গণসংখ্যা নিবেশন কাকে বলে? গণসংখ্যা নিবেশনের গুরুত্ব লিখ ।

অথবা, গণসংখ্য নিবেশনের সংজ্ঞা দাও। এর প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, গণসংখ্যা নিবেশন ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর॥ ভূমিকা :
পরিসংখ্যানে তত্ত্বের মধ্যে গণসংখ্যা নিবেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্যবিশ্বে অনেকগুলো একক থাকে। আবার এ তথ্যগুলোর এক একটি সংখ্যাত্মক এককের পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রতিটি সংখ্যার যতবার পুনরাবৃত্তি ঘটে তার সংখ্যাকে ঐ সংখ্যাগুলোর গণসংখ্যা বলে। নিম্নসীমা সে শ্রেণির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নিম্নতম মান নির্দেশ করে এবং উচ্চসীমা সে শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত উচ্চতম মান নির্দেশ করে। গণসংখ্যা নিবেশন এ সীমা নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে।
গণসংখ্যা নিবেশন : গণসংখ্যা নিবেশনের সংজ্ঞা দেওয়ার পূর্বে গণসংখ্যা (Frequency) শব্দটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। গণসংখ্যা বলতে সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বা নির্দিষ্ট পরিসরে কোনো বিষয় বা ঘটনা কতবার সংঘটিত হয়, একে বুঝায়। আবার, নিবেশন বলতে উক্ত সময় বা পরিসরে তথ্যাবলির মানের সাথে এদের গণসংখ্যাগুলো কিরূপে বিস্তৃত বা বিন্যাসিত, একে বুঝায়। সুতরাং গণসংখ্যা নিবেশন বলতে তথ্যাদির বিভিন্ন মানের ভিত্তিতে বিন্যাসিত গণসংখ্যা প্রদর্শক একটি সুবিন্যস্ত ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনকে বুঝায়। মূলত গণসংখ্যা নিবেশন ছক বিন্যাসের একটি নির্দিষ্ট রূপ। তথ্যানিকে গণসংখ্যা নিবেশন করার ফলে সংখ্যাত্মক বা গুণবাচক তথ্যাদির গৃহীত মানগুলোর বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে এবং তথ্যাদির আকার সংক্ষিপ্ত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : গণসংখ্যা নিবেশন হলো এমন একটি পরিসংখ্যান প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় উপাত্তসমূহকে কতকগুলো নির্দিষ্ট শ্রেণিতে বিভক্ত করে তার বিপরীতে প্রান্ত গণসংখ্যা দেখানো হয়। সমগ্রকের যে বৈশিষ্ট্যসমূহকে সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় তাকে চলক বলে। চলকের মানগুলোকে সুসংবদ্ধ করে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কোনো চলকের মানগুলোকে এরূপ সারণিবদ্ধকরণকেই
গণসংখ্যা নিবেশন বলে অভিহিত করা হয়। অন্যকথায় বলা যায়, গণসংখ্যা নিবেশন হলো চলক সম্পর্কিত বিস্তৃত ও বিশৃঙ্খল রাশিতথ্যের সারণিকরণের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বস্তুত কতকগুলো উপাত্তকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে এগুলোকে কোন ভাগে পড়ল বা অন্তর্ভুক্ত হলো তা দেখাবার জন্য যে সারণি বা টেবিল পাওয়া যায় তাকে গণসংখ্যা
নিবেশন বা গণসংখ্যা বিন্যাস বলে।
ড. শাহজাহান তপনের মতে, প্রাপ্ত স্কোরে প্রদর্শিত উপাত্ত হলো অবিন্যস্ত উপাত্ত এবং এই উপাত্তগুলোকেই যখন শ্রেণি নির্দেশ করে দেখানো হয় তখন একে বলা হয় বিন্যস্ত বা শ্রেণিবদ্ধ উপাত্ত। যে বিন্যস্ত উপাত্ত শ্রেণিতে ঘটনসংখ্যা বণ্টনকে সুনির্দিষ্ট করে, তাকে ঘটনসংখ্যা নিবেশন বলে।
এল. কুল (Richard L. Cole) তাঁর ‘Introduction to Political Inquiry’ গ্রন্থে বলেন, “The frequency distribution refers to a tabulation of data according to the important categories of these variables of interest to the researcher.”
এম. আর. স্পাইজেল (M. R. Spiegel) এর মতে, “A tabular arrangement of data by classes together with the corresponding class frequences is called a frequency distribution or frequency table.” অর্থাৎ, উপাত্তসমূহকে শ্রেণিবদ্ধভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করে যে শ্রেণির গণসংখ্যা দেখানো হয় তাকে গণসংখ্যা নিবেশন বা গণসংখ্যা সারণি বলে। পরিশেষে বলা যায় যে, গণসংখ্যা নিবেশন হলো একটি উপযুক্ত মাধ্যম যাতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তথ্যের উপস্থাপনা ও সংক্ষিপ্তকরণ যুগ্মভাবে সম্ভব। তথ্যসারিকে কতকগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে শ্রেণি বা অংশে বিভক্ত করে পাশাপাশি কতকগুলো কলামে গণসংখ্যা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি লিখে তথ্য প্রকাশ করলে যে তালিকা পাওয়া যায় তাই গণসংখ্যা নিবেশন।
গণসংখ্যা নিবেশনের গুরুত্ব : পরিসংখ্যানে গণসংখ্যা নিবেশনের গুরুত্ব অত্যস্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে গণসংখ্যা নিবেশনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. গণসংখ্যা নিবেশন উপাত্তের একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করে।
২. এর সাহায্যে কোনো একটি বিশেষ শ্রেণি বা বিভাগে চলকের মানের সংখ্যা কত তা জানা যায়।
৩.গণসংখ্যা নিবেশনে তথ্যকে সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য আকারে উপস্থাপন করা হয়।
৪.একটা বিশাল তথ্যসারিকে যখন শ্রেণিবদ্ধ করা হয় তখন তথ্যসারির কেন্দ্রীয় মানের অবস্থান সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় ।
৫.সংগৃহীত উপাত্তসমূহকে গণসংখ্যা নিবেশনের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলে তথ্যসারির আকার ও আয়তন ছোট হয় ।
৬. তথ্যসারিকে সংক্ষিপ্ত আকারে সাজানোর ফলে কম পরিশ্রমে ও স্বল্প সময়ে তত্ত্ব সংগ্রহ করা যায় ।
৭. বিস্তৃত উপাত্তগুলোর সারাংশকে গণসংখ্যা নিবেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় ।
৮. গণসংখ্যা নিবেশনে উপাত্তগুলোর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান নির্ণয় করা হয় ।
৯. লেখ উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজন গণসংখ্যা নিবেশন। কেননা শ্রেণিবদ্ধ তথ্য ছাড়া কোনো লেখ উপস্থাপন করা সম্ভব নয় ।
১০. পরিসংখ্যানে গণসংখ্যা নিবেশনের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষকরে তথ্যমালার কেন্দ্রীয় মান, বিস্তার, পরিঘাত, বঙ্কিমতা, সুচলতা, সহ-সম্পর্ক ইত্যাদি পরিসংখ্যানিক পরিমাপগুলো নির্ণয় করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
১১. গণসংখ্যা নিবেশন থেকে তথ্যসারির মধ্যমানের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
১২. গণসংখ্যা নিবেশনের শ্রেণিগুলোর গণসংখ্যার মান দেখে তথ্যের ঝোঁক বা প্রবণতা, অর্থাৎ গতি-প্রকৃতি কোন
দিকে তা বুঝা যায় ।
১৩. একটা বিশাল তথ্যসারিকে সংক্ষিপ্ত আকারে এবং এক নজরে দেখার জন্য গণসংখ্যা নিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপাত্তসমূহকে সুশৃঙ্খল এবং সুসংবদ্ধভাবে সাজানো ও উপস্থাপন করার জন্য গণসংখ্যা নিবেশন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*