আমার এই শাসন নিরুদ্ধ বাণী আবার অন্যের কণ্ঠে ফুটে উঠবে। আমার হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সে বাঁশির সুরের মৃত্যু হবে না।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে সংকলিত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কবির হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সুরের মৃত্যু হবে না, বরং তাঁর শাসননিরুদ্ধ বাণী আবার অন্যের কণ্ঠে ফুটে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
বিশ্লেষণ : যুগে যুগে তিমির বিদারী সূর্যের মতো স্বাধীনতাকামী মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে। তাঁরা গানে, কবিতায়, আবিষ্কার, উদ্ভাবনে উজ্জ্বল আলো ছড়িয়েছেন। তাঁদের হৃদয়ের দীপ্তিতে সাহস ও মনোবলের তেজে সত্য ও ন্যায় সাধনার শক্তিতে তাঁরা শোষিত বঞ্চিত মানুষকে রক্ষা করেছেন। শাসকের ও শোষকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুন্দর ও শান্তিকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য মানুষের অন্ধত্ব দূর করেছেন। রাজশক্তির কোপানলে পড়ে অনেকেই অকাতরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। কিন্তু তাঁদের মহত্তম কর্মকাণ্ড থেমে যায়নি। অন্যেরা নেতৃত্ব দিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সবকিছুরই বিকল্প আছে। আবার ভালো কাজের প্রতি অধিকাংশ মানুষের সরব সমর্থন থাকে। কাজেই প্রতিভাবান কর্মোদ্যোগী মানুষের আবেগ, গতি এবং কল্যাণকামিতার মৃত্যু হয় না। একইভাবে লুণ্ঠনকারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি তাঁর বাঁশিতে যে বিদ্রোহী সুর তুলেছেন তা মৃত্যুঞ্জয়ী। তাঁর শাসন নিরুদ্ধ সত্যবাণীও অমর। কবির কণ্ঠ রুদ্ধ করা হলে অন্যের কণ্ঠে সে সত্যবাণী বিপুল শক্তিতে উচ্চারিত হবে। অসত্য, অন্যায় সাময়িক বলেই তার অপতৎপরতাও অস্থায়ী। অচিরেই রাত্রির গভীর বৃত্ত থেকে ফুটন্ত সকাল ছিঁড়ে আনবে অগ্নিমশালধারী তারুণ্য।
মন্তব্য : ‘ধূমকেতু’তে উৎসারিত বিদ্রোহী কবির বাণীর মৃত্যু নেই। রাজশক্তি অন্যায়ভাবে বাঁশি কেড়ে নিলেও অন্যের কণ্ঠে তা বিপুল শক্তিতে বেজে উঠবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*