অনুকল্প (Hypothesis) বলতে কী বুঝ? সামাজিক গবেষণায় অনুকল্পের ভূমিকা আলোচনা কর ।

অথবা, Hypothesis-j কাকে বলে? সামজিক গবেষণায় Hypothesis-j এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
অথবা, অনুকল্পের সংজ্ঞা দাও। সামাজিক গবেষণার অনুকল্পের কার্যাবলি আলোচনা কর ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
“A hypothesis is a proposition of that is stated in testable form and predicts a particular relationship between (two or more) variables.” (Bailey 1982: 4) যে কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে অনুকল্প একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। এ কারণে একে গবেষণা কাজের দিকনির্দেশক বলা হয়ে থাকে । একজন গবেষক গবেষণা কাজে চূড়ান্তভাবে কি দেখতে চান অনুকল্প তা স্পষ্ট করে দেয় । ঘটনা এবং এর মধ্যকার একাধিক প্রত্যয় বা চলক সম্বন্ধে নতুন কিছু ধারণার জন্য গবেষক অনুকল্প গঠন করেন। পরিশেষে বাস্তব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তা থেকে Theory developed করা হয়। সুতরাং গবেষণার ক্ষেত্রে অনুকল্পের কার্যাবলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
অনুকল্প : সাধারণ কথায় বলা হয়, অনুকল্প হলো এক ধরনের প্রস্তাবনা যাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর গবেষণার জন্য প্রস্তুত করা হয় । যেমন- বাংলাদেশ প্রশাসনিক দুর্নীতির জন্য অনুকল্প করা যায় এভাবে, “বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কর্মচারীদের চাকরির গ্যারান্টি বা স্থায়িত্ব দুর্নীতির জন্য কারণ হতে পারে।”
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনীষী অনুকল্প সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
Dr. Salahuddin M. Aminuzzaman 43,”Hypothesis is a projected statement subject to empirical test. It is a tentative generalization, the validity of which has got to be tested.” Richard M. Grirrell Jr , “A theory based prediction of the expected results in a research study a tentative explanation of a relationship or a supposition that a relationship may exist.” K. D. Balicy (1982) এর মতে, “A hypothesis is a tentative explanation for which the
evidence necessary for testing is at least potentially available.” Webster , “A tentative assumption made in order to draw out and test its logical or empirical consequences. Hypothesis empties in sufficiency of personality attainable evidence and therefore a tentative explanation.” পরিশেষে বলা যায়, অনুকল্প হলো দু’টি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে একটি বিবৃতি; যার সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষণাধীন আনা হয় ।
সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এর কার্যাবলি : সামাজিকভাবে তথা সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে অনুকল্পের কার্যাবলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে ড. সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান তাঁর ‘Introduction to Social Research’ গ্রন্থে বলেছেন, “A hypothesis is made in order to find out the correct and valid explanation of certain process or phenomena through scientific investigation. A valid hypothesis provides the basis of a theory.” নিম্নে এর কার্যাবলি তুলে ধরা হলো :
১. ঘটনার ব্যাখ্যা : গবেষণা কার্যক্রমের মূল বিষয় হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ঘটনা যার সত্যতা যাচাই ও পর্যবেক্ষণযোগ্য করার দায়িত্ব অনুকল্পের। অর্থাৎ, অনুকল্পের মাধ্যমে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণযোগ্য ও গবেষণাযোগ্য করে তোলা হয়। যেমন- যদি বলা হয় “বস্তি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়” তবে এ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা ও বাস্তবসম্মত করার দায়িত্ব হলো অনুকল্পের।”
২. ধারণার সুনির্দিষ্টকরণ : অনুকল্পের মাধ্যমে যে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয় তার সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয় । সামাজিক অনেক সমস্যাবলি থেকে → নির্দিষ্ট ও পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়কে এখানে নির্ধারিত করা হয়।
৩. নির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য করণ : অনুকল্প কোনো বিষয়কে পরিমাপযোগ্য (Testable) এবং সুনির্দিষ্টকরণে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ, যে বিষয়কে গবেষণার জন্য বাছাই করা হবে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহে সহায়তা করে থাকে ।
৪. পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে পরামর্শদান : শুধুমাত্র তথ্যসংগ্রহের কাজে সহায়তা করে না, বরং সংগৃহীত তথ্যগুলোকে পরীক্ষা নিরীক্ষাযোগ্য করার ব্যাপারেও সহায়তা করে থাকে ।
৫. যাচাই বাছাই পদ্ধতি নির্ধারণ : অনুকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গবেষণার জন্য স্ফীত বিষয়কে যাচাই বাছাইযোগ্য এবং পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেয় ।
৬. তত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ততা : অনুকল্প যে তত্ত্বের উপর গবেষণাকার্য পরিচালনা করা হবে তার সাথে সুসম্পর্কযুক্ত হতে সাহায্য করে । অর্থাৎ, It should be related to existing theory. কারণ অনুকল্পের উপর নির্ভর করে Theory development করা হয় ।
৭. সহজ ও সঠিক ধারণা প্রদান : অনুকল্প গবেষণার বিষয়কে সহজ ও পরিষ্কার ধারণা প্রদানে সহায়তা করে থাকে। কোন জটিল বিষয়কে সহজ ও ধারণাযোগ্যকরণে অনুকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
৮. আইনগত বৈধতা প্রদান ক্ষেত্রে : অনুকল্প আইনগত বৈধতা প্রদান ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। যে বিষয়কে গবেষণার জন্য নির্ধারণ করা হবে তার একটা সামাজিক ও আইনগত ভিত্তি (Legal basis) দরকার, যা গবেষণার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ।
৯. তাৎপর্যপূর্ণ সমাপ্তিকরণ ক্ষেত্রে : অনুকল্প বিষয়টির একটি সমাপ্তিকরণ তথা একটা চূড়ান্ত ধারণা প্রদানে সহায়তা করে থাকে । অর্থাৎ, একটি বিষয়কে চূড়ান্তভাবে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে এটি সহায়তা করে থাকে ।
১০. অপ্রয়োজনীয় তথ্যবর্জন: অনুকল্প গবেষককে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বর্জন করতে নির্দেশ দেয়। অনুকল্প পরীক্ষা করার জন্য যে ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন গবেষক কেবল তাই করেন ।
১১. অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্ধারণ : অনুকল্প গবেষণার অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্ধারণ করে । একটি নির্দিষ্ট অনুকল্প পরীক্ষা করার জন্য কি ধরনের অনুসন্ধান পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে তা অনুকল্পই নির্ধারণ করে দেয়। কারণ সব ধরনের অনুকল্প পরীক্ষা করার জন্য একই ধরনের অনুসন্ধান পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না।
১২. তত্ত্ব গঠন : অনুকল্প তত্ত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ পরীক্ষিত অনুমান কোনো তত্ত্বকে গ্রহণ, বর্জন বা সংশোধন করে । কাজেই তত্ত্ব গঠনে অনুমানের ভূমিকা অনন্য ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, অনুকল্প গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । আর এটি গবেষণার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে অনুকল্প ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*