সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ‘নয়নচারা’ গল্পের মূলবক্তব্য তোমার নিজের৷চীনা ভাষায় লিখ।

উত্তর : মনস্তত্ত্বের জটিল জিজ্ঞাসায় অভিমুখী জীবনবাদী কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১) জীবনকে দেখেছেন খুব কাছাকাছি থেকে একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে। নগর সভ্যতার ডামাডোলের মধ্যে জন্ম নিয়ে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি এদেশের মাটি ও মানুষের কান্না হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। তাইতো তাঁর রচিত গল্প-উপন্যাসে মানুষের জীবন-যন্ত্রণার ছবিটি স্পষ্ট হয়ে ভাষায় লিখ। ফুটে উঠেছে। নয়নচারা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একটি জীবনমুখী সামাজিক গল্প। গল্পটিতে কাহিনি বলতে তেমন কিছু না থাকলেও এটি গভীর বক্তব্যে পরিপূর্ণ। দুর্ভিক্ষতাড়িত একদল মানুষের প্রতিনিধি আমুকে আশ্রয় করে সেই বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদীতীরবর্তী নয়নচারা নামের গ্রামটি বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছে। সেখানকার বানভাসি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার পর বাঁচার তাগিদে শহরে এসে ভিড় করেছে। কিন্তু কে তাদের আশ্রয় দেবে? শহরের হৃদয়হীন মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । এই বানভাসি মানুষগুলো তাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত উপদ্রব ছাড়া কিছুই নয়। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে অসহায় মানুষগুলো ফুটপাতে পড়ে আছে। তাদের মাথার উপর আকাশের ছাদ। দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ তাদের ক্ষুধার্ত শরীরকে তাঁতায় আর রাতের তারারা উঁকি ঝুঁকি মেরে তাদের সঙ্গে তামাসা করে। দিনের বেলা লঙ্গরখানা থেকে এদেরকে একবারের খাবার দেওয়া হয় বলে এরা এখনো মরে নি। শহরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে অনভ্যস্ত মানুষেরা রাত জেগে হাঁপায় আর ভাবে শহরে এতো গরম কেন! কেন ময়ূরাক্ষীর শীতল হাওয়া এখানে নেই! এরা রাত জেগে জেগে ভাবে ময়ূরাক্ষীর কথা, ভাবে দিগন্ত জোড়া ধানক্ষেত আর রূপালি মাছের কথা। শহরের বুকে এদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। লঙ্গরখানার একবেলার খাবারে এদের পেট ভরে না। উদ্বাস্তু মানুষেরা তাই শহরের পথে পথে খাদ্যের সন্ধানে ঘোরে। শহরের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি দোকান। ময়রার দোকানে মাছি ভোঁ ভোঁ করে। দোকানের মালিকের চোখে কোমলতা নেই আছে পাশবিক হিংস্রতা। এদের চোখে এমন হিংস্রতা যে মনে হয় চারদিকের অন্ধকারের মধ্যে দুটি ভয়ঙ্কর চোখ ধক ধক করে জ্বলছে। একটা মুদির দোকানে কয়েক কাঁদি পাকা কলা ঝুলছে। কলাগুলোর রং হলুদ। সেদিকে তাকিয়ে ক্ষুধার্ত উদ্বাস্তুদের চোখ জুড়িয়ে যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমু কলাগুলোর দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। আমুর মনে হয় ওগুলো কলা নয়- হলুদ রঙের স্বপ্ন। কলাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনে কেঁদে ওঠে আমু। আর ভাবে, কোথায় গো, কোথায় গো নয়নচারা গাঁ! নয়নচারা গ্রামের সাথে শহরের সামান্যতম মিল খুঁজে না পেয়ে এরা হতাশ হয়- ভয় পায়। ছিন্নমূল মানুষগুলো শহরে এসে একটা ব্যাপার দেখে বিস্মিত হয়। এরা লক্ষ্য করে শহরের কুকুরগুলোর চোখে শত্রুতা নেই । কুকুরগুলো এদেরকে দেখে তেড়ে আসে না অথচ মানুষগুলো কেমন তেড়ে তেড়ে আসে। রাতের বেলা কুকুরেরা তাদের আশপাশেই অবস্থান করে। কিন্তু এরা শত্রুতা করে না। অথচ দিনের বেলায় আমুরা যে মানুষদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায় তারা খ্যাক খ্যাঁক করে তেড়ে ওঠে। শহরের এ মানুষদের চোখ শত্রুতায় ভরা। এমন শত্রুতা আমুরা দেখেছে গ্রামের কুকুরদের চোখে। এখানকার মানুষগুলোকে তাদের গ্রামের কুকুরদের মতো হিংস্র মনে হয়। এদের অন্তরে দয়া নেই, মায়া নেই, মমতা নেই। এই অমানবিক অবস্থা দেখে আমু এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য হয় যে, গ্রামের কুকুর আর শহরের মানুষদের স্বভাব চরিত্র এক ও অভিন্ন। একদিন আমু ক্ষুধার্ত পেটে একটা খাবারের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দোকানের ভিতর থেকে বিভিন্ন রকম খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসে তার নাকে। দোকানি আমুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুকুরের মতো তেড়ে আসে। আমুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়।
সেও লোকটার উপর হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রচণ্ড মার খেয়ে আমু শহরের অচেনা রাস্তায় বেরিয়ে চলতে থাকে। অলি গলিতে ভরা এ রাস্তার যেন শেষ নেই। একবার আমু দার্শনিকের মতো মনে মনে ভাবে যে পথের শেষ নেই, সে পথে চলে লাভ কী? চলতে চলতে ক্লান্ত শ্রান্ত আমু নিজেকে একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়ানো দেখতে পায়। একটু পরে হঠাৎ খুলে যায় দরজাটা। মমতাময়ী এক গৃহবধূ বেরিয়ে এসে আমুকে কিছু খাবার দেয়। বিস্মিত আমু বধূটির মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে এ কেমন মেয়ে? শহরের অন্যান্য মানুষের সাথে তো এর মিল নেই। এই মেয়ের মায়ের বাড়ি নিশ্চয়ই নয়নচারা গাঁয়ে। নয়নচারা’ ছোটগল্পের কাহিনিতে শহরের মানুষদের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা হৃদয়বিদারক। কাহিনিতে তাদের মনমানসিকতাকে কুকুরের চেয়েও হিংস্র বলে আমুর মনে হয়েছে। শহরে বসে সে যার কাছেই খাবারের জন্য হাত বাড়িয়েছে সেই
তাকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে আমু মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। কিন্তু কেউ তাদেরকে মানুষ বলে গণ্য করেনি। কেবল খেতে দেওয়া একটা মেয়েকে তার মানুষ বলে মনে হয়েছে এবং তার বদ্ধমূল ধারণা ওই মেয়েটির মায়ের বাড়ি নিশ্চয়ই নয়নচারা গাঁয়ে। গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে মন-মানসিকতার যে আকাশ পাতাল পার্থক্য তা এই গল্পের কাহিনিতে বাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরা হয়েছে। শহরের মানুষের হৃদয়হীনতার নীচতাকে গল্পকার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন ‘নয়নচারা’ গল্পে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%b8%e0%a7%88%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a6-%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*