স্থানীয় পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও। বাংলাদেশের স্থানীয় পরিকল্পনার অসুবিধাসমূহ বর্ণনা কর।

অথবা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা কাকে বলে? বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার কুফল সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা কী? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় পরিকল্পনা বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা কী? বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার বাধা বা অসুবিধাগুলো তুলে ধর।
অথবা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার প্রতিবন্ধকতা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যৎ কার্য সম্পাদনের সুচিন্তিত ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে পরিকল্পনা। কেন্দ্রীয় পকিল্পনার ত্রুটিগুলো পরিহার করার জন্যই আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনার উদ্ভব ঘটেছে।

স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা : কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয় হতে আরোপিত সম্পদ এবং স্থানীয় সম্পদের ভিত্তিতে জনগণের অংশগ্রহণ ও স্থানীয় কর্তৃক্ষের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকে স্থানীয় পরিকল্পনা বলে। স্থানীয় পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় পরিকল্পপনার বিপরীত দিক। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকে Top down System হিসেবে ধরা হলে স্থানীয় পরিকল্পনাকে Bottom up System হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা স্থানীয় পরিকল্পনা বলতে এমন একটি পরিকল্পনাকে বুঝি যার সাহায্যে স্থানীয় পর্যায়ের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব। স্থানীয় পরিকল্পনা হচ্ছে, বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা, সেক্টর পরিকল্পনা (কৃষি, শিল্প), আঞ্চলিক পরিকল্পনা, বিশেষ পরিকল্পনা এবং
নিম্নস্তরের পরিকল্পনা ইত্যাদি। স্থানীয় পরিকল্পনার সুবিধা হচ্ছে জনগণের প্রকৃত চাহিদা এবং অগ্রাধিকার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানো। স্থানীয় পরিকল্পনার অসুবিধা হচ্ছে এটা দীর্ঘসূত্রিতায় আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও জনবল অর্থের বিবেচনায় ব্যয়বহুল হতে পারে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার অসুবিধাসমূহ : বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের অভাব : একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের দরকার।’ স্থানীয় পর্যায়ের সকল স্তরের তথ্যসংগ্রহ করা একটি কঠিন কাজ। তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক সময়ই সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং এর ফলে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয় না।
২. মূলধনের অভাব : স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণের মূলধনের। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনগণের মাথাপিছু আয় কম বলে এখানে মূলধন গড়ে উঠতে পারে না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার মূলধন ও যন্ত্রপাতি।
৩. দুর্নীতি : স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। সমাজের সর্বস্তরের বিরাজিত দুর্নীতি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করছে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি এবং কর্মচারীদের দুর্নীতি স্থানীয় পরিকল্পনার সফলতার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।
৪. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : স্থানীয় সরকার পরিকল্পনার অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। স্থানীয় রাজনীতিতে হানাহানি, মারামারি, অবরোধ লেগেই থাকে। যার ফলে উৎপাদন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তাছাড়া দফায় দফায় সরকার পরিবর্তনের ফলে পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়।
৫. সাধারণের স্বার্থ পূরণ না হওয়া : স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়নের সময়কাল পর্যন্ত স্থানীয় এলিট শ্রেণির স্বার্থই সংরক্ষিত হতে দেখা যায়। এতে সাধারণের বা টার্গেট গ্রুপের স্বার্থহানি ঘটে থাকে।
৬. রাজনৈতিক, দলসমূহের অসহযোগিতা : রাজনৈতিক দলসমূহের সহযোগিতামূলক মনোভাবের অভাবে অনেক পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়।
৭. দাতাদের প্রাধান্য : পরিকল্পনা গ্রহণের যে অর্থ আসে তা দাতা দেশসমূহের মাধ্যমে আসে বিধায় পরিকল্পনা তাদের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে।
৮. সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের সমন্বয়ের অভাব : সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের তীব্র অভাবে স্থানীয় পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তাবায়ন বা রূপায়ণ ঘটতে পারে না।
৯. জনসংখ্যার বৃদ্ধি : অপরিকল্পিত পরিবারের ফলে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে বিধায় স্থানীয় পরিকল্পনা যথার্থ হয় না।
১০. অপ্রয়োজনীয় পরিকল্পনা : স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বা অপ্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা আবশ্যক। স্থানীয় পরিকল্পনার মাধ্যমেই পল্লির আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*