রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মধ্যে মিল খুঁজে বের কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
রাজনীতি জীবনের মতই নিরন্তন প্রবহমান। এ প্রবহমান ধারার মাঝেই আমাদের সমাজের গতিপ্রকৃতি, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য নিবিড়ভাবে জড়িত। জীবনের আর সব প্রত্যয়ের মতো রাজনীতির রয়েছে নিজস্ব পরিসর, পরিবেশ, চারণভূমি। এককথায়, রাজনীতির রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এ ভাষা কখনো সরব, কখনো নীরব, কখনো রাজপথে উচ্চকিত স্লোগানে, কখনো একান্ত নীরবে গোপনে দেয়ালে দেয়ালে। আবার কখনো গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রে। আর এসব নিয়েই গড়ে ওঠে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত হতে সাহায্য করে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীরণের মধ্যে সম্পর্ক : রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রতিটি সমাজে এ দুটি বিষয় বিদ্যমান। কোনো সমাজব্যবস্থা
‘বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা বুঝতে হলে এ দুটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ আবশ্যক। উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করলে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণকে তার মূলের সাথে তুলনা করতে হয়। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপরই রাজনৈতিক কৃষ্টি প্রতিষ্ঠিত। সামাজিকীকরণ হলো দৃষ্টিভঙ্গি ও কৃষ্টির মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ।
খ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বলতে রাজনৈতিক সমাজ, এর বিভিন্ন কাঠামো এবং এদের উদ্দেশ্যাবলির সাথে মানুষের পরিচয়কে বুঝায়। কোনো শিশুই একটি বিশেষ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ধারণ করে জন্মগ্রহণ করে না, বরং জন্ম লাভের পর সামাজিকীকরণের মাধ্যমে একটি বিশেষ সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে। তাই কোনো ব্যক্তি কী ধরনের সংস্কৃতি ধারণ করবে, গ্রহণ করবে তা নির্ভর করে সামাজিকীকরণের উপর। কোনো সমাজের জনসমষ্টি উন্নত সামাজিকীকরণের মাধ্যমে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধারণা করলে উক্ত সমাজে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
গ. রাজনৈতিক কৃষ্টি রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থাই তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও কাঠামোসমূহকে ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। সমাজের বয়ঃকনিষ্ঠদের সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এ কাজটি সম্পাদিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ভিন্ন ভিন্ন ফল থাকতে পারে। একটি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি বিশেষ ধরনের সামাজিকীকরণের ফল।
ঘ. রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঞ্চালনে সামাজিকীকরণের ভূমিকা অনন্য। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি, এক বংশধর থেকে অন্য বংশধর এবং এক জাতি থেকে আরেক জাতিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঞ্চালন রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। এভাবে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঞ্চালন ও সংরক্ষণ করে।
ঙ. রাজনৈতিক কৃষ্টি একটি পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে সবল রাখে, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। প্রয়োজনে সামাজিকীকরণ বদলে দেয় সংস্কৃতিকে সময় ও চাহিদার প্রয়োজনে। অনেক সময় কৃষ্টির উপর আঘাত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে বেগবান করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি মূলত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যক্তির মনোভাব ও মূল্যবোধ, যা আধুনিক রাজনীতি বিশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এ রাজনৈতিক সংস্কৃতির গঠন, সংরক্ষণ ও সঞ্চলনের প্রক্রিয়াই হলো সামাজিকীকরণ। কেননা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়। আধুনিক তুলনামূলক রাজনীতি বিশ্লেষণে তাই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*