ব্যবহৃত পরীক্ষণ পাত্র একই সামগ্রিক হতে নেয়া যেতে পারে এবং প্রত্যেক পুনরাবৃত্তির পরীক্ষণ বা বৈচয়ন পদ্ধেিত একটি ভিন্ন ও দৈবচয়িতভাবে নির্বাচিত উপসামগ্রিক থেকে নেয়া যেতে পারে।
ঘ. পরীক্ষণীয় চলের স্তরভিত্তিক নকশা : নির্ণায়কের সাথে সম্পর্কিত চলের প্রেক্ষিতে তুল্য নকশা দলগুলোর উপর নানাবিধ পরীক্ষণীয় চলের মাত্রা প্রয়োগ করে।
ঙ. আœদলীয় বহুমাত্রিক নকশা : এ নকশা সমগ্র থেকে বহুসংখ্যক পরিমেয় দান নিয়ে গঠিত অনুধ্যানের আওতাধীনে পড়ে !
চ. পরীক্ষণীয় চলের বিভিন্ন মাত্রা এবং অভিন্ন পরীক্ষণ পাত্রের নকশা : পরীক্ষণীয় চলের সমস্ত মাত্রা একই পরীক্ষণ পাত্রের উপর ক্রমান্বয়ে প্রয়োগ করা হয়।
২. আপাত পরীক্ষণমূল নকশা : পরীক্ষণমূলক নকশাসমূহ দুই বা ততোধিক চলের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কে নির্ণয়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। স্মরণীয় যে, অনুরূপ সম্পর্ক নির্ণয়ে, পরীক্ষণমূলক পরিস্থিতি গবেষকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। কিন্তু আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রসহ প্রায়ই আমরা সত্যিকার পরীক্ষণ পরিচালনা করতে পারি না ।
৩. অপরীক্ষণমূলক নকশা : বর্ণনামূলক তথ্র সংগ্রহ করা অথবা বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উপর ছোট আকারের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করার জন্য সামাজিক গবেষকরা অনেক সময়ই অপরীক্ষণমূলক নকশা ব্যবহার করে থাকেন। এ জাতীয় গবেষণা রীতিসিদ্ধ পর্যবেক্ষণ, প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। অপরীক্ষামূলক নকশার মূল্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে কোন পরীক্ষণীয় শর্ত বা হস্তক্ষেপ থাকে না, স্বাভাবিক নিয়মে বিরাজমান দলগুলোর আচরণগত উপাত্ত রীতিবদ্ধভাবে সংগ্রহ করা হয় মাত্র। এ নকশার প্রয়োগে, গবেষণাটি এমনভাবে পরিচালনা করা হয়, যাতে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তারা যেন বুঝতে না পারে যে তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে
বা তাদের উপর কোন গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। এ গোপনীয়তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আচরণের অপরীক্ষামূলক নকশার
শ্রেণিবিভাগ অনেকটা যথেচ্ছাচারী। তবে, সাধারণভাবে এগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় । যথা : ১. চিকিৎসামূলক পদ্ধতি এবং ২. রীতিবদ্ধ পর্যবেক্ষণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো সামাজিক গবেষণার জন্য গবেষণা নকশা প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ধাপ । আর এ ধাপটি গবেষণা সমস্যার ধরনভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একটি ভালো গবেষণা নকশা এবং একজন ভালো গবেষকই কেবল যে কোনো গবেষণাকে যথার্থ করে তুলতে সক্ষম হন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*