একটি উত্তম গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্য লিখ।

অথবা, গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
অথবা, গবেষণা নকশার ৫টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।
অথবা, একটি উত্তম গবেষণা নকশার ৭টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণার উদ্দেশ্য অর্জন বা বাস্তবায়নের জন্য গবেষণার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গবেষক যে যৌক্তিক কর্মপরিকল্পনা (Logical action plan) প্রণয়ন করেন তাকেই গবেষণা নকশা বলে। মূলত গবেষণাকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্যই গবেষণা নকশা প্রয়োজন। একটি উত্তম গবেষণা নকশায় গবেষণা সম্পর্কিত কাজের ধাপ বা পর্যায়ের (Stages) একটি সামগ্রিক চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় ।
একটি উত্তম গবেষণা নকশার বৈশিষ্ট্য : একটি উত্তম গবেষণা নকশায় সাধারণত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকে । যেমন-
১. সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী : একটি উত্তম গবেষণা নকশা গবেষণাধীন বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কিত সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী হতে হবে। কেননা সঠিক উপাত্তের উপরই গবেষণার সাফল্য নির্ভর করে। তাই গবেষণার উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলার জন্য উত্তম গবেষণা নকশাকে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের উপযোগী হওয়া আবশ্যক ।
২. নমনীয় : উত্তম গবেষণা নকশা অবশ্যই নমনীয় প্রকৃতির হবে। ফলে গবেষণার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত গবেষণা নকশাটি কার্যক্ষেত্রে বা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গিয়ে গবেষক অনেক সময় তাতে কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করতে সক্ষম হবেন।
৩. পূর্বানুমান পরীক্ষার ক্ষমতা : একটি উত্তম গবেষণা নকশা অবশ্যই গবেষণার জন্য গৃহীত পূর্বানুমানকে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই বা পরীক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে। কেননা সামাজিক গবেষণার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পূর্বানুমান গ্রহণের মাধ্যমে গবেষণাকার্য পরিচালিত হয়। তাই উত্তম গবেষণা নকশাকে গবেষণার জন্য গৃহীত পূর্বানুমানটিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা বা যাচাই করে সেটি গ্রহণ বা বর্জন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪. স্থায়ী ভুল সংশোধন : একটি উত্তম গবেষণা নকশা গবেষণার জন্য সংগৃহীত উপাত্তের স্থায়ী ভুল (Constant error) সংশোধনের উপযোগী হবে। কেননা পরীক্ষণমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে বাহ্যিক চলককে (External variable) নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে বাহ্যিক চলক অনেক সময়ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ফলে গবেষণার জন্য সংগৃহীত উপাত্তের স্থায়ী ভুলের সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু গবেষণা নকশা সুষ্ঠুভাবে প্রণীত হলে উপাত্তের এ ধরনের স্থায়ী ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৫. দেব ভুল হ্রাস : উত্তম গবেষণা নকশায় এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, যাতে সংগৃহীত উপাত্তের দৈব ভুল (Random error) কম হয় এবং এ ভুলের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। কোন বিষয় বা সমস্যা অনুসন্ধানে দৈব ভুলের উদ্ভব হয় প্রধানত গবেষকদের ব্যক্তিগত পার্থক্য এবং নানারকম অজ্ঞাত শর্তের (Unknown condition) প্রভাবে। এ ধরনের ভুল সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব না হলেও গবেষণা নকশা সঠিকভাবে প্রণীত হলে অনেক ক্ষেত্রে এর পরিমাণ হ্রাস করা যায়।
৬. গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত : একটি উত্তম গবেষণা নকশাকে অবশ্যই গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে।সম্পর্কিত হতে হবে। অন্যথায় গবেষণা নকশার গ্রহণযোগ্যতা (Validity) হ্রাস পায়। ফলে গবেষণার মূল উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয় । তাই উত্তম গবেষণা নকশাকে গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
৭. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের নির্দেশনা : একটি উত্তম গবেষণা নকশায় গবেষণার জন্য প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গবেষণা কাজটি সম্পাদনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। অন্যথায় গবেষণা কাজটিতে অধিক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হবে, যা কাম্য নয় । এছাড়াও একটি উত্তম গবেষণা নকশায় গবেষণা কর্মকাণ্ডের সার্বিক কর্মসূচির বিবরণসহ গবেষণার যৌক্তিক
কাঠামোর (Logical structure) উল্লেখ থাকে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোই মূলত একটি উত্তম গবেষণা নকশায় বিদ্যমান থাকে । আর উত্তম গবেষণা নকশার অনুসরণে গবেষণা কাজটি পরিচালিত হলে সেটি সুষ্ঠু ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং এতে গবেষণার উদ্দেশ্য সহজেই অর্জন করা সম্ভব হয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*