উত্তম প্রশ্নমালার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, উত্তম প্রশ্নমালা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উত্তম প্রশ্নমালা পদ্ধতির প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । এজন্য প্রশ্নমালাকে জরিপ কার্যের আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নিপুণ, নিখুঁত ও চাতুর্যপূর্ণ প্রশ্নমালা প্রণয়ন না করা হলে তা সঠিক তথ্য সংগ্রহে এবং গবেষণার ফলাফল নির্ধারণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। তাই গবেষণার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের জন্য উত্তম প্রশ্নমালা অত্যাবশ্যক । উত্তম প্রশ্নমালার কাঠামো তৈরি করা একটি কৌশল বা বিশেষ শিল্প হিসেবে বিবেচিত ।
উত্তম প্রশ্নমালার বৈশিষ্ট্য : উত্তম প্রশ্নমালার কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে উত্তম প্রশ্নমালার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. শিরোনাম : উত্তম প্রশ্নমালায় একটি সুনির্দিষ্ট শিরোনাম থাকবে, যা নির্দিষ্ট অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি নির্দেশ করতে সক্ষম হবে।
২. উদ্দেশ্যমূলক : যে উদ্দেশ্যে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা অবশ্যই উত্তম প্রশ্নমালায় উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ উত্তম প্রশ্নমালার বিষয় (Content) এমন হবে যেন তা গবেষণার উদ্দেশ্যকে তুলে ধরতে পারে। গবেষণাটি কি সমস্যা অনুসন্ধান করবে, কি লক্ষ্য অর্জন করবে, কি পূর্বানুমান যাচাই করবে প্রভৃতি প্রশ্নকে সামনে রেখে প্রশ্নমালার বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
৩. প্রয়োজনীয় নির্দেশনা : উত্তরদাতা যাতে প্রশ্নমালার প্রদত্ত প্রশ্নের উত্তরসমূহ সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন, সেজন্য উত্তম প্রশ্নমালার সাথে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংযুক্ত থাকতে হবে, এর ফলে উত্তরদাতা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সহায়তা ছাড়াই প্রশ্নমালাটি সঠিকভাবে পূরণ করতে সক্ষম হন ।
৪. ছোট আকৃতি : আকৃতিগত দিক থেকে উত্তম প্রশ্নমালা ছোট আকারের হওয়া বাঞ্ছনীয় । কেননা বৃহৎ আকৃতির প্রশ্নমালা পূরণ করতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়, যা দেখে উত্তরদাতা উত্তর প্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারেন ।
৫. সহজ-সরল ভাষা : উত্তম প্রশ্নমালার ভাষা অবশ্যই উত্তরদাতাদের নিকট সহজ সরল, সুস্পষ্ট এবং বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয় । অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। প্রশ্নমালায় যতদূর সম্ভব দুর্বোধ্য, জটিল, টেকনিক্যাল এবং দ্ব্যর্থবোধক (Ambiguity) শব্দ পরিহার করা উচিত। কেননা এসব শব্দের অর্থ বিভিন্ন জনের নিকট বিভিন্ন ধরনের হয়। ফলে প্রশ্নোত্তর অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে মিশ্রিত হয়ে পড়ে ।
৬. ধারাবাহিকতা : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রশ্নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত। অর্থাৎ কোন প্রশ্নের পর কোন প্রশ্ন থাকবে তা বিশেষ নিয়ম অনুসারে সাজানো উচিত। সাধারণত প্রশ্নমালার প্রথমে উত্তরদাতাকে অনুপ্রাণিত করে এমন সব সহজ সরল প্রশ্ন এবং পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত জটিল প্রশ্নগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, প্রশ্নমালায় প্রথমে জটিল প্রশ্ন থাকলে উত্তরদাতা উত্তর প্রদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন ।
৭. বিশ্লেষণ : উত্তম প্রশ্নমালার সবকয়টি প্রশ্নই বিশ্লেষণমূলক হতে হবে । অর্থাৎ প্রশ্নগুলো কেবল গবেষণার বিষয়বস্তু এবং গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে।
৮. সংবেদনশীল : উত্তম প্রশ্নমালায় সংবেদনশীল প্রশ্ন তুলনামূলকভাবে কম থাকবে। কারণ এরূপ প্রশ্নে উত্তরদাতা রেগে যেতে পারেন এবং উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। তবে গবেষণার প্রয়োজনে এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যদি অনিবার্য হয়, তাহলে প্রশ্নমালার শেষের দিকে করাই ভালো।
৯. পরিহারযোগ্য প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালায় পরিহারযোগ্য প্রশ্নের সংখ্যা কম থাকবে। সাধারণত যেসব প্রশ্ন উত্তরদাতার সম্মানে আঘাত হানে সেগুলোই হলো পরিহারযোগ্য প্রশ্ন। যেমন- ব্যক্তিগত প্রশ্ন, গোপন প্রশ্ন, লাজুক প্রশ্ন; সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী প্রশ্ন ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে উত্তরদাতারা প্রায় সময়ই বিব্রতবোধ করে এবং সঠিক উত্তর দিতে উৎসাহবোধ করেন না। এছাড়াও যে বিষয়ে উত্তরদাতার কোনো ধারণা নেই সে সম্পর্কে প্রশ্ন না করাই শ্রেয়।
১০. বিকল্পহীনতার সুযোগ : উত্তম প্রশ্নমালার প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে বিকল্পহীন অবস্থার সুযোগ বিদ্যমান থাকবে । এজন্য প্রয়োজনবোধে প্রতিটি প্রশ্নে ‘জানি না’, ‘নিরুত্তর’, ‘প্রযোজ্য নয়’ ইত্যাদি বিকল্প উত্তর রাখা হয় ।
১১. আকর্ষণীয় : উত্তম প্রশ্নমালা দেখতে সুন্দর, মার্জিত ও আকর্ষণীয় প্রকৃতির হয়, এর কাগজের মান, রং, মুদ্রণ, উন্নতমানের হয়, যাতে প্রশ্নমালাটি উত্তরদাতার নিকট আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। একই সাথে প্রশ্নমালার ছাপার ভুলও পরিহার করতে হবে।
১২. উত্তরের জন্য ফাঁকা স্থান রাখা : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রত্যেক উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর লিখবার উপযোগী পর্যাপ্ত স্থান ফাঁকা রাখা হয়। এতে সহজেই তথ্যকে কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী এবং সারণিবদ্ধকরণ করা যায়। ফলে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সহজ হয়।
১৩. আবদ্ধ প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালার প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট উত্তর থাকা অর্থাৎ প্রশ্নগুলো আবদ্ধ প্রকৃতির হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে গবেষকের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ সহজ হয় এবং তথ্য অপচয়ের সম্ভাবনাও হ্রাস পায় ।
১৪. নিরপেক্ষ প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালায় এমন নিরপেক্ষ প্রশ্ন করতে হবে যেন কোন প্রকার পক্ষপাতদুষ্টতা (Biasness) ছাড়াই উত্তরদাতার পক্ষে উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। সেজন্য উত্তরদাতাকে সামাজিক প্রতিপত্তি বা মানমর্যাদার অভিব্যক্তি প্রকাশক কোন ভাবোদ্দীপক বা আবেগ সৃষ্টিকারী প্রশ্ন না করা উচিত। অন্যথায় সংগৃহীত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতার মান হ্রাস পাবে।
১৫. সীমিত সংখ্যক প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালায় গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সীমিত সংখ্যক প্রশ্ন থাকা বাঞ্ছনীয় । অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন সম্পূর্ণরূপে বাদ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে এক প্রশ্ন এক উত্তর নীতি অবলম্বন করতে হবে। ফলে প্রশ্নগুলো সংক্ষিপ্ত হবে এবং প্রশ্নমালার দৈর্ঘ্য খুব বেশি হবে না ।
১৬. প্রশ্নমালার প্রাক-যাচাইকরণ : গবেষণার কাজ পুরোপুরিভাবে শুরু করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য প্রণয়নকৃত প্রশ্নমালাটি বিশেষ এলাকার জন্য উপযুক্ত কি না তা প্রাক-যাচাই করে নিতে হবে। এর ফলে প্রশ্নমালায় কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করা যায়। এতে প্রশ্নমালার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায় । এজন্য প্রত্যেকটি উত্তম প্রশ্নমালাই প্রাক-যাচাই (Pre-test) করা উচিত ।
১৭. উত্তরদাতাকে নিশ্চয়তা প্রদান : উত্তম প্রশ্নমালায় গবেষণার উদ্দেশ্য সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা হয় যাতে উত্তরদাতা উত্তর প্রদানে আগ্রহী হয়। এতে উত্তরদাতাকে এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হয় যে, তার প্রদত্ত উত্তরের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে এবং গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে এ তথ্য ব্যবহার করা হবে না, এর ফলে উত্তরদাতা নির্ভয়ে উত্তর প্রদানে আগ্রহী হন ।
১৮. উত্তর প্রকাশের সুযোগ : উত্তম প্রশ্নমালায় উত্তরদাতার নিজস্ব স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্য আবদ্ধ প্রশ্নের পাশাপাশি কতিপয় খোলা (Open) প্রশ্নও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এতে সমস্যা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় ।
১৯. দোনালা প্রশ্ন : একই প্রশ্নের মাধ্যমে দুটি বিষয়ের উপর উত্তর চাওয়া হলে তাকে দোনালা প্রশ্ন বলে। যেমন- আপনি কি বাস এবং ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান? এ প্রশ্নটি অনিশ্চিত এবং এর মাধ্যমে সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব নয় । তাই আদর্শ প্রশ্নমালায় এ ধরনের দোনালা প্রশ্ন পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
২০. ধন্যবাদসূচক বাক্য : উত্তম প্রশ্নমালার শেষে প্রশ্নের উত্তরদানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য উত্তরদাতার জন্য ধন্যবাদসূচক বাক্য থাকবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়যে, একটি প্রশ্নমালার উপরে আলোচিত বৈশিষ্ট্যসমূহ সন্নিবেশিত হলেই সেটি উত্তম প্রশ্নমালা হিসেবে গণ্য হবে। গবেষণার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের জন্য উত্তম প্রশ্নমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

1 Comment

  1. Very nice answer for polscience spl paper ( basic research methods). Thank you so much for this post.

Leave a Reply to পিন্টু মান্না Cancel reply

Your email address will not be published.


*