সুশাসনে নারীর অংশগ্রহণ কেন জরুরি? আলোচনা কর।

অথবা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নারীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ কেন? বর্ণনা কর।
অথবা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন কেন?
অথবা, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নারীর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নারীর অংশগ্রহণ কেন তাৎপর্যপূর্ণ? বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা গভর্নেন্সকে জেন্ডার নিরপেক্ষ বলে ধরে নেই। কেননা, তা নারী বা পুরুষ কোনো একটি লিঙ্গে স্বার্থ বা আদর্শকে তুলে ধরে না। কিন্তু বাস্তবে গভর্নেন্সের মতবাদ, ধ্যানধারণা, প্রক্রিয়া, কাঠামো, কার্যক্রম এ সবকিছুই সাধারণভাবে পুরুষের এবং নির্দিষ্টভাবে পুরুষদের বিশেষ অংশের পক্ষাবলম্বন করে থাকে। ক্ষমতার এ অসম অংশীদারিত্ব অবশেষে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পদের অসম ভাগাভাগীর কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এ অসম বণ্টনের প্রতিফলরূপে আমরা অসম অনুপাতে বিপুলসংখ্যক নিরক্ষর নারীকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত দেখতে পাই । বস্তুত গভর্নেন্সের জেন্ডার বিশ্লেষণ নারীর অধস্তনতার বাস্তবতা এবং এর ভয়াবহতাকে তুলে ধরে। অঙ্গী
সুশাসনে নারীর অংশগ্রহণ কেন জরুরি : সুশীল সমাজের সুশাসনের ধারণার মধ্যেও অনেক সময় সামাজিক গ্রুপ হিসেবে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব দেখানো হয়। কর্মক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের ক্ষমতা অসম। এর প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন পেশায় নারীর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধকরণ, মজুরি বা বেতন বৈষম্যের মধ্যে। নিম্নে সুশাসনে নারীর
অংশগ্রহণ কেন জরুরি তা আলোচনা করা হলো :
১. গুণগত ভিন্নতা আনয়ন : প্রথমত নারীরা গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় গুণগত ভিন্নতা আনয়ন করে। এটা আজ স্বীকৃত সত্য যে, নারীরাও গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে নতুন ধ্যানধারণা, শক্তি, উৎসাহ উদ্দীপনা ও নয়া তত্ত্ব আনতে সক্ষম। নারীদের অংশগ্রহণ রাজনীতি ও তার বিভিন্ন ইস্যুর ক্ষেত্রে গুণগত রূপান্তর সাধন করে থাকে।
২. উন্নয়নকে ভিন্নভাবে দেখা : পুরুষের বিপরীতে নারীরা উন্নয়নকে প্রচলিত সংকীর্ণ মাপকাঠিতে পরিমাপ করে না। তারা সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে উন্নয়নকে বিচার করে। এক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে তারা প্রাধান্য দেয়। আবার দেখা যায়, পুরুষেরা যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা, সেবা ইত্যাদি সামাজিক সেবা পাওয়ার জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগী হয়, নারীরা সেখানে এসব সামাজিক সেবা নিজ এলাকাতেই পাওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়। এছাড়া নারীর দৃষ্টিভঙ্গি অনেক জীবন ঘনিষ্ঠ এবং তৃণমূলের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত।
৩. জনগণকে অধিক মাত্রায় সম্পৃক্তকরণ : নারীরা জনগণের অধিক অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততাকে প্রয়োজনীয় করে তুলতে সক্ষম। যদিও নারী ও পুরুষ উভয়েই মানুষের মতামত বিবেচনায় নেয় কিন্তু দেখা যায়, নারী নেতৃত্বের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা থাকে। ফলে জনগণকে অংশগ্রহণ করানোর ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীকে অনেক বেশি, সংগ্রাম করতে হয়। পুরুষের পক্ষে একটি মিটিং ডাকা যত সহজ নারীর ক্ষেত্রে ততটা সহজ হয় না। ফলে নারীরা জনগণকে অংশগ্রহণ করানোর জন্য পুরুষের চেয়ে বেশিমাত্রায় সক্রিয় হয়।
৪. ভিন্ন ধরনের সহজাত দক্ষতা : নারীদের রয়েছে ভিন্ন ধরনের সহজাত দক্ষতা, যা তাদের নেতৃত্বের ধারণাকে উন্নত করে থাকে। সাধারণত সামাজিকভাবে গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় নারীরা অনুপস্থিত থাকার দরুন তাদের নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হয় না। অপরদিকে, তারা নেতৃত্বে নতুন হওয়ার কারণে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক নেতৃত্বের অনেক মন্দ প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকে এবং সেজন্য তারা নানাভাবে সুশাসন প্রক্রিয়ায় অনেক নতুন ও ভিন্ন ধরনের রীতিনীতি সংযুক্ত করতে পারে।
৫. সহজাত বৈশিষ্ট্য : সুশাসন প্রক্রিয়ায় নারীরা অনেক বেশি সৎ থাকে এবং যে কোনো পরিস্থিতি সম্বন্ধে নিখুঁত ও স্পষ্ট তথ্য তুলে ধরে। নারীরা সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে নেতার চেয়ে বরং নেত্রীরাই জনগণের কাছে সহজগম্য হয় এবং নেত্রীর কাছে জনগণ সাবলীলভাবে মত প্রকাশ করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
৬. বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত প্রদান : সুশাসন প্রক্রিয়ায় নারীরা বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত প্রদান করে। এছাড়াও দেখা যায়, গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় যুক্ত নারীরা সবার কথা শোনে, জনগণের মনোভাবকে গুরুত্ব দেয়, তাদের কথা বলার সুযোগ দান করে এবং কখনও উপর থেকে মতামত চাপিয়ে দেয় না, বরং সবার মতামত শোনার পর বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত প্রদান করে।
৭. নারীরা কম দুর্নীতিপরায়ণ : পুরুষদের তুলনায় নারীরা খুব কম দুর্নীতিপরায়ণ হয়। বিভিন্ন দেশের সংগৃহীত তথ্য থেকে এটা এখন প্রমাণিত হয় যে, যেখানে সকল স্তরের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি এবং সংসদে নারীর আসন সংখ্যা বেশি, সেখানে দুর্নীতির হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ক্ষমতার অপব্যবহারও সেখানে কম হয়।
৮. নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত : গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ ঘরে বাইরে তাদের ভূমিকাকে পরিবর্তন করে নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করে। দেখা যায় গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায়, বিশেষত স্থানীয় পর্যায়ে যুক্ত হয়ে নারীরা নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেয়। যেমন- কৃষি ও ভূমি সংস্কার, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বনায়ন, পানীয়জল সরবরাহ, জ্বালানি ব্যবস্থা, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পারিবারিক কল্যাণ, স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এসব করতে গিয়ে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সুশাসনে নারীর অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। বস্তুত গভর্নেন্স কাঠামোর সকল স্তরে নারীর পরিমাণগত ও গুণগত অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত, যা টেকসই উন্নয়নের পথকে সুগম করে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীদেরকে তাই গভর্নেন্সের বা সুশাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে নারী পুরুষ, সরকার ও সুশীল সমাজ প্রত্যেকের সুষম অংশগ্রহণ সুশাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*