কী উপায়ে যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করা যেতে পারে তাই হচ্ছে বিবেচ্য ও বিচার্য”- ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে প্রমথ চৌধুরীর এ উক্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

অথবা, প্রমথ চৌধুরী কী উপায়ে যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চেয়েছেন- আলোচনা কর।
অথবা, যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার উপায় কী? প্রমথ চৌধুরীর ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অনুসরণে লিখ।
অথবা, প্রমথ চৌধুরী কেন যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চেয়েছেন তা ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অনুসারে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যৌবন কী? যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে হবে কেন? প্রমথ চৌধুরীর ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অনুসরণে লিখ।
অথবা, যৌবনের স্বরূপ আলোচনা প্রসঙ্গে যৌবনকে কিভাবে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করা যায় তা আলোচনা কর।
অথবা, যে উপায়ে প্রমথ চৌধুরী যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চেয়েছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
শানিত বুদ্ধি, সংহত বাকবিন্যাস এবং নাগরিক বৈদগ্ধ্যের পরশ বুলিয়ে বাংলা সাহিত্যকে যিনি নতুনত্বের ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি প্রমথ চৌধুরী। তাঁর যৌবনে দাও রাজটিকা’ সমাজ জীবনের উপর যৌবন শক্তির প্রভাবের প্রশস্তিমূলক একটি অনন্য প্রবন্ধ। এ প্রবন্ধে তিনি যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। যৌবন জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। এ যৌবনকে বয়সের মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক নয়। যৌবন সম্পূর্ণ মনের বিষয়। যৌবনকে কীভাবে সমাজের শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো যায় তাই হচ্ছে বিচার্য ও বিবেচ্য।
যৌবনের স্বরূপ : যৌবন জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ। যৌবনকে কেবল ভোগের উপকরণ হিসেবে দেখা যুক্তিসঙ্গত নয়। সাহিত্যে যৌবনকে ভোগের বাহন হিসেবে দেখা হয়েছে। তাঁদের মতে যৌবন অনিত্য। তাই যৌবনকে ভোগ করার জন্য তারা ছিলেন লালায়িত। কিন্তু যৌবন অনিত্য নয়। সে চির জাগ্রত, চির অম্লান। ব্যক্তিগত হিসেব অনুসারে জীবন ও যৌবন অনিত্য হলেও মানবসমাজের হিসেবে এরা নিত্য। সুতরাং সামাজিক জীবনে যৌবনের প্রতিষ্ঠা করা মানুষের ক্ষমতার অতীত নয়।
যৌবনের সক্রিয়তা : যৌবনে মানুষের বাহ্যেন্দ্রিয়, কর্মেন্দ্রিয় ও অন্তরেন্দ্রিয় সব সজাগ ও সবল হয়ে উঠে এবং সৃষ্টির মূলে যে প্রেরণা আছে মানুষ সে প্রেরণা তার সকল অঙ্গে সকল মনে অনুভব করে। দেহ ও মনের অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধের উপর মানবজীবন প্রতিষ্ঠিত হলেও দেহ ও মনের পার্থক্যের উপরেই আমাদের চিন্তারাজ্য প্রতিষ্ঠিত। দেহের যৌবনের সাথে মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকলেও দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্র। এ মানসিক যৌবনকেই সমাজে প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। একজনের দেহের যৌবন অন্যজনের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার উপায় নেই;কিন্তু একজনের মনের যৌবন লক্ষ লোকের মনে সংক্রমণ করে দেওয়া যেতে পারে। আর এভাবেই যৌবনের যথার্থ অভিষেক সম্পন্ন করা সহজতর।
সমাজ ও যৌবন : আমরা সমাজকে একটি ব্যক্তি হিসেবে দেখলেও আসলে মানবসমাজ হচ্ছে বহু ব্যক্তির সমষ্টি। যে সমাজে বহু ব্যক্তির মানসিক যৌবন আছে, সে সমাজেরই যৌবন আছে। দেহের যৌবনের সাথে সাথে মনের যৌবনের আবির্ভাব হয়। সে মানসিক যৌবনকে স্থায়ী করতে হলে শৈশব নয়, বার্ধক্যের দেশ আক্রমণ ও অধিকার করতে হয়। দেহের যৌবনের শেষে বার্ধক্যের রাজ্যে যৌবনের অধিকার বিস্তার করার শক্তি আমরা সমাজ থেকেই সংগ্রহ করতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে ফাল্গুন একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসে না; কিন্তু সমগ্র সমাজে ফাল্গুন চিরদিন বিরাজ করছে। সমাজে নতুন মন, নতুন প্রাণ নিত্য জন্মগ্রহণ করছে। সমগ্র সমাজের এ জীবন প্রবাহ যিনি নিজের মধ্যে টেনে নিতে পারবেন তাঁর মনের যৌবনের বিনাশ নেই। তিনিই পারেন যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে।
উক্তিটির তাৎপর্য : দৈহিক যৌবন অনিত্য, কিন্তু মানসিক যৌবন নিত্য। এ মানসিক যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করা প্রয়োজন । কীভাবে তা করা যায় তা সকলকে ভেবে দেখতে হবে। মানবজীবনের পূর্ণ অভিব্যক্তিই যৌবন। বয়স দিয়ে একে নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। মানুষের বয়সগত যৌবন ক্ষণস্থায়ী। এটি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচিত হলেও দেহের যৌবনের চেয়ে মনের যৌবনই সর্বাধিক ক্রিয়াশীল । এ মনের যৌবনকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ যৌবন সমাজকে গতিশীল করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সমাজের যৌবন বার্ধক্য দ্বারা আক্রান্ত হয় না। মানসিক যৌবন সমাজের চালিকাশক্তি। এ মানসিক যৌবন লাভের জন্য প্রথম প্রয়োজন প্রাণশক্তি। প্রমথ চৌধুরী এ মানসিক যৌবনকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করেছেন। কী উপায়ে তা সাধিত হতে পারে তিনি তা সকলকে ভেবে দেখতে বলেছেন। উক্তিটিতে প্রাবন্ধিক সমাজের বুকে মানসিক যৌবনের অভিষেক উৎসবের দিকনির্দেশ করেছেন।
যৌবনকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার উপায় : যৌবন বলতে আমরা সাধারণভাবে বয়সগত দেহের যৌবন বুঝে । কিন্তু দৈহিক যৌবন প্রকৃত যৌবন নয়। দেহের যৌবন ক্ষণস্থায়ী। বয়স ফুরিয়ে গেলে এ যৌবনও ফুরিয়ে যায়। কিন্তু মনের যে যৌবন তা বয়সগত কারণে ফুরিয়ে যায় না। এ মানসিক যৌবন চিরস্থায়ী। একে এক মন থেকে অন্য মনে স্থানান্তর করা যায়। প্রমথ চৌধুরী এ যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চেয়েছেন। এ যৌবনের কপালেই তিনি রাজটিকা পরানোর প্রস্তাব করেছেন। যৌবনকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার উপায় হিসেবে তিনি একে সার্বিকভাবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেছেন। যৌবনভয়ে যাঁরা ভীত তিনি তাঁদেরকে নিন্দা জানিয়ে যৌবনের বন্দনায় মেতে উঠেছেন। তাঁর ধারণা যৌবনকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে না পারলে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যৌবন সমাজ ও জীবনের চালিকাশক্তি। একে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করা সকলের কর্তব্য। তা না হলে মানবসমাজের অগ্রগতি কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। যৌবনকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা সমাজের সকলের একান্ত কর্তব্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%af%e0%a7%8c%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%aa/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*